Advertisement
E-Paper

কাজে তাপ্পি দিয়ে জোড়া পদ কেন, প্রশ্ন শিক্ষায়

এক ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক পদে থাকলে কাজের কাজ কতটা হয়, বিভিন্ন দল ও প্রশাসনিক স্তরে বারবার সেই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু বাংলার শিক্ষা ক্ষেত্রে, বিশেষত উচ্চশিক্ষায় জোড়া পদে বসানো বা জোড়া পদ দখল করে রাখার ট্র্যাডিশনে ছেদ নেই। শিক্ষা শিবির তো বটেই, সরকারের শিক্ষা দফতরেও প্রশ্ন উঠছে, এমন অবস্থায় কোনও পদেই শ্রম ও দক্ষতার পুরোটা দেওয়ার সম্ভাবনা অসম্ভব জেনেও জোড়া পদ দেওয়ার ধারা চলছে কেন?

সাবেরী প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:২১

এক ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক পদে থাকলে কাজের কাজ কতটা হয়, বিভিন্ন দল ও প্রশাসনিক স্তরে বারবার সেই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু বাংলার শিক্ষা ক্ষেত্রে, বিশেষত উচ্চশিক্ষায় জোড়া পদে বসানো বা জোড়া পদ দখল করে রাখার ট্র্যাডিশনে ছেদ নেই। শিক্ষা শিবির তো বটেই, সরকারের শিক্ষা দফতরেও প্রশ্ন উঠছে, এমন অবস্থায় কোনও পদেই শ্রম ও দক্ষতার পুরোটা দেওয়ার সম্ভাবনা অসম্ভব জেনেও জোড়া পদ দেওয়ার ধারা চলছে কেন?

সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। আসলে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদের জন্য যোগ্য এবং শাসক দলের আস্থাভাজন— এমন কাছের লোকের বড়ই অভাব। আর সেই জন্যই নবান্নের নির্দেশে একের পর এক শিক্ষা সংস্থার শীর্ষ পদে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোনও কলেজের অধ্যক্ষকে। আপাতত এই তালিকায় সর্বশেষ নাম দীপক কর।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন দীপকবাবুকে কলেজ সার্ভিস কমিশন বা সিএসসি-র চেয়ারম্যান-পদে বসান শিক্ষামন্ত্রী। জানুয়ারিতে চেয়ারম্যান হয়ে কাজে যোগ দেওয়ার আগে অধ্যক্ষ-পদ থেকে ‘লিয়েন’ নেন তিনি। কয়েক মাস যেতে না-যেতেই বৃহস্পতিবার ফের অধ্যক্ষ-পদে যোগ দিয়েছেন দীপকবাবু। সেই সঙ্গে সামলাবেন সিএসসি-র চেয়ারম্যানের দায়িত্বও।

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, চেয়ারম্যান হয়ে দীপকবাবু তো তবু অধ্যক্ষ-পদে লিয়েন নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আগে যাঁরা বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদে বসেছেন, তাঁরা কেউ এক দিনের জন্যও অধ্যক্ষের পদ ছাড়েননি। যেমন:

মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি যখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হন, তখন ছিলেন চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ। পরে সংসদ-সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনও অধ্যক্ষের পদে রয়ে গিয়েছেন মুক্তিনাথবাবু।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য একই সঙ্গে যোগেশ চৌধুরী আইন কলেজের অধ্যক্ষের পদ সামলেছেন। সম্প্রতি তিনি অধ্যক্ষ-পদে অবসর নিয়েছেন।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বর্তমান সভানেত্রী মহুয়া দাস এখনও বাগবাজার উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষার পদে রয়েছেন।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য একই সঙ্গে ফকিরচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ। সম্প্রতি তিনি শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও সুবীরেশবাবু ফকিরচাঁদ ছেড়ে যাবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

শিক্ষকমহলের একাংশের মতে, কয়েক বছর ধরে ‘যোগ্য ও অনুগত’ খুঁজতে গিয়ে যে-ভাবে অধ্যক্ষদের নিয়ে টানাটানি চলছে, তা মোটেই অভিপ্রেত নয়। এর ফলে সমস্যা হচ্ছে দু’দিক থেকে। l অধ্যক্ষ অন্যত্র ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্ট কলেজের পঠনপাঠন ও দৈনন্দিন কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। l ওই অধ্যক্ষ যে-সংস্থার প্রধান হয়ে যাচ্ছেন, সেখানেও কাজকর্মের বিশেষ উন্নতি হচ্ছে না।

এতে দু’দিকেই ক্ষতির বহর কেমন, শিক্ষা দফতরেরই এক কর্তার মন্তব্যে সেটা স্পষ্ট। তিনি বলছেন, ‘‘তাপ্পি দিয়ে কাজ চালালে যেমন হয়, এ-সব ক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে।’’

কিন্তু কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান-পদে থাকা সত্ত্বেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দীপক কর কলেজে ফিরে গেলেন কেন?

শিক্ষা দফতরের কারও কারও মতে, কলেজ সার্ভিস কমিশনের আগেকার চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে কোনও কারণ না-দেখিয়েই যে-ভাবে আচমকা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দীপকবাবুর ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন একটা আশঙ্কা থেকেই তড়িঘড়ি অধ্যক্ষ-পদে ফিরে গেলেন দীপকবাবু, ব্যাখ্যা শিক্ষা দফতরের এক কর্তার।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই ধরনের আশঙ্কা ও জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আইনত দু’টি দায়িত্বই পালন করতে পারেন দীপকবাবু। অনেকেই তা করছেন। তবে এখনই কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে না।’’

দীপকবাবু নিজে কী বলছেন?

এই নিয়ে বক্তব্য জানার জন্য শুক্রবার দীপকবাবুকে বহু বার ফোন করা হয়। এসএমএস-ও করা হয় বার কয়েক। কিন্তু কোনওটাতেই সাড়া মেলেনি। তবে দীপকবাবু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, কলেজের কাজকর্মে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, তা নিশ্চিত করতেই তিনি দ্রুত ফিরে গেলেন। কলেজ সূত্রের খবর, দীপকবাবুর অনুপস্থিতিতে তাদের এক জন অভিজ্ঞ শিক্ষিকা ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা’ হিসেবে কাজ চালাচ্ছিলেন। এবং তাতে কলেজের কাজকর্মে কোনও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেনি। তা হলে কলেজের কাজকর্মে সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে দীপকবাবু কেন ফিরলেন, সেই প্রশ্নকে ঘিরে জল্পনা চলছে বিভিন্ন মহলে।

education saberi pramanik higher secondary education muktinath chattopadhyay subiresh bhattacharya school service commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy