Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
IAS

‘সিঙ্ঘম’ হতে গিয়ে বেকায়দায়, আলিপুরদুয়ারের ডিএম-কে ছুটিতে পাঠিয়ে দিল নবান্ন

শীর্ষস্থানীয় এক জন আমলা কী ভাবে থানায় ঢুকে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার ঢেউ পৌঁছেছে নবান্নেও। সূত্রের খবর, মুখ্য সচিবের দফতর থেকে ওই জেলাশাসককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল।

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৩
Share: Save:

রিলের ‘সিঙ্ঘম’ আর ‘রিয়েল’-এর মধ্যে ফারাক যে অনেকটাই তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। শনিবার ওই জেলারই ফালাকাটা থানায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী এবং তিনি এক যুবককে কিল-চড়-লাথি মারছেন— সেই ভিডিয়ো এখন দেশ জুড়ে ভাইরাল।

শীর্ষস্থানীয় এক জন আমলা কী ভাবে থানায় ঢুকে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার ঢেউ পৌঁছেছে নবান্নেও। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্য সচিবের দফতর থেকে ওই জেলাশাসককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। নিখিলকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সোমবার দুপুরেই। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব সামলাবেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। পাশাপাশি, জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

কেরলের কোচির বাসিন্দা নিখিল নির্মল ২০০৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৩৭২তম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হওয়ার আগে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করেন। একই সঙ্গে তাঁর রয়েছে আইনের স্নাতক ডিগ্রি। পৃথক জেলা তৈরি হওয়ার আগে ২০১১ ব্যাচের এই আমলা ছিলেন আলিপুরদুয়ারের শেষ মহকুমাশাসক। এর পর তিনি উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক পদে ছিলেন। অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্বও সাফল্যের সঙ্গে পালন করেন। জেলা ভাগ হওয়ার পর তিনি অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্ব পান পূর্ব বর্ধমান জেলায়।

আরও পড়ুন: স্ত্রীকে ফেসবুকে ‘অশালীন’ মন্তব্য, থানায় ঢুকে পুলিশের সামনেই যুবককে মার জেলাশাসকের

গত বছরই জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে তিনি আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের দায়িত্ব পান।

থানায় ঢুকে যুবককে মারধর করেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল।

আলিপুরদুয়ারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই জেলার সর্বত্র সমস্ত খাবারের দোকানে খাদ্যের গুণমান পরীক্ষার জন্য বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দেন নিখিল। পাশপাশি, জেলার চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু শনিবারের বিতর্ক পেছনে ফেলে দিয়েছে নিখিলের এ সব কাজের খতিয়ান। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তিনি যে মোটেও ঠিক কাজ করেননি তা মেনে নিচ্ছেন জেলার একাধিক অফিসার।

একইসঙ্গে এমন ঘটনার জন্য অনেকে দায়ী করছেন পুলিশকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক আধিকারিক বলেন, “জেলাশাসক নিজে থানায় চলে গিয়ে মারধর করে অন্যায় করেছেন তো বটেই। কিন্তু, পুলিশও তো একটু সতর্ক হতে পারত। আইসি নিজে সামনে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা দর্শকের মতো দেখলেন। অথচ জেলাশাসক বা তাঁর স্ত্রীকে আটকানোর চেষ্টা করলেন না!”

ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়। শনিবারের ঘটনার সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অশান্তির সময়ে দার্জিলিং সামলে আসা সৌম্যজিৎ পুলিশ মহলে অত্যন্ত দক্ষ অফিসার হিসাবে পরিচিত। তিনিও কেন এমনটা হতে দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

একটি অনুষ্ঠানে মেয়েদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল।

ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এক জন নয়, অন্তত তিন জন থানার ওই ঘরে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করছেন। অর্থাৎ জেলাশাসক বা ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায় ভাল করেই জানতেন গোটা ঘটনা ভিডিয়ো করা হয়েছে। আর সেই ভিডিয়ো বাইরের লোকের কাছে পৌঁছতে পারে। তার পরেও পুলিশ কেন সতর্ক হল না? প্রশ্ন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের।

যদিও পুলিশ কর্তাদের একাংশের সাফাই, তাঁরা জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রী-র রুদ্ররূপ দেখে আটকাতে পারেননি। আর ভিডিয়ো প্রসঙ্গে পুলিশের একটা অংশের সাফাই, জেলাশাসক নিজেই গোটা ঘটনা লুকাতে চাননি। পরোক্ষ ভাবে তিনি চেয়েছিলেন গোটা জেলায় তাঁর ওই ‘দাবাং’ রূপ দেখিয়ে বার্তা দিতে যে, মহিলাদের বিরক্ত করলে ফল ভাল হবে না। পাশাপাশি তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, আইন এ ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গর্হিত অপরাধ করেছেন ডিএম।

পুলিশের অন্য একটা অংশ যদিও জেলাশাসকের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, আগে মহকুমাশাসক হিসাবে আলিপুরদুয়ারে কাজ করার জন্য গোটা জেলাটাই তাঁর পরিচিত। পরে তিনি জেলাশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে যোগ হয় তাঁর স্ত্রী-র ভূমিকাও। এর্নাকুলামের বাসিন্দা নন্দিনীর সঙ্গে নিখিলের বিয়ে হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। নন্দিনী আলিপুরদুয়ারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ছোট্ট ওই জেলা শহরে জনপ্রিয়তা পান তাঁর স্ত্রীও। পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, আর তাই বড্ড বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৩২ বছরের ওই আমলা। সে কারণেই ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: খোলামেলা পোশাকে নাচতে বাধ্য করা হত, তারপর ধর্ষণ! বিহার হোম কাণ্ডে চার্জশিট

ছবি সৌজন্যে: আলিপুরদুয়ার ডিএম-এর ফেসবুক পেজ।

(মালদহ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং সহউত্তরবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবরপড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Administration DM IAS Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE