Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
21 July

Martyrs’ Day, July 21: ঠিক কী ঘটেছিল ২৮ বছর আগে? ফিরে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঢের আগে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই দিনটিই উদীয়মান নেত্রী হিসেবে মমতাকে প্রতিষ্ঠা দেয় বাংলার রাজনীতিতে।

তৎকালীন সভাপতি মমতার নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযানে রওনা দেয় যুব কংগ্রেস।

তৎকালীন সভাপতি মমতার নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযানে রওনা দেয় যুব কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২১ ১২:২১
Share: Save:

দেশ মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেয়ে গিয়েছে ঢের আগেই। কিন্তু বাংলার রাজনীতি তখনও ‘পুরুষতান্ত্রিক’। তার মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তোলার লড়াই একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু এমন কয়েক জন সতীর্থ পাশে পেয়েছিলেন, আক্ষরিক অর্থেই যাঁরা জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁর জন্য। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনেই প্রতি বছর ‘শহিদ দিবস’ পালন করেন তৃণমূল নেত্রী এবং অধুনা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ বার রাজ্যের গণ্ডিতে শহিদ স্মরণকে বেঁধে রাখতে চান না তিনি। তাই ২৮তম ‘শহিদ দিবস’কে সর্বভারতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা।

সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলন বিরোধী নেত্রী হিসেবে রাজ্যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল মমতাকে। কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতিতে আন্দোলনের সিলমোহর পড়েছিল ২৮ বছর আগের এক ২১ জুলাই। ১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন মমতা। তার বছর দুয়েক আগে বিপুল সমর্থন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরে তৎকালীন বাম সরকার। রাজ্যে তখন বিরোধী দলের ভূমিকায় কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ ছিল, কারচুপি করেই ভোটে জিতেছে সিপিএম। তাই সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভাপতি মমতা। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখী জমায়েত শুরু হয়। মহাকরণ ঘিরে পাঁচটি এলাকা দিয়ে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় নামেন মমতা নিজেও। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র, অধুনাপ্রয়াত পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। কিন্তু মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।

সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। তাঁর নিরাপত্তারক্ষী সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে পুলিশের মোকাবিলায় এগিয়ে যান। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সেই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মধ্য কলকাতায়। রেড রোডে পুলিশের ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একটি লরিকে ঢাল করে এগোতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা পালাতে থাকেন। সেই অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের দেখে মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশবাহিনী। গুলি চালাতে শুরু করে তারা। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন মারা গিয়েছেন। জখম বহু। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেন, ‘‘ওরা মহাকরণ দখল করতে আসছিল। পুলিশ গুলি চালিয়েছে।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হয়। মমতা বাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন। তার পাঁচ বছর পর কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল তৈরি করেন তিনি। সেই আন্দোলনের রাস্তা ধরেই ২০১১ সালে ৩৫ বছরের বামদুর্গ ভেঙে মমতার নেতৃত্বে রাজ্যে সরকারে আসে তৃণমূল। ক্ষমতায় এসে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলেন মমতা। পাশাপাশিই, ২৮ বছর ধরে ‘শহিদ দিবস’ পালন করে আসছেন মমতা। বুধবারের শহিদ স্মরণে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, তার দিকেই তাকিয়ে আছে তাঁর দল। তাকিয়ে আছে গোটা দেশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE