Advertisement
E-Paper

শাহের সভায় এখনও আমন্ত্রণ পাননি দিলীপ, কী ব্যাখ্যা দলের প্রাক্তন রাজ‍্য সভাপতির? পদ্মের অন্দরে কারণ নিয়ে কী জল্পনা?

দিলীপ ঘোষ নিজে বলছেন, তিনি পদাধিকারী নন। তাই ডাক না-ও পেতে পারেন অমিত শাহের সভায়। বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে দলের একাংশের ব্যাখ্যা, দিলীপের ‘সম্মান’ রক্ষার কথা ভেবেই তাঁকে না ডাকার সিদ্ধান্ত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ ১৩:৫৮
Why Dilip Ghosh is not being invited to either Narendra Modi meeting or Amit Shah meeting

(বাঁ দিকে) অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পাননি রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন, ‘‘পদাধিকারী নই। তাই ডাক পাইনি। কলকাতায় কোনও কর্মসূচি হলে থাকব।’’ সেই ঘটনার কয়েক দিন কাটতে না কাটতেই রবিবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কর্মসূচি। কিন্তু শাহের আগমনের কয়েক ঘণ্টা আগেও দিলীপের কাছে দলের আমন্ত্রণ পৌঁছোনোর কোনও খবর নেই। রাজ্য স্তরের অন্য নেতারা নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের সভায় থাকার ডাক পেয়ে গিয়েছেন। শুধু পদাধিকারী নন, রাজ্য কমিটির সাধারণ সদস্যেরাও ডাক পেয়েছেন। দিলীপের কাছে আমন্ত্রণ না পৌঁছোনোর কারণ কী?

ব্যাখ্যা দিলীপ নিজে দিচ্ছেন। ব্যাখ্যা রাজ্য বিজেপির একাংশ তরফেও আসছে।

শনিবার সকালে দিলীপ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনও আমন্ত্রণ পৌঁছোয়নি। আমন্ত্রণ পেলে তিনি শাহের নেতাজি ইনডোরের সভায় যাবেন। তবে আমন্ত্রণ যে তিনি না-ও পেতে পারেন এবং সেই না-পাওয়ার কারণ কী হতে পারে, দিলীপ নিজের মতো করে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীদের ডাকা হয়েছে। আমি তো কোনও পদে নেই। তাই আমাকে না-ও ডাকা হতে পারে।’’ কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও পদে বা দায়িত্বে না-থাকলেও দিলীপ রাজ্য বিজেপি-র কোর কমিটির সদস্য। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিও। সেই সূত্রেই শাহের সভায় তাঁর ডাক পাওয়ার কথা। দিলীপের জবাব, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কোনও বৈঠকে বা সভায় কাকে ডাকা দরকার, কাদের সঙ্গে আলোচনা জরুরি, সেগুলো বুঝে নেতৃত্ব স্থির করেন, কাদের আমন্ত্রণ করা হবে। রবিবার নেতাজি ইনডোরের সভায় তাঁর থাকা ‘জরুরি’ না-ও হতে পারে।

বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মণ্ডল সভাপতি এবং তাঁদের উপরের স্তরের সব পদাধিকারী শাহের সভায় আমন্ত্রিত। রাজ্য স্তরের নেতা এবং রাজ্য কমিটির সদস্যদের কাছে বিজেপি-র রাজ্য দফতর থেকেই আমন্ত্রণ-ফোন গিয়েছে। রাজ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই ফোন শুধু পদাধিকারী নয়, রাজ্য কমিটির সব সদস্যের কাছেই গিয়েছে। দিলীপ সেই বন্ধনীর বাইরে নন। তিনি পদে না থাকুন, রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন। রাজ্যের কোর কমিটিতেও রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ডাক পাওয়ার কথা ছিল।

রাজ্য বিজেপি-র আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়ও নেতাজি ইনডোরের সভায় ডাক পাননি। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘৭৫ বছর বয়স হওয়ার পরে আর বিজেপির সংগঠনে সক্রিয় থাকা যায় না। এটাই দলের নিয়ম। তাই আমার কাছে নেতাজি ইনডোরের সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ আসেনি।’’ কিন্তু দিলীপের বয়স ৭৫ হতে এখনও অনেক দেরি। তাই তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তায় কোনও বাধা নেই। যেমন বাধা নেই আর এক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ক্ষেত্রেও। তিনি রবিবারের সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েও গিয়েছেন।

কেন দিলীপ ডাক পাননি, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। কিন্তু মূল কারণ যে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে দিলীপের উপস্থিতি এবং তৎপরবর্তী বিতর্কে দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দিলীপের প্রকাশ্য তোপ, তা নিয়ে অনেকেরই কোনও সংশয় নেই। সেই বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও দিলীপ একাধিক বার প্রশস্তিসূচক মন্তব্য করেছেন। তাতেই দিলীপের সবচেয়ে বড় ‘ক্ষতি’ হয়েছে বলে বিজেপির একাংশের দাবি।

দিঘায় যাওয়ার পথে দিলীপ বলেছিলেন, ‘’জগন্নাথ মন্দির বানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু জাগরণের কাজই করেছেন।’’ দিঘায় দাঁড়িয়ে মমতাকেও বলেছিলেন, ‘’এই যে এত বড় কাজটা আপনার হাত দিয়ে হল!” পরে একটি চ্যানেলে ‘দুর্নীতি’ প্রসঙ্গে মমতাকে তিনি ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিলেন। সাম্প্রদায়িক কথা তোষণের যে অভিযোগ মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি বার বার তোলে, সে প্রসঙ্গেও দিলীপ সরাসরি মমতাকে ‘দোষী’ ঠাওরাতে রাজি হননি। তৃণমূলের অনেকে দুর্নীতি করলেও সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই বলে দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন। মমতা ব্যক্তিগত ভাবে কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসায় জড়িত নন বলেও দিলীপ তাঁকে ‘শংসাপত্র’ দিয়েছিলেন।

বিজেপি সূত্রের দাবি, ওই সাক্ষাৎকারই দিলীপের জন্য সবচেয়ে ‘ক্ষতিকর’ হয়েছে। তার আগে পর্যন্ত দিলীপের জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেও রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ দূরত্ব মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু মমতার প্রতি দিলীপের ‘দরাজ শংসাপত্র’ দলের কোনও অংশই মেনে নিতে পারেনি। আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ সদর দফতর কেশব ভবনও দিলীপের এই মন্তব্যে নড়েচড়ে বসে। ‘উপযুক্ত মহলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ’ও আরএসএসের তরফ থেকে পৌঁছে যায় বলে সঙ্ঘের একটি সূত্রের দাবি। তবে প্রকাশ্যে কেউ তা নিয়ে মুখ খোলেননি।

প্রকাশ্যে যা দেখা গিয়েছে, তা হল রাজ্য বিজেপির সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দিলীপের অনুপস্থিতি। আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে দিলীপের ডাক না পাওয়া। এ বার কলকাতায় শাহের সভাতেও দিলীপের আমন্ত্রণ না থাকা।

রাজ্য বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, দিলীপের ‘সম্মানে’র কথা ভেবেই তাঁকে নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে দূরে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। ওই সভায় শুধু রাজ‍্য স্তরের নেতা বা পদাধিকারীরা থাকবেন না। জেলা এবং মণ্ডল স্তর থেকেও কয়েক হাজার কর্মী আসবেন। দিলীপকে সামনে পেয়ে কেউ ‘অনিয়ন্ত্রিত আবেগে’ ক্ষোভ উগরে দিলে দলের জন্য তা ‘অস্বস্তিকর’ হতে পারে। দিলীপের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ে দলের মতানৈক্য তৈরি হলেও রাজ্য নেতৃত্ব দিলীপ সম্পর্কে প্রকাশ্যে এখনও কোনও ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেননি। কিন্তু নেতৃত্বের সেই ‘সংযম’ যে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে না-ও থাকতে পারে। কারণ, জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে যোগ দেওয়ার পর দিন কলকাতা ফেরার পথেই দিলীপ দলীয় কর্মীদের প্রকাশ্য বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। কোলাঘাটে দিলীপের প্রস্তাবিত চা-চক্র ভেস্তে গিয়েছিল স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভে। তার পরে দিলীপের সুর আরও চড়েছে। অতএব, সাধারণ কর্মীদের কোনও অংশের মধ্যে আগের চেয়েও বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তাই আপাতত দিলীপকে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে দূরেই রাখা হবে বলে বিজেপির একটি অংশের দাবি। কারণ, দিলীপের স্তরের নেতার সঙ্গে প্রকাশ্যে কর্মীদের তিক্ত আদানপ্রদান হোক, এমনটা বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন না।

দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “দিলীপদা আমাদের পার্টির নেতা। কিন্তু তিনি শেষ যে পদে ছিলেন, সেটি হল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ। সুতরাং তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সুকান্ত মজুমদারের নেই। যা সিদ্ধান্ত হওয়ার সর্বভারতীয় স্তরেই হবে।’’

Dilip Ghosh Amit Shah BJP Bengal West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy