Advertisement
E-Paper

এক রাতেই হাবুডুবু

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল বাঁকুড়ায়। গভীর রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। টানা চলতে থাকে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৫৩.১১ মিলিমিটার। পরে, দুপুর পর্যন্ত আরও ৫১.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে পুরো অগস্ট মাস জুড়ে বাঁকুড়ায় বৃষ্টি হয়েছিল ৪০৩.৮ মিলিমিটার। এ বার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মোট বৃষ্টি হয়েছে ৪০৪.২১ মিলিমিটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪২
বানভাসি: বাঁকুড়া ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। সোমবার বেলায় বৃষ্টি থামার পরে জুনবেদিয়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বানভাসি: বাঁকুড়া ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। সোমবার বেলায় বৃষ্টি থামার পরে জুনবেদিয়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

জেলা আবহাওয়া দফতরের হিসেব মতো, ২০১৭ সালে পুরো অগস্ট জুড়ে যা হয়েছিল, এ বছর এক দিনেই তার চেয়ে বেশি বৃষ্টি হল বাঁকুড়ায়। ভাসল বিস্তীর্ণ এলাকা। জুনবেদিয়ায় জলের তোড়ে ভেঙে পড়ল আস্ত বাড়ি। হড়পা বানে ভেসে গেলেন মেজিয়ার বৃদ্ধ। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি।

কত বৃষ্টি?

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল বাঁকুড়ায়। গভীর রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। টানা চলতে থাকে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৫৩.১১ মিলিমিটার। পরে, দুপুর পর্যন্ত আরও ৫১.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে পুরো অগস্ট মাস জুড়ে বাঁকুড়ায় বৃষ্টি হয়েছিল ৪০৩.৮ মিলিমিটার। এ বার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মোট বৃষ্টি হয়েছে ৪০৪.২১ মিলিমিটার।

জলের নীচে

জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁকুড়ার ৩টি ব্লক। বাঁকুড়া ২, মেজিয়া ও গঙ্গাজলঘাটি। বাঁকুড়া ২ ব্লকে বেশ কিছু জোড়-বাঁধের জল উপচে পড়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গন্ধেশ্বরীর পাড়ে থাকা কেশিয়াকোল এলাকা এবং জুনবেদিয়া-সহ নতুন গড়ে ওঠা পল্লিগুলিতে। বিকেল পর্যন্ত অনেক এলাকারই জল নামেনি।

মেজিয়া ব্লকের দশ-বারোটি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। নাগরডাঙা, নাটশালা, বেলবরিয়া, রায়দিঘি, জুঝঘাট, সীতারামপুর, কুস্তোরের মতো গ্রামগুলি প্লবিত। বেশিরভাগ বাড়িতে জল। প্রশাসন জানিয়েছে, ত্রাণ বিলি শুরু হয়েছে।

গঙ্গাজলঘাটির পরিস্থিতিও একই। শালী নদীর প্লাবনে বানভাসি বেশ কয়েকটি গ্রাম ব্লকের থেকে বিচ্ছিন্ন। রণবহাল, কেশিয়াড়া, মেটালা, গোয়ালডাঙার মতো বহু গ্রামে জল ঢুকেছে। শুধু ওই ব্লকেই প্রায় ৫০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হড়পা বান

এ দিন সকালে মেজিয়ার নাগরডাঙা এলাকার বাসিন্দা গুণময় ভাণ্ডারি (৭০) স্থানীয় জোড়খাল পার হয়ে ধানখেতে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে হড়পা বানে তলিয়ে যান তিনি। বিকেল পর্যন্ত কোনও খোঁজ মেলেনি।

সোনামুখী এবং বড়জোড়া ব্লকের সীমানায় শালী নদীর মধ্যে একটি চর রয়েছে। পিয়ারবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চাউলিয়া মাজিরডাঙার কুড়ি জন রাখাল ৫০টি গবাদি পশু নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। হঠাৎ হরপা বান আসে। জল বন্দি হয়ে যান তাঁরা। ফোনে খবর পেয়ে বিডিও (সোনামুখী) রেজওয়ান আহমেদ সোনামুখী থানার ওসিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজে শুরু হয়। তবে রাখালদের উদ্ধার করা গেলেও বিকেল পর্যন্ত গবাদি পশুগুলি চরেই আটকে রয়েছে বলে খবর। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নৌকা মজুত রয়েছে। প্রশাসন পশুগুলির উপরে নজর রেখেছে। সেগুলিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

উদ্ধার কাজে পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বিদ্যুৎ নেই

জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। বাঁকুড়া শহরের কিছু এলাকাতেও বিদ্যুৎ নেই বলে জানা গিয়েছে। অনেক বাসিন্দাই জানাচ্ছেন, বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল বা ল্যাপটপে চার্জ দিতে পারছেন না। যোগাযোগের উপায় থাকছে না।

চাষ

জেলায় বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হলেও চাষের ক্ষেত্রে তা আশীর্বাদ হয়েছে বলেই দাবি করছেন কৃষি কর্তারা। গত জুলাইয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। বাঁকুড়া সদর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছিল। এ দিন জেলা উপকৃষি অধিকর্তা আশিসকুমার বেরা বলেন, ‘‘চাষের উপযুক্ত বৃষ্টি হয়েছে। যা ঘাটতি ছিল মিটে গিয়েছে। এ বার সব জায়গাতেই পুরো দমে চাষ শুরু হবে।’’ এ বছর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর। বাঁকুড়া সদরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের ভাল বন্দোবস্ত নেই। বৃষ্টিতে গতি বাড়বে বলে মত কৃষিকর্তাদের।

Flood Rain Damage Disaster Bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy