Advertisement
০২ মে ২০২৪
Malda Incident

মালদহে নির্যাতিতা মহিলাদের পৃথক মামলায় গ্রেফতার কেন? উঠছে বহু প্রশ্ন, ‘অস্বস্তি’তে পুলিশ

পুলিশের দাবি, ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ রয়েছে। সেই ভিডিয়ো ফুটেজে কি মানিকচকের নির্যাতিতা দুই মহিলাকে দেখা যাচ্ছে? এই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অন্দরেই।

Malda Incident

পাকুয়াহাটে চুরির অভিযোগে ২ জন মহিলাকে বিবস্ত্র করে জুতা মারার ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করে আদালতে পেশ করল বামনগোলা থানার পুলিশ। ছবি: স্বরূপ সাহা।

অভিজিৎ সাহা
বামনগোলা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

মালদহের পাকুয়াহাটের ঘটনায় ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদেরই পৃথক মামলায় গ্রেফতার করে ‘অস্বস্তিতে’ পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে দাবি, পাকুয়াহাটে ওই দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছিল চুরির অভিযোগে। অথচ পুলিশ জানিয়েছে, দুই মহিলার বিরুদ্ধে চুরির কোনও মামলা হয়নি। বরং ওই গণপ্রহারের ২৪ ঘণ্টা আগে বিজেপির আন্দোলনে ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের উপরে যে অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ, তাই নিয়েও ঘটনার দিন মামলা হয়নি। বরং এই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে আসতে তড়িঘড়ি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ মামলা দায়ের করে। অথচ, ঘটনার সময়েই সেখানে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার হাজির ছিলেন। বিরোধী এবং ‘নির্যাতিতাদের’ পরিবার প্রশ্ন তুলেছে, এত দেরিই বা হল কেন?

এই ঘটনায় তিন মহিলা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার তাঁদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “মহিলাদের মারধরের ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিডিয়ো দেখে বামনগোলারই বাসিন্দা মনোরঞ্জন মণ্ডল, বিজয় মণ্ডল, মিনতি টুডু, বাসন্তী মার্ডি ও রেবতী বর্মণকে গ্রেফতার করা হয়।

খটকা যেখানে

• সিভিক কর্মীদের সামনে মহিলাদের উপরে নির্যাতন হলেও কেন তিন দিন পরে মামলা?

• নির্যাতিতা মহিলাদের উল্টে গ্রেফতার কেন?

• চুরির অভিযোগে গণপ্রহার হলে পুলিশের তরফে ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলা দেওয়া হল কেন?

• ফাঁড়ি ভাঙচুরের ভিডিয়ো ফুটেজ রয়েছে পুলিশের কাছে। তাতে কি মানিকচকের নির্যাতিতা মহিলারা রয়েছেন?

• ফাঁড়ি ভাঙচুরে প্রকৃত অভিযুক্তদের আড়াল করতেই কি গ্রেফতার নির্যাতিতাদের?

• নির্যাতিতাদের পৃথক মামলায় গ্রেফতারের ঘটনা কি জানতেন জেলা পুলিশের কর্তারা?

পাকুয়াহাটে গণপ্রহারের ২৪ ঘণ্টা আগে দলীয় কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় বামনগোলা থানারই নালাগোলা ফাঁড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় নাম জড়ায় বিজেপির। সেই ঘটনায় পুলিশ বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কাজে বাধা, বেআইনি জমায়েতের মতো ধারায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতাদের বিরুদ্ধেও ওই সব একই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। গণপ্রহারের সময়ে চুরির অভিযোগ উঠলে কেন নির্যাতিতাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, বেআইনি জমায়েতের ধারায় মামলা করা হল, উঠছে সে প্রশ্নও।

নালাগোলা ফাঁড়ি থেকে নির্যাতিতা মহিলাদের মানিকচকের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এক নির্যাতিতার মেয়ে বলেন, “মঙ্গলবার পাকুয়াহাটে মা, কাকিমা লেবু বিক্রি করতে গিয়ে চুরির অভিযোগে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পুলিশ তাঁদের সোমবারের ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে।” মা, কাকিমা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করতে কেন যাবেন, প্রশ্ন করেন তিনি।

পুলিশের অবশ্য দাবি, ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ রয়েছে। সেই ভিডিয়ো ফুটেজে কি মানিকচকের নির্যাতিতা দুই মহিলাকে দেখা যাচ্ছে? এই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অন্দরেই। বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “পুলিশ যে সাধারণ মানুষকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে হেনস্থা করে, মালদহের ঘটনায় তা স্পষ্ট। এমনকি, পুলিশের মিথ্যে মামলা থেকে নির্যাতিতারাও রেহাই পাচ্ছে না।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, “মালদহে নিন্দাজনক ঘটনা ঘটেছে। সেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। কে কোন-দলের লোক দেখার দরকার নেই, অপরাধ যে করেছে তাকে গ্রেফতার করো, তাকে শাস্তি দাও, এটাই আমাদের বক্তব্য।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, “২০১৬-২৩ সাল পর্যন্ত এই রাজ্যে ১০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে মণিপুরের মতো।” অধীরই অবশ্য শনিবার মালদহের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেও বলেছিলেন, “মণিপুরের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, “পুলিশ তৎপর হয়ে ঘটনাটি দেখছে। তবে বিজেপি মণিপুরের ঘটনা থেকে বাঁচতে পাকুয়াহাটের ঘটনাটি সামনে এনে রাজনীতি করছে। মানুষ সব বুঝতে পারছেন।” পাকুয়াহাটের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। তিনি বলেন, “ঘটনার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Mob Violence West Bengal Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE