শুক্রবার বিকেলে ঘরোয়া এবং অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন দিলীপ ঘোষ। বিকেল সাড়ে ৫টায় বিবাহের সময় স্থির হয়েছে। দিলীপের জননী-সহ অন্য পরিজন এবং পাত্রী রিঙ্কু মজুমদারের পরিজনেরা থাকবেন। দু’-একজন বন্ধুবান্ধবও থাকবেন। ওই সময়টুকু বাদ দিলে বিবাহের কারণে দিলীপের কর্মসূচির কোনও অদলবদল হচ্ছে না।
দিলীপের বিবাহের খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে
শুভেচ্ছার ঢল নেমেছে। রাজ্য বিজেপির নেতারা শুক্রবার দল বেঁধে তাঁর বাড়িতে গিয়ে
শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে
শুরু করে সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়েরা। বিরোধী দলনেতা
শুভেন্দু অধিকারী দিলীপের বাড়িতে যাবেন কি না, তা অবশ্য এখনও কেউ জানেন না।
দিলীপ-শুভেন্দু সম্পর্ক দলের অন্দরে খুব ‘মসৃণ’ নয়। তবে বিবাহের মতো একটি সামাজিক
অনুষ্ঠানে দলীয় সমীকরণ বা মতপার্থক্য ছায়াপাত করবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।
দিলীপের বাড়িতে সুকান্ত নিয়ে গিয়েছিলেন ফুলের তোড়া, মিষ্টির বাক্স আর দিলীপের জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি। বিজেপির অন্য নেতারাও ফুল, মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন। কারও কারও হাতে তার পাশাপাশি অন্য উপহারও ছিল। দিলীপ প্রত্যেককে প্রতি-উপহার দিয়েছেন। লকেটকে দিয়েছেন শাড়ি। বাকিদের কাউকে দিয়েছেন পাজামা-পাঞ্জাবির সেট, কাউকে পাঞ্জাবি বানানোর কাপড়। কাউকে দিয়েছেন ধুতি।

শুক্রবার সকালে দিলীপ ঘোষকে শুভেচ্ছা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। — নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, শনিবার, ১৯ এপ্রিল আবার দিলীপের জন্মদিন। যদিও খাতায়কলমে তাঁর জন্মদিন ১ অগস্ট। কিন্তু সেটি ‘খাতায়কলমে’। দিলীপের ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, তাঁর ‘আসল’ জন্মদিন ১৯ এপ্রিলই। আপাতত ঠিক হয়েছে, শনিবার সকালে দিলীপ যখন প্রাতর্ভ্রমণে বেরোবেন, তখনই তাঁর জন্মদিন পালিত হবে। তবে সেখানে দিলীপ-রিঙ্কু যুগলে থাকবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যাঁরা রোজ প্রাতর্ভ্রমণে দিলীপের সঙ্গে থাকেন, তাঁরাই মূলত তাঁর জন্মদিন পালনে উদ্যোগী হয়েছেন। কারণ, দিলীপ নিজে যে কোনও ধরনের দিবসের ‘পালন’ বা আড়ম্বরের ঘোর বিরোধী।
শুক্রবার দিলীপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘দিলীপদার বিয়েতে অস্বাভাবিক কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এর আগে বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিয়ে দেখেছেন আপনারা। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বিয়ে দেখেছেন। ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের বিয়ে দেখেছেন। তিনি আবার ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের মধ্যে তো অস্বাভাবিক কিছু নেই। রাজনীতিতে যাঁরা থাকেন, সামাজিক জীবনে যাঁরা থাকেন, তাঁদের সমাজের কাজ এবং রাজনীতির কাজ করতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে যায়। যেমন প্রিয়রঞ্জনদার হয়েছিল। দিলীপদা এবং নববধূর আগামী জীবন শুভ হোক। ভাল হোক। দলের তরফে আমরা ওঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এটা ওঁদের ব্যক্তিগত পরিসর। সেখানে কারও না ঢোকাই ভাল।’’
বিকেলে বিয়ের সময় থাকছেন না সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘বিয়েতে আমাদের থাকা সম্ভব হবে না। আমি নিজে বালুরঘাট চলে যাচ্ছি। খুব ঘনিষ্ঠ যাঁরা, তাঁদের দু’একজন বিয়েতে থাকবেন।’’ সাংসারিক জীবনে পা দিয়ে কি দিলীপ রাজনীতিকে বিদায় জানাবেন? প্রশ্ন শুনে সুকান্ত বলেন, ‘‘সেটা দিলীপদার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আমরা আশা করব, যে ভাবে রাজনীতিতে উনি কাজ করেছেন, আগামী দিনেও তা-ই করবেন। উনি আমাদের শ্রদ্ধেয়। এই বিয়েতে ওঁর মা খুব খুশি। ছেলেকে নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন।’’
গত বছরেই ষাট পেরিয়েছেন দিলীপ। তাঁর বিয়ের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সমাজমাধ্যম আলোড়িত। সমাজ এবং রাজনীতির আঙিনাতেও সেই আলোড়নের আঁচ লেগেছে। আলোচনা চলছে তাঁর আগামী জীবন নিয়ে। সমাজমাধ্যমে বহু মানুষ রসিকতাও করছেন। দিলীপ নিজে অবশ্য তাতে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি আছেন তাঁর নিজের মেজাজেই।

নিউ টাউনে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে রাজ্য বিজেপির নেতারা। শুক্রবার সকালে। — নিজস্ব চিত্র।
দিলীপের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর দিলীপ যখন খানিক বিষণ্ণ, তখন রিঙ্কুই প্রথম তাঁকে সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন। রিঙ্কু বিবাহবিচ্ছিন্না। গৃহবধূ। এক পুত্রের জননী। তাঁর ছেলে সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। দিলীপ প্রথমে বিয়েতে রাজি হননি। তবে পরে ভেবেচিন্তে এবং মূলত মায়ের পীড়াপীড়িতে রাজি হয়েছেন। বস্তুত, দিলীপের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তিন মাস আগেও এই বিয়ে হবে বলে ঠিক ছিল না। পুরোটাই তার পরের কাহিনি। সূত্রের খবর, দিলীপ যাতে বিয়ে না করেন, সেই মর্মে ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ। সঙ্ঘের দু’জন দিলীপের বাড়িতেও চলে গিয়েছিলেন! তবে দিলীপ নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন আর ফেরা সম্ভব নয়। তবে দলের বড় অংশই দিলীপকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিয়ের বিষয়টি বিশেষ জানাজানি হোক, তা চাননি দিলীপ। দলের কাউকেও জানাননি। তবে ‘চিরকুমার’ দিলীপ যে তাঁর কৌমার্য ভঙ্গ করতে চলেছেন, সেই মর্মে বিজেপির অন্দরে কানাঘুষো চলছিল। অবশেষে শুক্রবারের গোধূলিলগ্নে চার হাত এক হবে। রাজনীতির ‘বাউন্ডুলে’ দিলীপ ‘সংসারী’ হবেন।