Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Madrasah Service Commission

তদন্তভার সিআইডিকে কেন নয়? মাদ্রাসা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ সংক্রান্ত অন্য এক মামলায় আদালত সিআইডিকে তদন্তভার দিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার এই মামলায় তদন্তভার নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত।

Justice of Calcutta High Court Abhijit Gangopadhyay.

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৪০
Share: Save:

মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় রাজ্যের সিআইডি ডিআইজিকে তদন্তভার কেন নয়? মাদ্রাসা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন সেই প্রশ্নই তুললেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের হাতে এখন অনেক মামলা রয়েছে। অফিসারের অভাব রয়েছে। সিআইডিকে তদন্তভার দেওয়া যেতেই পারে। প্রয়োজনে আদালত নজরদারি করবে।’’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির অনেক মামলাতেই তো সিবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু তারা মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করতে পারল না কেন? কেন দেরি হল? ওই সময়ে তিনি তো সুপ্রিম কোর্টে চলে গেলেন।’’

যদিও মামলকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে বলা হয়েছে সরকারের উপরমহল থেকে কোনও অনিয়ম হলে সিআইডির পরিবর্তে সিবিআইকে সরাসরি তদন্ত করতে দেওয়া যেতে পারে। তাঁর দাবি, ‘‘মাদ্রাসার নিয়োগেও সরকারের মন্ত্রী-আমলারা যুক্ত। যেখানে পুলিশকে রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই কারণেই এই তদন্তের ভারও সিবিআইকে দেওয়া উচিত।’’

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, নিয়োগ সংক্রান্ত অন্য এক মামলায় আদালত সিআইডিকে তদন্তভার দিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার এই মামলায় তদন্তভার নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত। দু’সপ্তাহ পর মামলাটির ফের শুনানি রয়েছে।

গত অগস্টে মাদ্রাসা কমিশনের বিরুদ্ধে উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এ ‘কারচুপি’ করার অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হন আব্দুল হামিদ নামে এক পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসা নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তরপত্র বাতিল হওয়ার পরেই তিনি আদালতে মামলা করেন। ইচ্ছা করে অন্য কলমের কালি ব্যবহার করে তাঁর উত্তরপত্র বাতিল করে দেওয়া হয় বলে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। হামিদের অভিযোগ ছিল, পরীক্ষা দেওয়ার পর অন্য কেউ তাঁর উত্তরপত্রে ‘কলম চালিয়েছেন’। তিনি যে কালো কালির কলমে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেটিও তিনি মামলা করার পর আদালতে জমা দিয়েছিলেন।

এর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই মামলাকারী পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র এবং কলম ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে, দু’টি ভিন্ন কালির কলম ব্যবহার করা হয়েছিল উত্তর লেখার সময়ে। তবে একই ব্যক্তি এই কাজ করেছেন কি না, তা নির্ণয় করা সম্ভব নয় বলেও রিপোর্টে লেখা হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই মামলারই শুনানি চলাকালীনই সিআইডি ডিআইজিকে কেন তদন্তভার দেওয়া যাবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময় তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক সিবিআই আধিকারিকের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ওই সিবিআই আধিকারিকের নাম সোমনাথ বিশ্বাস। তিনি প্রাথমিকের নিয়োগ মামলায় তৈরি সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্য। মঙ্গলবার সোমনাথের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের সিট থেকে সোমনাথ বিশ্বাসকে বাদ দিতে হবে। দুপুর ২টোর মধ্যে নতুন অফিসারের নামও জানাতে হবে সিবিআইকে।’’ এমনকি, সোমনাথ যাতে একটিও ফাইলে না হাত দেন, তা-ও সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও তিনি কেন এই নির্দেশ দিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি বিচারপতি।

মঙ্গলবার তাঁর এজলাসে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানির সময়ে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও। সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি সিবিআই ইচ্ছাকৃত ভাবে তদন্তে দেরি করাচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি বসু। সেখানে তিনি সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, আপনারা ইচ্ছাকৃত ভাবে তদন্তে দেরি করাচ্ছেন।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব সমাজ থেকে জঞ্জাল সরিয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিদের জায়গা করে দিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE