Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Congress

Jhalda Murder Case: চাপ দেওয়ার অভিযোগ আইসি-র বিরুদ্ধে, ঝালদার কাউন্সিলর খুনের পিছনে কি স্থানীয় রাজনীতি

পূর্ণিমার অভিযোগ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ঝালদা থানার আইসি তাঁর ও তাঁর স্বামীর উপরে ‘চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন’

পূর্ণিমা কান্দু এবং মিঠুন কান্দু

পূর্ণিমা কান্দু এবং মিঠুন কান্দু

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও ঝালদা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২ ০৪:৩৮
Share: Save:

কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনায় তাঁর এক ভাইপোকে মঙ্গলবার রাতে ধরল পুলিশ। তবে ওই ঘটনায় পুরুলিয়ার ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনকে সোমবার রাতে লেখা ওই অভিযোগপত্রে আইসি ছাড়া, নিহতের ভাইপো দীপক কান্দু (পুরভোটে ২ নম্বর ওয়ার্ডে তপনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী), দীপকের বাবা নরেন কান্দু, এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত বিশ্বনাথ কান্দু, শ্যামাপদ সাউ ও ভীম তিওয়ারির নামও রয়েছে।

পূর্ণিমার অভিযোগ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ঝালদা থানার আইসি তাঁর ও তাঁর স্বামীর উপরে ‘চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন’ যাতে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়ে, তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়েন। তাঁরা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, তিনি নানা ভাবে তাঁদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত ঝালদায় তৃণমূলের পুর-বোর্ড গঠনের জন্য ‘যোগসাজশ করে’ এই খুন করা হয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার প্রতিক্রিয়া, “ঝালদায় এমনিতেই আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বোর্ড গঠনের দাবিদার।’’

অভিযুক্ত আইসি কোনও মন্তব্য করেননি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এক প্রত্যক্ষদর্শীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে আগেই মামলা হয়েছে। পূর্ণিমার অভিযোগ তার সঙ্গে জুড়ে নেওয়া হবে। দীপককে ধরা হয়েছে।’’ পূর্ণিমা বলেন, “আইসি-সহ বাকি জড়িতদের শাস্তি না-হলে, আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে না।”

তপনের আর এক ভাইপো মিঠুন কান্দুর প্রকাশ করা ফোনে কথোপকথনের তিনটি ‘অডিয়ো ক্লিপ’ (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ঘিরে এ দিন শোরগোল পড়ে ঝালদায়। পরে তা ‘ভাইরাল’ হয়। মিঠুনের অভিযোগ, তাঁর কাকা তপনকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য আইসি গা-জোয়ারি করেছিলেন এবং অডিয়োগুলোতে তারই ‘নমুনা’ রয়েছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর আরও দাবি, ‘‘আইসি অনেক বার চাপ দেওয়ার পরে বলি, ‘কাকাকে চেয়ারম্যান করে দিতে পারবেন’? উনি দাবি করেন, ভাইস চেয়ারম্যান করে দেবেন।” ভাইরাল হওয়া একটি অডিয়ো ক্লিপে (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) শোনা যাচ্ছে, দুই পুরুষ কণ্ঠের কথোপকথন। সেখানে এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘চেয়ারম্যান তো হবে না, আমি বলেই দিয়েছি। ভাইসটা (ভাইস চেয়ারম্যান) হলে হবে, বা বাদবাকিগুলো হবে। চেয়ারম্যান টিএমসির লোগোতে যারা জিতেছে, তারাই হবে। তার বাইরে
হবে না।’’

নিয়মিত ‘চাপাচাপি’র পরে, আইসি-র ফোন ধরা তিনি বন্ধ করে দেন, দাবি মিঠুনের। তাঁর আরও অভিযোগ, “তখন থানায় আমাকে ডেকে পাঠিয়ে আইসি কাকাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে বলেন। হুমকি দেন, কথা না মানলে, এত মামলায় নাম জুড়বেন যে কোর্টের সামনে বাড়ি বানিয়ে থাকতে হবে।” মিঠুন বলেন, “সব শুনে কাকু বলেছিল, ‘বলতে দে। কংগ্রেসে রয়েছি, কংগ্রেসেই থাকব’।”

জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, “কথোপকথনের ব্যাপারটা জানতাম। কিন্তু তার রেকর্ডিং রয়েছে, জানা ছিল না। অডিয়ো ক্লিপগুলো পুলিশকে দেব।” ঝালদায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেন, ‘‘অডিয়ো ক্লিপে (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) শোনা যাচ্ছে, তপনকে যোগ দেওয়ানোর প্রশ্নে এক জন বলছেন, ‘আমি তো কোথাও বলেছি। আমার কথার তো দাম থাকতে হবে’। এটা সামনে আসা দরকার কাকে, কোথায় বলা হয়েছিল। অডিয়ো ক্লিপে ওই কণ্ঠস্বর কার, তার ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য আমরা আদালতে যাব।’’ যে অডিয়ো ক্লিপের (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) প্রসঙ্গ মান্নান তুলেছেন তাতে ‘কথার দামের’ প্রসঙ্গের পরে, এক পুরুষকণ্ঠকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমার সাথে দেখা করুক ফোন করে। কী অসুবিধা আছে্?... থানায় এলে অসুবিধা আছে’।

বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘ঝালদার কাউন্সিলর খুনের ঘটনায় আইসি নিজে যুক্ত। ওঁর (নিহতের) ভাইপোর যে অডিয়ো রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে, তার পরে আর কোনও প্রমাণের দরকার নেই।” তাঁর টিপ্পনী, ‘‘১০২ না ১০৪ পাওয়ার পরেও, শান্তি নেই। তৃণমূলের এমন উদগ্র খিদে যে, আলসার হয়ে যাবে।”

পক্ষান্তরে, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রতি দায়বদ্ধ। এই মৃত্যুর পিছনে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বার করে, তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে পুলিশ।’’ ধৃত দীপকের মা বাবি কান্দু দাবি করেছেন, ‘‘আমার ছেলে খুনের ঘটনায় কোনও ভাবেই জড়িত নয়।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯৯৮-এ সাব ইনস্পেক্টর হিসাবে রাজ্য পুলিশে যোগ দেন সঞ্জীব ঘোষ। ২০০০ সালে বান্দোয়ান থানায় সেকেন্ড অফিসার হন। ২০০৩-এ মাওবাদী হামলায় বান্দোয়ান থানার ওসি নীলমাধব দাস নিহত হন। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন সঞ্জীবও। পরে, নিতুড়িয়া-সহ জেলারই বেশ কয়েকটি থানায় সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কাজ করেছেন। ২০০৮-এ বদলি হন তৎকালীন বর্ধমানে। ২০১৮ পর্যন্ত আসানসোল উত্তর, আসানসোল দক্ষিণ, রায়না, ভাতার, কাটোয়া-সহ বেশ কিছু থানায় ওসি ছিলেন। কাটোয়ায় থাকাকালীন তৃণমূল কাউন্সিলর জঙ্গল শেখকে খুনের অভিযোগে ধরেওছিলেন। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে, আইসি হিসাবে ঝালদা থানায় যোগ দেন।

‘অডিয়ো ক্লিপ’গুলি পুলিশকে দেবেন জানিয়েও মিঠুন বলেন, “পুলিশের তদন্তে আস্থা নেই। এখানে কি আর তদন্ত হবে! সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Jhalda Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE