Advertisement
E-Paper

সরকারি খরচে শোভাযাত্রা কেন, সরব বিরোধীরা

কবি লিখেছিলেন, তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় নাকো কভু। বাংলা দেখছে, দিদির বিশ্ববঙ্গে ফুরোয় নাকো কিছু! উৎসব হলে তো কথাই নেই! শারদোৎসবের শেষটাকেও জমকালো করে রাখতে যেমন আসরে নেমেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৯
বিসর্জন। বৃহস্পতিবার নিমতলা ঘাটে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

বিসর্জন। বৃহস্পতিবার নিমতলা ঘাটে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

কবি লিখেছিলেন, তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় নাকো কভু। বাংলা দেখছে, দিদির বিশ্ববঙ্গে ফুরোয় নাকো কিছু! উৎসব হলে তো কথাই নেই!

শারদোৎসবের শেষটাকেও জমকালো করে রাখতে যেমন আসরে নেমেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সেরা প্রতিমা থেকে সেরা ঢাক-নানা ক্ষেত্রে সেরার সন্ধান করে কলকাতার ৩৯টি পুজোকে এ বার পুরস্কার দেবে রাজ্য সরকার। সরকারি আয়োজনে রেড রোডে আজ তাদেরই নজিরবিহীন শোভাযাত্রা হবে। এমনিতে বাংলায় বিসজর্নের শোভাযাত্রা নিয়ে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের মৌলিক বক্তব্য, শোভাযাত্রার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু তার আয়োজন সরকার করবে কেন? বিশেষ করে আর্থিক সংকটে যখন রাজ্য ধুঁকছে, তখন রেড রোডে প্রদর্শনীর শামিয়ানা, আলো ও মাইক-সহ নানা ব্যবস্থার জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচের যৌক্তিকতা কী? তা হলে কি শিল্প এবং কাজের আলোহীন রাজ্যে উৎসবের জৌলুস জিইয়ে রাখাটাই এই রাজনীতির অঙ্ক?

শারদোৎসবের প্রায় মাস খানেক আগে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে এ বার বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রেড রোডে শোভাযাত্রার কথা তখনই ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এ বার একাদশীর দিন কোনও ভাসান হবে না। তার দু’দিন পর শহরের সেরা পুজোগুলো নিয়ে রেড রোডে শোভাযাত্রা হবে। রাস্তার দু’ধারে লোক বসার ব্যবস্থা থাকবে। এমনিতে সবার পক্ষে সব ভালো পুজো দেখে ওঠার সুযোগ হয় না। কিন্তু রেড রোডে শোভাযাত্রা হলে এক সঙ্গে সব বড় পুজো দেখার সুযোগ তৈরি হবে।

শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে এর অতিরিক্ত কার্যকারণ প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধীরা মমতার এই সোজাসাপ্টা যুক্তি মেনে নিতে নারাজ। বরং এই সিদ্ধান্তকে ‘বেনজির ও তুঘলকি’ আখ্যা দিয়ে তাঁরা এর মধ্যে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টাই দেখছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মতে, পুরস্কারের মধ্যে দিয়ে ক্লাবগুলির উপরে আরও ‘নিয়ন্ত্রণ’ জারির চেষ্টা করছে সরকার। যা আসলে স্বৈরাচারেরই আরও একটা কৌশল। মান্নানের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকারই অন্য রকম! বেকারত্বের জ্বালা ভুলিয়ে রাখতে চান তিনি

উৎসব চালিয়ে গিয়ে। পুজো এবং পুরস্কারের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে, এর মধ্যে সেটা নেই।’’ আবার বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘চা-বাগানে না খেয়ে মরছেন শ্রমিক। তরুণ প্রজন্মের চাকরি নেই। রানির সে দিকে হুঁশ নেই। এখানে রাজসূয় যজ্ঞ হচ্ছে!’’ সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘পুজোকেও ওঁরা আর মানুষের হৃদয়ের উৎসব হিসাবে বেঁচে থাকতে দেবে না। সরকারি অনুষ্ঠান করে নেবে।’’

বিরোধীদের তরফে এ ধরনের সমালোচনা স্বাভাবিক। তবে শাসক শিবিরের নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন, তৃণমূল নেত্রীর কোনও সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক অভিপ্রায় বাদ দিয়ে হয় না। পুজো কমিটিকে পুরস্কার দেওয়াও তার বাইরে নয়। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মতে, বার্ষিক অনুদান দিয়ে এমনিতেই ক্লাবগুলিকে হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। শারদোৎসব এই ধরনের বহু ক্লাবের সারা বছরের সাধনা। পুজো আয়োজনের জন্য তাদের পুরস্কার দিলে ক্লাবগুলিকে আরও কাছে টেনে নেওয়া যায়। সেই সঙ্গেই সুকৌশলে ছুঁয়ে রাখা যায় সংখ্যাগুরুর ভাবাবেগকেও। রেড রোডে মানুষ কিন্তু ইদের নমাজ দেখতে অভ্যস্ত। পুজোর প্রতিমাও মানুষ সেখানে দেখতে পেলে ক্ষতি কী?

এর মধ্যে একটা ভারসাম্যের রাজনীতিও রয়েছে। তবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটির কর্ণধার ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা যা ইচ্ছে বলুক। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে বাংলায় পর্যটনের বিকাশ ঘটানোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিও কার্নিভালের সময় যেমন গোটা বিশ্ব থেকে ব্রাজিলে লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম ঘটে। তেমনই বাংলার শিল্পকলার সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী হয় দুর্গাপুজোর সময়ে। ভবিষ্যতে পুজো এবং এই শোভাযাত্রা দেখতে আরও বেশি সংখ্যায় দেশি ও বিদেশি পর্যটক কলকাতায় আসবেন।’’ পুরমন্ত্রীর এও বক্তব্য, শোভাযাত্রার আয়োজন করতে এখন হয়তো সরকারের খরচ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বাংলায় পর্যটনের বিকাশ ঘটলে তার থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। রাজ্যে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে। ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য সমর্থন করে সরকারের আরেক মন্ত্রী এ ব্যাপারে গোয়া-কার্নিভালের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গোয়াতেও পর্যটক টানতে সরকারি খরচেই কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। বাংলায় করলেই দোষ হয়ে গেল!

immersion procession Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy