Advertisement
E-Paper

অন্তরালে শাকিলের সহায় কে, জানতে স্কেচ আঁকাল সিআইডি

খাগড়াগড়ে জঙ্গিদের ঘাঁটি গাড়ার পিছনে শাকিল একা নয়। বরং পর্দার পিছনে আরও কেউ আছে। সেই আর এক জনের খোঁজে স্কেচ আঁকিয়েছে সিআইডি। বয়স বছর পঞ্চাশ। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সেই লোকের পরিচয় পুলিশ বা সিআইডি-র তরফে জানানো হয়নি। বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদই যে খাগড়াগড়ের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল তা গোয়েন্দারা আগেই জেনেছেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪০

খাগড়াগড়ে জঙ্গিদের ঘাঁটি গাড়ার পিছনে শাকিল একা নয়। বরং পর্দার পিছনে আরও কেউ আছে।

সেই আর এক জনের খোঁজে স্কেচ আঁকিয়েছে সিআইডি। বয়স বছর পঞ্চাশ। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সেই লোকের পরিচয় পুলিশ বা সিআইডি-র তরফে জানানো হয়নি।

বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদই যে খাগড়াগড়ের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল তা গোয়েন্দারা আগেই জেনেছেন। বাড়ির মালিক হাসান চৌধুরী সিআইডি-কে জানিয়েছেন, স্থানীয় এক মোয়াজ্জেমের সঙ্গে পরিচিতির কথা বলেছিল বলেই তিনি বিশ্বাস করে শাকিলকে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন এক ‘লিঙ্কম্যানের’ কথা। মোয়াজ্জেমের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী লোকটির স্কেচ আঁকানো হয়।

বৃহস্পতিবারই জানা গিয়েছিল, বাবুরবাগে যে বাড়িটিতে কওসরের ডেরা ছিল, সেটি ভাড়া নিয়েছিল তার সঙ্গী হবিবুর। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, তারই স্কেচ আঁকানো হচ্ছে। পরে জেলা পুলিশ এবং সিআইডি সূত্রে জানা যায়, হবিবুরের স্কেচ আঁকানোর দরকার হয়নি। কেননা বাবুরবাগের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যেই তার পাসপোর্ট মাপের ছবি পাওয়া গিয়েছে। সে রোগা ও শ্যামবর্ণ, দাড়ি আছে, বয়স তিরিশের নীচে।

বাবুরবাগের বাড়ির মালিক হাজি আব্দুল রেজ্জাকের ভাগ্নে ওসমান শেখ বলেন, “স্কেচে যাকে দেখছি, সে এই বাড়িতে থাকত না। এখানকার যে দুই বাসিন্দাকে পুলিশ খুঁজছে, এ তাদের মধ্যে কেউ নয়।” আসলে হবিবুরের ছবি পাওয়া গেলেও, আরও এমন অনেকের অস্তিত্বের কথা জানা যাচ্ছে, যাদের নাম-পরিচয় এখনও স্পষ্ট নয়। শাকিল ও তার সঙ্গীরা এলাকার কিছু লোককে যে ‘লিঙ্কম্যান’ হিসেবে ব্যবহার করছিল বলে খবর, তাদের অনেকেই অচেনা। বছর পঞ্চাশের এই লোকটি তেমনই এক জন বলে মনে সিআইডি-র ধারণা।

কিন্তু, কেন এই লোকটি সন্দেহের তালিকায় এল?

সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি, শাকিল যখন এই এলাকায় এসে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা শুরু করে, তখন এক বা একাধিক লোক তাকে মোয়াজ্জেম-সহ কিছু বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। মতলব ছিল, বিশিষ্টদের নাম ব্যবহার করে ফায়দা তোলা। বছর পঞ্চাশের ওই লোকটি তেমনই এক ‘মধ্যস্থতাকারী’ বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। শাকিলদের নানা বাড়ি ভাড়া পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সব চেয়ে বেশি ভূমিকা নিয়েছিল বলেও তথ্য মিলেছে। তবে জেলা পুলিশ এ ব্যাপারে কথা বলতে চায়নি। দুপুরে সিআইডির স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “এই ছবি কার, আমরা এখনও জানি না।”

দুপুরেই নদিয়ার বরবকপুরে রাজিয়ার (খাগড়াগড়ে ধৃত) জ্যাঠতুতো দাদা রফিকুল গাজির বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিআইডি। দোতলা পাকা বাড়িটি তালাবন্ধ ছিল। কাছেই শাকিলের শ্বশুর আজিজুল গাজির বাড়িও তালাবন্ধ ছিল। পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে রফিকুলের স্ত্রী পান্না খাতুনকে ডেকে এনে তালা খোলানো হয়। ঘর ও আলমারি তল্লাশি করে বেশ কিছু কাগজপত্র পান গোয়েন্দারা। পান্নাকে তাঁরা জেরাও করেন। সিআইডি-র এক অফিসার বলেন, “ওই সব কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হবে। সামান্য জমিতে সব্জি চাষ করে রফিকুল এত বড় বাড়ি কী ভাবে বানাল, তা-ও খতিয়ে দেখছি।”

সিআইডি সূত্রের খবর, মোবাইলের সূত্র ধরে খাগড়াগড়-কাণ্ডে সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই মুর্শিদাবাদের লালবাগ এলাকায় তেমনই এক যুবকের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হয়। গোয়েন্দারা জানান, বেলডাঙায় শাকিলের ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া হাজারখানেক ধর্মীয় বই ও ‘জেহাদ কেন প্রয়োজন’ নামে একটি চটিবই পাওয়া গিয়েছে। ওই সব বই ও লিফলেট মুর্শিদাবাদের কোনও প্রেসে ছাপানো হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেনামে মোবাইলের সিমকার্ড বিক্রির অভিযোগে বর্ধমানের কেতুগ্রাম এলাকার কাঁচড়া থেকে মইনুল ইসলাম ও দধিয়া থেকে অশোক মুখোপাধ্যায় ওরফে বদ্রু নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার সঙ্গে খাগড়াগড়-কাণ্ডের কোনও যোগ না-ও থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।

ছোট একটি বিস্ফোরণের খবর ঘিরে বিকেলে নতুন করে সন্দেহ দানা বেঁধেছে বর্ধমানেরই মঙ্গলকোটে। তাতে স্থানীয় ভাটপাড়া এলাকার কুঁদো গ্রামে তরুণ সাঁতরা নামে এক যুবক জখম হন। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, মাছ ধরার সময়ে জালে একটি পলিথিনের ব্যাগে ব্যাটারি ও তার পান তিনি। সেগুলি রোদে খানিক রেখে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেই একটি ব্যাটারি ফেটে যায়। যদিও এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, পলিথিন প্যাকেট নয়, একটি ছোট বাক্সে ওই ব্যাটারি ও তার ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলে ব্যাটারি ও একটি সার্কিটের অংশ পাওয়া গিয়েছে। রাতেই যুবকটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।

(সহ-প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক)

Khagragarh blast bardwan soumen dutta kallol pramanik NIA bomb blast shakil draw sketch CID state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy