Advertisement
E-Paper

শান্তনু সেন হঠাৎ ‘বিদ্রোহী’ কেন! হাসপাতাল প্রশাসনে দখলদারি থেকে শুরু করে গোষ্ঠীলড়াই, আছে নানা তত্ত্ব

সন্দীপ ঘোষের বিরোধিতা করাতেই কি শান্তনু সেনের এই পরিণতি হল? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিষয়টিকে সন্দীপ ঘোষ হিসাবে দেখলে হবে না। সন্দীপের ‘গুরু’ আরও বড় জায়গায় নোঙর ফেলে রেখেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৯
Why is Shantanu Sen so aggressive

শান্তনু সেন। —ফাইল ছবি।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে তৃণমূলের যে নেতাদের নাম জুড়ে যায়, তাঁদের মধ্যে শান্তনু সেন অন্যতম। সেই আরজি করে এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে শান্তনু বেশ ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই তিনি হাসপাতাল প্রশাসন, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ একাধিক বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ খুইয়েছেন। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পদ থেকেও অপসারিত করা হয়েছে শান্তনুকে। কৌতূহলের বিষয়, শান্তনু এত বিদ্রোহী কেন?

এ ব্যাপারে শান্তনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নতুন করে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আগে যা বলার বলেছি। অনেক বলেছি। আর নতুন করে কিচ্ছু বলতে চাই না।’’ শান্তনু যা যা বলেছেন তার নির্যাস কী?

এক, যে সন্দীপের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ, তাঁকে কেন সরকার বুক দিয়ে আগলাচ্ছে?

দুই, সিবিআইয়ের উচিত, সন্দীপকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা।

তিন, সারা ভারতে সন্দীপ একমাত্র অধ্যক্ষ, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়।

অর্থাৎ, শান্তনুর যা যা ক্ষোভ সবই মূলত সন্দীপের বিরুদ্ধে। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসনও। তবে তৃণমূলের একাধিক সূত্রের বক্তব্য, শান্তনুর এই বিদ্রোহের কারণ আসলে আরজি কর হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণ। যার মৌলিক বিষয় ‘দখলদারি’। শান্তনু ছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। তাঁকে সরিয়ে ওই পদে বসানো হয় শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়কে। হুগলির শ্রীরামপুরের বিধায়ক হলেও সুদীপ্ত কলকাতার ১ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ কাশীপুর এলাকার বাসিন্দা। শান্তনুও ওই এলাকারই। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘এলাকা এবং হাসপাতাল— দু’জায়গার রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষোভ এখন শান্তনু একসঙ্গে উগরে দিচ্ছেন।’’ হাসপাতাল রাজনীতির সমীকরণে শান্তনু বরাবরই সন্দীপের বিরোধী। আবার সন্দীপ এবং সুদীপ্ত একই পক্ষের বলে খবর। সেটাই সংঘাতের মূল কারণ।

আরজি করের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দীর্ঘ দিন ধরেই শাসকদলের মধ্যে অন্যতম চর্চার বিষয়। হাসপাতাল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার রাজনীতিতেও আরজি করের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ ‘সূচক’ বলে খবর। তাতে অর্থ, নিয়োগ, মেডিক্যাল শিক্ষা সবই জড়িয়ে রয়েছে। অনেকের মতে, আরজি কর কার হাতে থাকবে, কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে সেটাই অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মূল বিষয়। সেই সমীকরণে কাশীপুর, বেলগাছিয়া, পাইকপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘাতও নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সেটাই ‘বেআব্রু’ হয়ে গিয়েছে বলে অনেকের মত।

সন্দীপের বিরোধিতা করায় শান্তনুর এই পরিণতি হল কেন? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিষয়টিকে সন্দীপ ঘোষ হিসাবে দেখলে হবে না। সন্দীপের যিনি ‘গুরু’ তিনি আরও বড় জায়গায় নোঙর ফেলে রেখেছেন। ফলে সেই সূত্রেই সন্দীপ অনেক বেশি প্রভাবশালী।’’ তাঁর স‌ংযোজন, ‘‘শান্তনু যে সেটা জানেন না, তা নয়। কিন্তু উনি আগুন নিয়ে খেলে ফেলেছেন। আঁচ তো লাগবেই।’’

অন্য দিকে শান্তনুর এক ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, ‘‘দাদা কেউটের লেজে জেনেশুনেই পা দিয়েছেন। এটাও জানতেন যে, ছোবল খেতে হবে। কিন্তু এটা প্রকাশ্যে আনা প্রয়োজন ছিল যে, সাপটা কেউটে।’’ যজিও শান্তনু প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘তাঁর বক্তব্য সঠিক ভাবে নেত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না।’’ তবে তৃণমূলের কেউ কেউ এ-ও বলছেন, আরজি কর আবহে কোণঠাসা হওয়া শান্তনু বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন বলে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে ‘খবর’ রয়েছে। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা সে সব উড়িয়ে দিচ্ছেন।

শান্তনুর পাশাপাশি দলের কোপ পড়া শুরু হয়েছে তাঁর স্ত্রী কাকলি সেনের উপরেও। কাকলি কলকাতার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কাকলিকে পুরসভার হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। যা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষেই করা হয়েছে বলে খবর। শান্তনু-কাকলির কন্যা সৌমিলি আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়া। গত ১৪ অগস্ট রাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতেও গিয়েছিলেন শান্তনুর স্ত্রী এবং কন্যা।

শান্তনুর উপরে যে ভাবে পর পর দলীয় ‘কোপ’ পড়ল, তাতে কি তাঁর আর মূলস্রোতে ফিরে আসার কোনও সুযোগ রইল? তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, শান্তনুর ফিরে আসার সুযোগ কম। তার কারণ, তিনি সদর দফতরে কামান দেগে ফেলেছেন। তবে তৃণমূলের একটি অংশ চাইছে, শান্তনু এবং দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে। কিন্তু তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে শাসকদলের সেই অংশও সন্দিহান।

Santanu Sen Tmc Leader R G kar Incident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy