Advertisement
E-Paper

আসন শূন্য কেন, প্রেসিডেন্সির জবাব চান পার্থ

পদার্থবিদ্যায় ৪৮টি আসনের মধ্যে ফাঁকা ৩০টি। বিজ্ঞান শাখার এই দু’টি প্রধান বিষয়ে অর্ধেকের বেশি আসনে কেন পড়ুয়া পাওয়া গেল না, হতবাক শিক্ষা শিবির তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন নয়, অন্য প্রায় সব বিষয়েই কিছু না-কিছু আসন খালি। একই ছবি স্নাতকোত্তর স্তরেও।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৫
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সি পর্যাপ্ত পড়ুয়া পাচ্ছে না। কেন? এই প্রশ্ন, এই বিস্ময় শুধু শিক্ষাজগতের নয়। রীতিমতো ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শতাধিক আসন ফাঁকা পড়ে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, গত বছরের মতো এ বারেও এমন হাল কেন, সেই বিষয়ে প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে উচ্চশিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বৃহস্পতিবার জানান, তাঁরা এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের চিঠি পেয়েছেন। আসন খালি থাকার ব্যাপারে সরকারের কাছে যাবতীয় তথ্য পাঠানো হচ্ছে।

সমস্যাটা আকস্মিক নয়। ওই প্রতিষ্ঠানে আসন খালি থেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। গত বারের মতো এ বছরেও প্রেসিডেন্সির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম বর্ষে ভর্তির সময়সীমার পরে দেখা যাচ্ছে, তিনশোর বেশি আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের কাছে এত আসন ফাঁকা থাকার কারণ জানতে চাইছি। গত বছরেও এমন কাণ্ড ঘটেছিল। এগুলো তো মেনে নেওয়া যায় না।’’

পড়ুয়াদের অভিযোগ, স্নাতক স্তরে তৃতীয় পর্ব পর্যন্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে আসন ভরানোর চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। আর স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে সেই চেষ্টাটুকুও করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম ডলই। পরিস্থিতি এমনই যে, স্নাতক স্তরে রসায়নে ৫০টি আসনের মধ্যে ৩৪টিই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পদার্থবিদ্যায় ৪৮টি আসনের মধ্যে ফাঁকা ৩০টি। বিজ্ঞান শাখার এই দু’টি প্রধান বিষয়ে অর্ধেকের বেশি আসনে কেন পড়ুয়া পাওয়া গেল না, হতবাক শিক্ষা শিবির তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন নয়, অন্য প্রায় সব বিষয়েই কিছু না-কিছু আসন খালি। একই ছবি স্নাতকোত্তর স্তরেও।

গত বার আসন ফাঁকা থাকার পরে এ বছর তুলনামূলক ভাবে আগেভাগে ভর্তির পরীক্ষা নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছরের মতো ভর্তির পরীক্ষা নিয়েছিল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডই। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ছাত্র ভর্তির ‘ওয়েটিং লিস্ট’ বা প্রতীক্ষার তালিকায় এ বার কম নাম রাখা হয়েছে। তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যেও অনেকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু সেই সব আসন পূরণে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভাবে সক্রিয় হননি বলেই ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ।

স্নাতকোত্তর স্তরের ছবিটা সমধিক মলিন। কেননা প্রেসিডেন্সির স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদেরও অনেকে স্নাতকোত্তর পাঠ নিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি! কেন এই বিমুখতা, সেটা তো রহস্য বটেই। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য কর্তৃপক্ষের তরফে ওই সব আসন উন্মুক্ত করে না-দেওয়াটাও কম বিস্ময়কর নয়। ফলে বহু আসন ফাঁকাই রয়ে গিয়েছে।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের অনেকে এর কিছু কিছু ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এবং তির্যক ভাবে দু’পক্ষেরই আঙুল উঠছে প্রেসিডেন্সির পাঠ-পরিস্থিতির দিকে। ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশের বক্তব্য, স্নাতক স্তরে পড়লেও অনেকে স্নাতকোত্তর স্তরে আর প্রেসিডেন্সিতে পড়তেই চাইছেন না। অনেকেই রাজ্যের বাইরে পড়তে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার রাজ্যের বাইরে না-গেলেও পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে সেখানে যোগ দিচ্ছেন।

শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, এই প্রবণতাই বলে দিচ্ছে, প্রেসিডেন্সি একদা যে-উৎকর্ষের জোরে পড়ুয়াদের পছন্দের শীর্ষে থাকত, তার উজ্জ্বলতায় ভাটার টান লেগেছে। সেই জন্যই অনেক ছাত্রছাত্রী ভিন্‌ রাজ্যের প্রতিষ্ঠান, এমনকী পড়শি যাদবপুরকে উজ্জ্বলতর বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কোনও কোনও শিক্ষাবিদের বক্তব্য, বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এবং বিমুখ শিক্ষকদের অনেকেই জানিয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের পাঠ-পরিবেশ মোটেই উন্নত শিক্ষামানের অনুকূল নয়। আগে যে-ধরনের বড় বড় নাম প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-তালিকায় থাকত, এখন তারও খুব অভাব। প্রায় সব বিষয়ে আসন খালি পড়ে থাকার এটাও একটা বড় কারণ।

Presidency University Partha Chatterjee পার্থ চট্টোপাধ্যায় Education Minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy