Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Babita Sarkar

Babita Sarkar: টাকাটা শুধু নিজের জন্য নয়, ভাল কাজেও ব্যবহার করব, অঙ্কিতার চাকরি পেয়ে ববিতা

আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে অঙ্কিতা অধিকারীর বেতনের প্রথম কিস্তির টাকা সুদ-সহ ববিতা সরকারকে দিতে হবে। দশ দিনের মধ্যে চাকরিতেও যোগ দেবেন তিনি।

কলকাতা হাই কোর্টে স্বামীর সঙ্গে ববিতা।

কলকাতা হাই কোর্টে স্বামীর সঙ্গে ববিতা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ১৭:২৪
Share: Save:

আদালত নির্দেশে ববিতা সরকার পেতে চলেছেন তাঁর জায়গায় চাকরি পাওয়া মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর বেতনের প্রথম কিস্তি— সাত লক্ষ ৯৬ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১০ দিনের সুদ। আনন্দবাজার অনলাইন ববিতার কাছে জানতে চেয়েছিল, এত টাকা পেয়ে কী করবেন? জবাব দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন ববিতা। তার পর জানিয়েছেন এই টাকা শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়। টাকাটি তিনি কোনও ভাল কাজে ব্যবহার করবেন। ববিতার কথায়, ‘‘আমি জানি না। এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কিছু ভেবে রাখিনি।’’ তবে পরক্ষণেই বললেন, ‘‘এ টাকা শুধু আমার নিজের জন্য নয়, যাতে কোনও ভাল কাজে ব্যবহার করা হয়, সেটা দেখব।’’

নিয়ম মেনে নিয়োগ হলে এত দিনে শিক্ষিকা হিসেবে চার বছর পার করতেন। কিন্তু এসএসসির মেধা তালিকায় নাম ওঠার পরও ববিতা সরকারের সেই সুযোগ হয়নি। গত চার বছরে স্কুলে পড়াতে পারেননি ববিতা। বদলে এক মন্ত্রীকন্যার জন্য প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার লড়াই লড়েছেন। শুক্রবার সেই লড়াই থেমে জয়ের মুকুট হাতে এসেছে তাঁর।

শুক্রবার আদালতের নির্দেশের পর হাসিমুখেই সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন ববিতা। হাত তুলে জয়ের প্রতীকও দেখান। কিন্তু কথা বলতে শুরু করেই কেঁদে ফেলেন। তাঁর কাছে আদালতের নির্দেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। স্বামীকে পাশে নিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন শিলিগুড়ির কন্যা, যাঁর লড়াই এখন গোটা বাংলার মুখে মুখে। স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে মুখে হাসি চোখে জল নিয়ে ববিতা বলেন, ‘‘ওকে ধন্যবাদ। ও পাশে ছিল বলেই এই দিন দেখতে পেয়েছি।’’

কিন্তু এত দিন তো সেই অর্থে স্কুলে পড়াতে হয়নি তাঁকে। অথচ বেতনের অর্থ হাতে পাচ্ছেন। ববিতাকে প্রশ্ন করা হয়, কেউ এ নিয়ে কিছু বলেনি তাঁকে? ববিতার গাল বেয়ে তখনও নামছে জল। বললেন, ‘‘সময় ফেরত আসে না। আমার বয়স তো আর ফিরবে না। গত চার বছরে আমি রোজ স্বপ্ন দেখেছি যে, স্কুলে পড়াচ্ছি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙেছে কঠোর বাস্তবে। ভাবতেই পারিনি কখনও এই দিন আসবে। তবু হতাশ হয়ে লড়াই ছেড়ে দিইনি। আজ আদালতের এই রায়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে আমি খুশি। হয়তো আমার বয়স চার বছর পিছোবে না, কিন্তু আদালতের নির্দেশে চার বছর আগের সেই সময় আমার জীবনে ফেরত এসেছে। আমি সেই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাব, যা চার বছর আগে আমার প্রাপ্য ছিল।’’

উল্লেখ্য, ববিতা ২০১৬ সালে স্কুলশিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন। যার মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর। সেই তালিকায় ববিতার নাম প্রথম ২০তে থাকলেও পরে তালিকাটি বাতিল করে দেয় এসএসসি। প্রকাশ হয় নতুন তালিকা। তাতে এক ঘর পিছিয়ে যায় ববিতার নাম। ববিতার থেকে ১৬ নম্বর কম পেয়েও মেধাতালিকার শীর্ষে ওঠে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার নাম। ফলে ববিতার নাম চলে যায় ওয়েটিং লিস্টে। ঘটনাটি জানতে পেরে শুরু হয় ববিতার লড়াই। বৃত্ত সম্পূর্ণ হল সোমবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE