Advertisement
E-Paper

ভোটের আগের বছর ওবিসিভুক্ত ১৪০টি জনগোষ্ঠী কি নির্বাচনী নিক্তি মেপেই? জট খোলার আশায় তৃণমূল, প্রশ্ন বিজেপি-র

আগে ৬৬টি জাতিগোষ্ঠী ছিল ওবিসিভুক্ত। সেখান থেকে দু’টি গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে পুরনো তালিকায় সংখ্যা করা হয়েছে ৬৪টি। তার সঙ্গেই ওবিসিভুক্ত করা হয়েছে ৭৬টি জাতিগোষ্ঠীকে।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮
What kind of impact will West Bengal\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s new OBC list create in the next Assembly elections

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত বছর মে মাসে ‘ধাক্কা’ খেতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। কলকাতা হাই কোর্ট এক লপ্তে বাতিল করে দিয়েছিল প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) শংসাপত্র। তার পরে শীর্ষ আদালত থেকে সময় চেয়ে নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করে ওবিসি কমিশন। সোমবার সেই রিপোর্টে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। আরও ৭৬টি জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করে মোট ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসিভুক্ত বলে সিলমোহর দিয়েছে নবান্ন। তার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে কি নির্বাচনী নিক্তি মেপেই এই পদেক্ষপ করল রাজ্য সরকার?

একান্ত আলোচনায় শাসক তৃণমূলের নেতারা ভোটের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে শাসকদল মনে করছে, এর ফলে নানা ‘জট’ খুলে যাবে। তা-ও ভোটের সঙ্গে পরোক্ষে যুক্ত। আর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি মনে করছে, নির্বাচনী রাজনীতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। পদ্মশিবির যেমন সমীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তেমনই তার সঙ্গে জুড়ে থাকছে ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ অভিযোগও।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরে বিধানসভার বাদল অধিবেশনে নতুন ওবিসি তালিকা পেশ করা হবে। ওবিসি অংশ থেকেই উঠে এসেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ‘‘এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। এই পদক্ষেপ আগামী প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ কিন্তু এ তো আনুষ্ঠানিক অভিমত। একান্ত আলোচনায় তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা মানছেন যে, এর ফলে নিয়োগ, স্কুল-কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত যে জট রয়েছে, তা খুলে যাবে। আদালতের নির্দেশে ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হলেও সার্বিক ভাবে তার ফলে ‘নেতিবাচক’ ধারণা তৈরি হয়েছে সরকার সম্পর্কে। নতুন তালিকার ফলে তা কেটে যাবে বলেই আশা করছে তৃণমূল।

পাল্টা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার বক্তব্য, ‘‘মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ওবিসিভুক্ত করে রাজ্য সরকার তোষণের রাজনীতি করতে চাইছে। যা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় সমীক্ষা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’

আগে ওবিসিভুক্তেরা সংরক্ষণ পেতেন ১০ শতাংশ। নতুন করে ৭৬টি গোষ্ঠী যুক্ত হওয়ায় তা ১৭ শতাংশে পৌঁছোল। কিন্তু রাজ্যে এই জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের সংখ্যা কত, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ, জনগণনা না হলে সঠিক সংখ্যা পাওয়া মুশকিল। যদিও বা পাওয়া যায়, তা হলে শংসাপত্র বিলি হওয়ার পরেই তা স্পষ্ট হবে। কমবেশি বাংলার জনসংখ্যা ১০ কোটি হলে ১ কোটি ৭০ লক্ষের মতো হবে ওবিসিভুক্তদের সংখ্যা।

আগে ৬৬টি জাতিগোষ্ঠী ছিল ওবিসিভুক্ত। সেখান থেকে দু’টি গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে পুরনো তালিকায় সংখ্যা করা হয়েছে ৬৪টি। তার সঙ্গেই ওবিসিভুক্ত করা হয়েছে ৭৬টি জাতিগোষ্ঠীকে। কোন কোন অংশকে ওবিসিভুক্ত করা হয়েছে, তা মঙ্গলবার পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। সরকারি ভাবে তা প্রকাশিত হতে আরও কয়েক দিন লাগবে। তবে ভোটের অঙ্কে অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওবিসি সংক্রান্ত পুরনো একটি কথা টানছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূলের ইস্তাহার প্রকাশের সময় মমতা জানিয়েছিলেন মাহিষ্য, তিলি, তামুল এবং সাহাদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেবে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতায় এসে সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবও মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ওয়াকিবহালদের অনেকের বক্তব্য মাহিষ্য, তিলি, তামুল এবং সাহা— এই চারটি গোষ্ঠীকে যদি ৭৬টির মধ্যে রাখা হয়, তার বিপুল প্রভাব পড়তে পারে ভোটে। এবং তা তৃণমূলের জন্য ‘ইতিবাচকই’ হবে। এ কথা মনে করছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধ শিবিরে থাকা এক প্রাক্তন সাংসদও। যিনি অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক কাজকর্ম করে থাকেন। আবার অনেকের বক্তব্য, যদি দেখা যায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি, তা হলে বিজেপি-র হাতে মেরুকরণের ‘অস্ত্র’ চলে আসবে। উল্লেখ্য, মাহিষ্য গোষ্ঠীতে জনসংখ্যা বিপুল। যাঁদের বিন্যাস মূলত গ্রামীণ হুগলি, নদিয়া-সহ আরও কয়েকটি জেলায় রয়েছে। তা ছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং জঙ্গলমহলেও ওবিসিভুক্তেরা বড় সংখ্যায় রয়েছেন। নতুন অন্তর্ভুক্ত জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এই সমস্ত অঞ্চলেই বিন্যাসের কথা জানা যাচ্ছে সরকারি সূত্রে।

তবে এখানেও একটি ‘যদি’ রয়েছে। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ ওবিসি তালিকায় গলদ থাকার কথা জানিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিল করেছিল। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রাজ্য সরকার। চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কারা ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত হবেন, তা নিশ্চিত করতে নতুন করে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস’ নতুন করে ওবিসি শংসাপত্রের ভিত্তি খতিয়ে দেখছে। তাতে তিন মাস সময় লাগবে। জুলাই মাসে পরবর্তী শুনানি হোক। রাজ্যের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট তখন জানিয়েছিল, জুলাই মাসেই হবে পরবর্তী শুনানি।

কিন্তু এই সমীক্ষাপ্রক্রিয়া নিয়েও পৃথক একটি মামলা হয়েছে হাই কোর্টে। যার শুনানি হওয়ার কথা আগামী ১৯ জুন। যদিও সরকারের এক অন্যতম শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘খাতায়-কলমে শুধু সমীক্ষা হয়নি। তার ভিডিয়োগ্রাফিও করা রয়েছে। মনে হয় না আদালতে আর কোনও জট তৈরি হবে। ৯ জুন বিধানসভার বাদল অধিবেশন শুরু। গোড়াতেই নতুন ওবিসি তালিকা পেশ এবং অনুমোদন হলেও রাজ্যকে ১৯ জুনের মামলার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

OBC West Bengal Politics Assembly Elections 2026 West Bengal Assembly Poll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy