Advertisement
E-Paper

কুণাল জামিন পেলে ক্ষতি কী, প্রশ্ন কোর্টেরই

পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা মাসমাইনের চাকুরিয়া কুণাল ঘোষের বেতন হঠাৎ কী ভাবে পনেরো লক্ষ টাকা হয়ে গেল, জামিন-মামলায় এর আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি অসীম রায় প্রশ্ন তুললেন, প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি কুণালের জামিন মঞ্জুর করা হলে কতটা কী ক্ষতি হতে পারে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৭

পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা মাসমাইনের চাকুরিয়া কুণাল ঘোষের বেতন হঠাৎ কী ভাবে পনেরো লক্ষ টাকা হয়ে গেল, জামিন-মামলায় এর আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি অসীম রায় প্রশ্ন তুললেন, প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি কুণালের জামিন মঞ্জুর করা হলে কতটা কী ক্ষতি হতে পারে?

কুণালের গ্রেফতারি এবং বন্দিদশার মেয়াদ নিয়ে দু’রকম বক্তব্যই উচ্চ আদালতের এই প্রশ্নের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে দায়ের হওয়া সব মামলা একত্র করে তদন্ত চালাতে হবে সিবিআইকে। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায়, সারদার সব মামলা এক জায়গায় এনে যদি তদন্ত হয়ে থাকে, তা হলে টিটাগড় মামলায় কুণালের জেলে থাকার মেয়াদটাকে সিবিআই ধর্তব্যের মধ্যে আনবে না কেন। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণালের জামিন-মামলায় বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের এই প্রশ্নের জবাব এ দিন দেয়নি সিবিআই। আদালতে তারা জানায়, আজ, বুধবার উত্তর দেওয়া হবে।

কুণালকে জামিন দিলে কতটা কী ক্ষতি হবে, সেই প্রশ্নে পৌঁছনোর আগে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন ওই অভিযুক্তের আইনজীবী এবং সিবিআইয়ের কৌঁসুলির কাছে দফায় দফায় কয়েকটি বিষয় জানতে চায়। কুণালের আইনজীবী দেবাশিস রায়ের কাছে বিচারপতিরা মূলত দু’টি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন। সেগুলো হল:

• কুণালকে কে, কবে প্রথম গ্রেফতার করেছিল?

• সারদা মামলার ওই অভিযুক্তকে সিবিআই কবে হেফাজতে নিয়েছিল?

দেবাশিসবাবু জানান, টিটাগড় থানার একটি মামলায় (কেস নম্বর ২৬১, ২০১৩) রাজ্য পুলিশ তাঁর মক্কেলকে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করে। পরে সিবিআই কুণালকে কাগজে-কলমে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সেই জন্যই ওই অভিযুক্তের গ্রেফতারি নিয়ে দু’রকম বক্তব্য আছে। একটি হল, ২০১৩ সালে গ্রেফতার ধরলে তাঁর বন্দিদশার মেয়াদ প্রায় তিন বছর। আর ২০১৪ সালে গ্রেফতার ধরলে সেই মেয়াদ দাঁড়ায় দু’বছর। এ ভাবে দু’দফায় গ্রেফতারের কথা ধরলে দু’রকম বক্তব্য থাকতেই পারে। তবে কার্যক্ষেত্রে কুণাল জেলে বন্দি আছেন প্রায় তিন বছরই।

বিচারপতি রায় তার পরেই সিবিআইয়ের বিশেষ আইনজীবী কে রাঘবচারিলুর কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা একত্র করেই যদি তদন্ত চালানো হয়ে থাকে, তা হলে কুণালের গ্রেফতারির তারিখ ২০১৩ সাল থেকে ধরা হবে না-ই বা কেন?

জবাবে রাঘবচারিলু জানান, সিবিআই তো এই মামলায় নতুন করে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। কেন তাদের গ্রেফতারির তারিখ ২০১৪ সাল থেকেই ধরা হবে, বুধবার আদালতে নথিপত্র পেশ করে তাঁরা সেই ব্যাখ্যা দিতে চান। সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হোক।

তা শুনে বিচারপতি অসীম রায় সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই মামলার বিচার হচ্ছে। ফৌজদারি বিধিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে তিন বছরের বেশি সাজা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে জেলে রয়েছেন। কবে তারা সেই ‘আরও তদন্ত’ শেষ করবে, সিবিআই সেটা জানাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আপনিই বলুন। অভিযুক্তকে যদি অন্তর্বর্তী কালীন জামিন দিই, তাতে কতটা কী ক্ষতি হতে পারে।’’

সরাসরি এই প্রশ্নের জবাব দেননি রাঘবচারিলু। তিনি শুধু বলেন, ‘‘এই অভিযুক্তের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের গ্রেফতারিটাই কেন কার্যকর হবে, বুধবার আদালতে তা জানাব।’’

সারদা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। যখনই ওজনদার নামের কেউ জামিন পেয়েছেন, কুণাল সরব হয়েছেন নিজের মুক্তির দাবিতে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন জেলেই। প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁদের মক্কেলের জামিনের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কুণালের কৌঁসুলিরা। ওই অভিযুক্ত জামিন পেলে কতটা ক্ষতি হতে পারে, কোর্টের এই প্রশ্নের উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী আজ কী বলে, সে-দিকে তাকিয়ে সব শিবিরই।

kunal ghosh Bail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy