Advertisement
E-Paper

বর বলছেন, ফুচকা খাওয়াতে বা শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারব না, বৌ বলছেন, ‘দিলীপদা’ মুছে ‘হাজ়ব্যান্ড’ বলে নম্বর সেভ করব

শুক্রবার বিকেলে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর একটি অনুষ্ঠানে দিলীপ-রিঙ্কুর চার হাত এক হচ্ছে। গুটি কয়েক ঘনিষ্ঠ জন সেখানে আমন্ত্রিত। তার আগে দিলীপের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অকপট রিঙ্কু।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২১
(বাঁ দিকে) রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র। শুক্রবার বিউটি পার্লারে তাঁর হবু স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র। শুক্রবার বিউটি পার্লারে তাঁর হবু স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার বিকেল ৪টে ১৫। নিউ টাউনের শপিং মলের বিউটি পার্লারে কনের সাজগোজ চলছে পুরোদমে। মুখের সাজ শেষ করে সবে চুলে হাত দিয়েছেন রূপসজ্জা শিল্পী। কিন্তু কনের কি বিশ্রামের সুযোগ আছে! তাঁকে ঘিরে রয়েছেন সাংবাদিকেরা। একের পর এক কৌতূহলী প্রশ্ন উড়ে যাচ্ছে রিঙ্কু মজুমদারের দিকে। শুক্রবার গোধূলি লগ্নে যাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বাংলার রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় চরিত্র রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিয়ের পর কী পরিকল্পনা? সাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করেই রিঙ্কুর উত্তর, ‘‘উনি (দিলীপ) বলেছেন, তুমি আশা কোরো না আমি তোমাকে শপিং করাতে, ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাব। আমি বলেছি, ঠিক আছে। বাকি সহধর্মিণী হিসাবে যা দায়িত্ব, তার সবই পালন করব।’’

বিয়ের সাজে রিঙ্কু মজুমদার। শুক্রবার নিউ টাউনে।

বিয়ের সাজে রিঙ্কু মজুমদার। শুক্রবার নিউ টাউনে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের ফোনে এত দিন ‘দিলীপদা’ বলেই হবু স্বামীর নাম সেভ করে রেখেছিলেন রিঙ্কু। বিয়ের পরেও কি সেই নামই থেকে যাবে? রিঙ্কুর জবাবে রাখঢাক নেই, ‘‘এ বার হাজ়ব্যান্ড বলে সেভ করব।’’ মধুচন্দ্রিমা নিয়েও মুখ খুলেছেন দিলীপের সঙ্গিনী। জানিয়েছেন, তাঁর পাহাড় পছন্দ। নিরিবিলি কোনও পাহাড়ি এলাকায় দিলীপের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হিমাচল প্রদেশের শিমলার কথাও ভাবা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি কোনও নাম। রিঙ্কুর কথায়, ‘‘কোনও আইসোলেটেড জায়গায় যেতে চাই। কারণ, উনি (দিলীপ) যেখানেই যান, সেখানেই ভিড় জমে যায়।’’

শুক্রবার বিকেলে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর একটি অনুষ্ঠানে দিলীপ-রিঙ্কুর চার হাত এক হচ্ছে। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কয়েক জন সেখানে আমন্ত্রিত। বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ সাজগোজ সেরে বাড়ি গিয়েছেন রিঙ্কু। সেখান থেকে শাড়ি পরে বিয়ের আসরে আসবেন। বিয়ে নিয়ে একেবারেই ঘটা করছেন না দিলীপ। কারণ তিনি নিজে আড়ম্বরে বিশ্বাসী নন। বিয়ের কারণে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও কোনও পরিবর্তন হবে না। প্রতি দিনের মতো শনিবার সকালেও নিউ টাউনে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোবেন তিনি। সঙ্গে নববধূ অবশ্য থাকবেন না। রীতি-আচার মেনে বিয়ের পরের দিন বাড়িতেই থাকবেন রিঙ্কু। ঘটনাচক্রে শনিবার দিলীপের জন্মদিন। প্রাতর্ভ্রমণের সঙ্গীরা সকালে তাঁর জন্মদিন পালন করতে পারেন। দমদমে শনিবার দিলীপের একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে। তিনি সেখানেও যোগ দেবেন।

দিলীপ ঘোষকে শুভেচ্ছা বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের। শুক্রবার নিউ টাউনে।

দিলীপ ঘোষকে শুভেচ্ছা বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের। শুক্রবার নিউ টাউনে। —নিজস্ব চিত্র।

বিয়ের ঘণ্টাখানেক আগে স্নায়ুর চাপও অনুভব করেছেন রিঙ্কু। সাজতে সাজতেই বলে ফেলেন, ‘‘আমার প্যালপিটেশন (বুক ধড়ফড়) হচ্ছে। কী যে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। একটা ফ্লো-তে আছি।’’ তবে দিলীপের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিয়ের দিন সকাল থেকে অকপটে কথা বলেছেন রিঙ্কু। তিনি বিবাহবিচ্ছিন্না। সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর দিলীপ যখন খানিক বিষণ্ণ, সেই সময় রিঙ্কুই প্রথম একসঙ্গে ঘর বাঁধার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমি দিলীপদাকে ফোনে যা বলার বলেছিলাম। উনি শুনেছিলেন। মনে হয়েছিল, আমার প্রস্তাবে উনি রাজি হবেন। তবে মাস তিনেক সময়ও নিয়েছিলেন। তিন মাস আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। আমি খোলা মনের মানুষ। দিলীপদাও সেটা বুঝেছেন। বিয়ের পরেও রাজনীতিতেই থাকব। আমরা কেউ কারও কাজে হস্তক্ষেপ করব না। ওঁর মতাদর্শগুলি একই রকম থাকবে।’’

বিয়ে উপলক্ষে দিলীপের নিউ টাউনের বাড়িতে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে পাঠিয়েছেন একটি ফুলের তোড়া। দিলীপের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধ প্রবল। তবে শুভ অনুষ্ঠানে রাজনীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে সৌজন্যের নজির দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্ডে তিনি লিখেছেন, ‘‘শ্রীমতী রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে আপনার বিবাহবন্ধনের কথা জেনে আনন্দিত হলাম। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনায় রিঙ্কুদেবী ও আপনাকে আমার অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মঙ্গলময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আপনাদের যৌথ জীবন সুখের হোক। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।’’

সকালে দিলীপের বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এসেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো নেতারা। দিলীপের জন্য সুকান্ত নিয়ে গিয়েছিলেন ফুলের তোড়া, মিষ্টির বাক্স আর ধুতি-পাঞ্জাবি। বিজেপির অন‍্য নেতারাও ফুল, মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন। কারও কারও হাতে তার পাশাপাশি অন‍্য উপহারও ছিল। দিলীপ প্রত‍্যেককে প্রতি-উপহার দিয়েছেন। লকেটকে দিয়েছেন শাড়ি। বাকিদের কাউকে দিয়েছেন পাজামা-পাঞ্জাবির সেট, কাউকে পাঞ্জাবি বানানোর কাপড়। কাউকে দিয়েছেন ধুতি। তাঁরা বিকেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকবেন না।

Dilip Ghosh BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy