মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রস্তাবিত বাজেট দফায় দফায় কমিয়ে দেওয়ায় যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ‘উৎকর্ষকেন্দ্রে’র তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে সংসদে জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। ঘটনাচক্রে, যিনি এই বক্তব্য পেশ করলেন, তিনি একাধারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ঘটনাচক্র আরও যে, সংসদে ওই প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতা তথা রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত বুধবার জানান, ৩,২৯৯ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পশ্চিমবঙ্গে সরকার নামিয়ে দিয়েছিল ৬০৬ কোটিতে। তাই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে যাদবপুর।
দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে, তার প্রাথমিক তালিকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা থেকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। কেন পশ্চিমবঙ্গের ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল, কেন্দ্রীয় সরকারকে সে প্রশ্ন করেছিলেন শমীক। জবাবে সুকান্ত জানিয়েছেন, ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ প্রকল্প রূপায়ণের প্রস্তাবিত বাজেট রাজ্য সরকার কোথা থেকে কোথায় নামিয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শুরুতে ৩,২৯৯ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবিত হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই বাজেট প্রস্তাব সংশোধন করে ৬০৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি’ মনে করেছে, এই বাজেটে কোনও প্রতিষ্ঠানকে উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে কমিটি সুপারিশ করেছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। কমিশন সেই সুপারিশে অনুমোদন দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলা এবং তার পরে ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় দুই পড়ুয়ার জখম হওয়ার অভিযোগে রাজ্যের রাজনীতি এই মুহূর্তে এমনিতেই সরগরম। বিজেপি শুরু থেকেই যাদবপুরে ‘নৈরাজ্যে’র অভিযোগ তুলে তৃণমূল ও বামেদের একযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিল। বুধবার সংসদে শমীকের প্রশ্নে সুকান্তর উত্তর বিজেপিকে নতুন ‘হাতিয়ার’ দিয়েছে। রাজ্য সরকার কী ভাবে দফায় দফায় ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ প্রকল্প রূপায়ণের প্রস্তাবিত বাজেট কমিয়েছে, তা বিজেপি সবিস্তার প্রচার করতে শুরু করেছে।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় বলেছেন, ‘‘প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ‘উৎকর্ষকেন্দ্র’ প্রকল্পের অধীনে যে বাজেট প্রস্তাব জমা দেয়, কেন্দ্রীয় সরকার তাতে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অনুদান দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার নিজেদের অংশীদারি তহবিল দিতে অস্বীকার করায় এই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।’’ মালবীয়ের আরও দাবি, প্রথমে প্রস্তাবিত বাজেট কমিয়ে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা করা হয়েছিল। পরে তা আরও কমিয়ে ৬০৬ কোটি করা হয়। সেই অঙ্কের ২৫ শতাংশ আবার বিশ্ববিদ্যালয়কেই জোগাড় করতে বলা হয়েছিল। বিজেপির দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব ছিল: কেন্দ্র দেবে ৪২৪.২০ কোটি টাকা, বিশ্ববিদ্যালয় জোগাড় করবে ১৫১.৫০ কোটি টাকা এবং রাজ্য সরকার দেবে ৩০.৩০ কোটি টাকা। মালবীয়ের অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদাসীনতায় এই সুবর্ণসুযোগ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছাড়া হল।’’
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে অবশ্য বিজেপির এই আক্রমণের বা কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের বক্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও দেওয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে মোবাইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাব মেলেনি। জবাব পাওয়া গেলে তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।