Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘা খেতে খেতে শীতের ভরসা এখন ঘূর্ণাবর্তই

ডিসেম্বরের গোড়াতেই তার পথ আটকে দিয়েছিল জোড়া ঘূর্ণিঝড়। নতুন বছরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার জন্য একটি ঘূর্ণাবর্তের পথ চেয়ে আছে শীত। সেই সঙ্গে প্রতীক্ষা শীত-প্রত্যাশীদেরও।

কুয়াশা ঠেলে। মাইকেল নগরে সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

কুয়াশা ঠেলে। মাইকেল নগরে সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

ডিসেম্বরের গোড়াতেই তার পথ আটকে দিয়েছিল জোড়া ঘূর্ণিঝড়। নতুন বছরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার জন্য একটি ঘূর্ণাবর্তের পথ চেয়ে আছে শীত। সেই সঙ্গে প্রতীক্ষা শীত-প্রত্যাশীদেরও।

বড়দিনে জোরদার শীত মেলেনি। বছর শেষ হয়েছে গরমে। নতুন বছরের শুরুতেও মিলল না উত্তুরে হাওয়া। রবিবার, জানুয়ারির প্রথম দিনেই কলকাতায় রাতের পারদ চড়ল স্বাভাবিকের থেকে চার ধাপ উপরে! এই পরিস্থিতিতেই ঘূর্ণাবর্তের উপরে আশা রাখতে হচ্ছে বলে জানান আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীতের ছোঁয়া পেতে আপাতত ভরসা বলতে বিহারের উপরে থাকা ওই ঘূর্ণাবর্তই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, ঘূর্ণাবর্তটি কাল, মঙ্গলবার নাগাদ ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে আসতে পারে। তার ফলে বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়। এবং সেই বৃষ্টির হাত ধরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতেও পারে শীত।

সেই সম্ভাবনা ঠিক কতটা?

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বাতাসে যে-গুমোট ভাব রয়েছে, তাতে বৃষ্টি হলে কলকাতা এবং লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা নামবে। তাতে কিছুটা হলেও শীতের প্রত্যাশা মিটবে। তবে আশা কতটা পূরণ হবে, জোর গলায় তা বলতে পারছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। ‘‘বৃষ্টির পরে পারদ কতটা নামবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। ঘূর্ণাবর্তটি ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে এলে বৃষ্টির মাত্রা ও তাপমাত্রার পতন নিশ্চিত ভাবে আঁচ করা সম্ভব হবে,’’ বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।

হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত এক দশকে জানুয়ারির প্রথম দিনে সে-ভাবে মারাত্মক শীত পড়েনি। তবে ইংরেজি নববর্ষের আগে-পরে মোটামুটি শীত মিলেছিল। এ বছর অবশ্য গোড়া থেকেই শীতের কপাল মন্দ। ডিসেম্বরের শুরুতেই তার পথ রুখে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’ এবং ‘ভারদা’। তার পরে দিন দুয়েক জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছিল ঠিকই। কিন্তু চলতি মরসুমে এ-পর্যন্ত প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফের মুখ থুবড়ে পড়েছে শীত।

কেন?

আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, এ বার শীতের মন্দ কপালের পিছনে অন্যতম কারণ উত্তুরে হাওয়ার দুর্বলতা। ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে যায়। উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে হিমেল হাওয়া বয়ে আসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। শুরু হয় পারদ পতন। কয়েক দিন তাপমাত্রা ওঠানামার পরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থিতু হয় শীত। কিন্তু এ বছর তো সেই উত্তুরে হাওয়ারই দেখা মিলছে না। উল্টে বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকে বাড়িয়ে দিচ্ছে ভ্যাপসা গরমের দাপট। তা, উত্তুরে হাওয়ারই বা এমন দশা কেন?

মৌসম ভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া (পশ্চিমি ঝঞ্ঝা) কাশ্মীর দিয়ে এ দেশে ঢোকে। তার ফলে উত্তর ভারতের পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত হয়। জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে। এ বার পশ্চিমি ঝঞ্ঝার জোর কমে গিয়েছে। ফলে কাশ্মীর, হিমাচলে ঘনঘন বরফ পড়ছে না। পঞ্জাব, হরিয়ানাতেও রাতের তাপমাত্রা নামছে না। এ দিন অমৃতসরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ছয় ডিগ্রি বেশি। হরিয়ানার হিসারে এ সময় রাতের তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রির কাছে ঘোরাঘুরি করাটাই দস্তুর। এ দিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তা হলে জোরালো পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আকালে কি অধরাই থাকবে শীত?

বিহারের ঘূর্ণাবর্ত ছাড়াও ভূস্বর্গের একটি প্রাকৃতিক প্রবণতার দিকে চোখ রাখছে হাওয়া অফিস। মৌসম ভবনের খবর, কাল, মঙ্গলবার কাশ্মীর দিয়ে ফের ঢুকবে একটি ঝঞ্ঝা। তার ঝাপটায় উত্তুরে হাওয়া চাঙ্গা হয় কি না, সে-দিকেই নজর আবহবিদদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE