রহস্যের পর রহস্য!
এসএসকেএম হাসপাতালের লগবুকে কুকুরের মালিকের নাম-ঠিকানা ছিল না। লেখা ছিল ‘আননোন ডগ’। আবার হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রকে পাঠানো নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধান রাজেন পান্ডের এসএমএস-এ লেখা ছিল, ‘নিড ডায়ালিসিস অব আ ভিভিআইপি ডগ’।
সেই ‘ভিভিআইপি ডগ’-এর পরিচয় খুঁজতে বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে গিয়ে আনন্দবাজার জেনেছিল— ওখানে ১ জুন একটি আট বছরের গোল্ডেন রিট্রিভারের জরায়ুতে অস্ত্রোপচার হয়। তার পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় ডায়ালিসিস প্রয়োজন হয়। সেই কুকুরটিকেই তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজি ডায়ালিসিসের জন্য এসএসকেএম-এ রেফার করেন বলে পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই দাবি করেছেন। নির্মলবাবু যদিও তা মানতে চাননি। তবে রেকর্ড খুঁজে ওই গোল্ডেন রিট্রিভারের মালিকের নাম মিলেছে। কিন্তু এ বারে আবার নতুন রহস্য!
পশু হাসপাতালের রেজিস্টার অনুযায়ী, ওই গোল্ডেন রিট্রিভার-এর মালিক জলি সেনগুপ্ত। ঠিকানা— ৯৮, যোধপুর পার্ক। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ১ জুন, সোমবার সিরিয়াল নম্বর ২৯-এ ওই নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত রয়েছে। রেজিস্টার অনুযায়ী, ওই দিন জলি সেনগুপ্তের একটি গোল্ডেন রিট্রিভার পশু হাসপাতালে এসেছিল। সেটির অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকদের দাবি, অস্ত্রোপচারের পর কুকুরটিকে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু তার অবস্থা ক্রমে খারাপ হওয়ায় এসএসকেএম-এ ডায়ালিসিসের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর তদন্তের নির্দেশ দিক না! তদন্তই বলে দেবে সত্যি বলছি কি না!’’
মঙ্গলবার ৯৮ নম্বর যোধপুর পার্কে হাজির হওয়া গেল। নীল-সাদা বহুতল। সাততলার ফ্ল্যাটে পাওয়া গেল জলিদেবীকে। মধ্যবয়সী, সুদর্শনা। প্রশস্ত ড্রয়িংরুম। সোফার সামনে মেঝেতে হাঁপাচ্ছে বিশাল এক গোল্ডেন রিট্রিভার। তার তদারকিতে ব্যস্ত দু’জন। কুকুরটিকে দেখেই মনে হচ্ছিল, অসুস্থ। সামনের বাঁ পায়ে ব্যান্ডেজ। ভাল করে হাঁটতে পারছে না। পিছনের পা দু’টি বারবার পড়ে যাচ্ছে। পেটের নীচেও গভীর ক্ষত।
বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে কি কুকুরটির সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়েছে? জলিদেবী আকাশ থেকে পড়লেন, ‘‘আমার কুকুর কী করে হবে? ঈশ্বরের দয়ায় একে কোনও দিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ছোটখাটো অসুখে হোমিও চিকিৎসাতেই ভাল আছে।’’
কিন্তু পশু হাসপাতালের রেজিস্টারে যে আপনার নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত আছে? জলিদেবী বললেন, ‘‘এটা কী করে সম্ভব! দক্ষিণ কলকাতায় থাকি। বেলগাছিয়া জায়গাটাই চিনি না। মনে হচ্ছে কেউ চক্রান্ত করে আমার নাম হাসপাতালে রেজিস্টারে তুলেছে।’’
কেন চক্রান্ত হবে? তাঁর উত্তর, ‘‘সেটাই বুঝতে পারছি না!’’ তবে কী করবেন? মহিলা ফুঁসে উঠে বললেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের চক্রান্তটা বার করা উচিত। কেউ কোনও কুকুর ভর্তি করে আমার নাম-ঠিকানা লিখে দিল। এমনটা কি সভ্য দেশে হতে পারে?’’
পশু হাসপাতালে যে কুকুরটির অস্ত্রোপচার হয়েছিল সেটি গোল্ডেন রিট্রিভার। বয়স আট। আপনার কুকুরের বয়সও আট। পেটে কাটা দাগ। দেখেও মনে হচ্ছে অসুস্থ। আপনার কুকুরটিই সেই কুকুর নয় তো? একটুও উত্তেজিত না হয়ে জলিদেবী বলেন, ‘‘ওর নাম হানি। ওর ডায়াবেটিস আছে। তার উপর গরমে কাহিল। আর পেটের ক্ষতটা অস্ত্রোপচারের চিহ্ন নয়। ওখানে সিস্ট হয়েছে।’’
নির্মল মাজিকে চেনেন? জলিদেবীরজবাব, ‘‘বিধায়ক ও চিকিৎসক-নেতা হিসেবে তাঁর নাম জানি। এই পর্যন্ত।’’
জলিদেবীর দাবি সত্য হলে পশু হাসপাতালের রেজিস্টারে কে বা কারা জলিদেবীর নাম লিখলেন? কেন লিখলেন? পশু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি পোষ্যকে নিয়ে এসে ইচ্ছে করে অন্য নাম, অন্য ঠিকানা লিখে না দেন, তা হলে এমন হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’’
কিন্তু যাঁর পোষ্য ভর্তি করানো হচ্ছে, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র দেখা হয় না? নবান্ন সূত্র বলছে, পরিচয়পত্র দেখাই নিয়ম। সেই নিয়ম মানা হয় কি?
পশু হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ কিন্তু বুক ঠুকে বলতে পারলেন না, হ্যাঁ।
ফলে কুকুর রহস্য যে তিমিরে, সেই তিমিরেই!
তথ্য চান লকেট
এসএসকেএম-এর কুকুর কাণ্ড নিয়ে তথ্য চেয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিকর্তার দফতরকে চিঠি দিলেন বিজেপি নেত্রী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী পাঁচটি প্রশ্ন করেছেন লকেট। প্রসঙ্গত, ওই কুকুরের মালিক কে, জানতে সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy