Advertisement
E-Paper

১৩ মিনিটের জোড়া কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড শহর, রাজ্যে মৃত ১৩

কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া মিলিয়ে মৃত্যু হল ১৩ জনের। ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল। বন্ধ হল মেট্রো। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না রাত পর্যন্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২০
দাপট: ঝড়ে গাছ উপড়ে দুমড়ে গেল গাড়ি। মঙ্গলবার সন্ধেয় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। শহর জুড়েই দুর্ভোগ।

দাপট: ঝড়ে গাছ উপড়ে দুমড়ে গেল গাড়ি। মঙ্গলবার সন্ধেয় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। শহর জুড়েই দুর্ভোগ।

গোলার মতো আছড়ে পড়া পরপর দু’টি বৈশাখী ঝড়। প্রথমটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার। পরেরটির ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার। নিমেষে লন্ডভন্ড হল মহানগর। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া মিলিয়ে মৃত্যু হল ১৩ জনের। ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল। বন্ধ হল মেট্রো। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না রাত পর্যন্ত।

প্রথম ঝড়টি ওঠে মঙ্গলবার রাত ৭টা ৪২ মিনিটে। দ্বিতীয়টি ৭টা ৫৫-য়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় ঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ স্থায়ী হয়েছিল মাত্র এক মিনিট। ২০০৯ সালে আয়লায় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৩ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ফলে ঝড় আরও কিছু ক্ষণ থাকলে আরও ভয়াবহ হতে পারত পরিস্থিতি।

কলকাতা ও সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তায় অন্তত দেড়শো গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে ঝড়ে। বেহালা পর্ণশ্রীর ডায়মন্ড হারবার রোডে গাছ পড়ে মৃত্যু হয় নিরুষ মিঞ্জের (৬৫)। লেনিন সরণিতে অটোর উপরে গাছ পড়ে মারা যান অটোচালক মানোয়ার আলম (৫১) এবং যাত্রী আমরিন জাভেদ (২৭)। আনন্দপুরের পশ্চিম চৌবাগায় বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় মহম্মদ শাহিদের (৪০)। কলাকার স্ট্রিটে বহুতলের দেওয়ালের একাংশ মাথায় পড়ে মারা যান অনীত শুক্ল (২৮)।

মিন্টো পার্কে উপড়ে গিয়েছে গাছ।

হাওড়ায় শুধু বেলুড়েই মৃত্যু হয়েছে চার জনের। গিরিশ ঘোষ রোডে গাছ পড়ে মারা যায় দশম শ্রেণির ছাত্রী খুশি মারিয়া (১৬)। গাছ ভেঙে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে তারাচাঁদ গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ৪৫ বছরের এক সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। ওই সাইকেলে থাকা এক তরুণী এবং এক বালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বেলুড়ের গাঙ্গুলি স্ট্রিটেও তার ছিঁড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আন্দুল রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জয়দেব দাস (২২) নামে এক বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়। ডুমুরজলায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয় মুনমুন দাসের (২৩)। বজ্রাঘাতে বাঁকুড়ার ইন্দাসের তেঁতুলমুড়িতে সুকুমার ঘোষ (৩৪) এবং হুগলির হরিপালে তুলি মুখোপাধ্যায় (১৭) মারা যান।

হাওড়া স্টেশনের ১৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো একটি ট্রেনের ছাদে ভেঙে পড়ে বঙ্কিম সেতুর রেলিংয়ের প্রায় ৩০ ফুট লম্বা একটি অংশ। পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড এবং মেন লাইন ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। লিলুয়ায় গ্রিডের সংযোগ বিকল হয়, গাছ পড়ে যায় হিন্দমোটরে। শিয়ালদহ মেন এবং শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন আটকে পড়ে। সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন অফিস-ফেরত মানুষেরা। রাত আটটা নাগাদ দমদমের আপ লাইনে গাছ পড়ায় রাত পর্যন্ত থমকে যায় মেট্রো। অসুস্থ হয়ে পড়েন মেট্রোর দু’জন যাত্রী। বাস-ট্যাক্সিও কার্যত বন্ধ হওয়ায় কয়েক গুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয় অ্যাপ ক্যাব।

কলকাতা বিমানবন্দরে ডেকানের একটি বাতিল বিমান দাঁড়িয়ে ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার হ্যাঙার থেকে ২০ ফুট দূরে। ঝড়ের দাপটে বিমানের মুখ ঘুরে গিয়ে সেটি একটি ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা মারে। অন্য একটি ছোট ‘সেসনা’ বিমানেরও মুখ ঘুরে যায়। নামতে না পেরে কলকাতার আকাশে চক্কর কাটে ১০টি বিমান। রাত ৮টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে বিধাননগর হাসপাতাল। সল্টলেকের ইসি মার্কেটের কাছে গাছ-সহ একটি মন্দির ও দমদমের গোপাল চন্দ্র বোস লেনে একটি খালি বাড়ি ভেঙে পড়ে।

নবান্নের উত্তর গেটের কাছে পুলিশ চৌকিটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু ক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে খবর। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ঝড়ের আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন নবান্ন থেকে।

ছবি: সুমন বল্লভ

Thunderstorm Kolkata Rain Kalbaishakhi Kolkata Weather কালবৈশাখী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy