E-Paper

নেকড়ের কপালে জুটবে কি পৃথক কোনও অভয়ারণ্য

দুর্গাপুরের কাছে মাধাইপুরের জঙ্গলে নেকড়ের পাল বসবাস করে। সম্প্রতি ওই নেকড়ের পালের উপরে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির জার্নালে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৩০
সমীক্ষক দলের ক্যামেরা-ফাঁদে ধরা পড়া নেকড়ে। দুর্গাপুরের মাধাইপুরের জঙ্গলে।

সমীক্ষক দলের ক্যামেরা-ফাঁদে ধরা পড়া নেকড়ে। দুর্গাপুরের মাধাইপুরের জঙ্গলে। —নিজস্ব চিত্র।

উপমহাদেশের বিভিন্ন অরণ্য মিলিয়ে তাদের সংখ্যা মেরেকেটে হাজার তিনেক। গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ভারতীয় ধূসর নেকড়ের (ইন্ডিয়ান গ্রে উলফ) সংখ্যা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন) এই নেকড়েদের অবলুপ্তির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এ রাজ্যে নেকড়ের জন্য পৃথক অভয়ারণ্য হবে কি? কারণ, এ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে নেকড়ের বসবাস আছে। তবে তাদের সংরক্ষণের প্রক্রিয়া এখনও জোরালো নয়।

দুর্গাপুরের কাছে মাধাইপুরের জঙ্গলে নেকড়ের পাল বসবাস করে। সম্প্রতি ওই নেকড়ের পালের উপরে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির জার্নালে। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে নেকড়ের বসবাস মানুষের বসতির কাছাকাছি এবং এই জায়গাগুলি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে। তাই মানুষ এবং নেকড়ের সংঘাতের আশঙ্কা বেশি। এর ফলে সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বাধা থাকছে। এ ছাড়াও, এই সমীক্ষার জন্য পাতা ক্যামেরা ফাঁদে কিছু ‘সন্দেহজনক’ মানুষের গতিবিধিও ধরা পড়েছিল। সে কথাও গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে। সমীক্ষক দলের প্রধান তথা খড়্গপুর আইআইটি-র পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো অর্কজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বন দফতর সক্রিয়। তবে কোনও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তকমা পেলে নেকড়ে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া জোরালো ওসুস্থায়ী হবে।”

বছর কয়েক আগে দুর্গাপুরের কাছে ওই জঙ্গলে নেকড়ের অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছিল। মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) কল্যাণ দাসের নেতৃত্বে ওই এলাকায় প্রাথমিক সমীক্ষা করা হয়। বনাঞ্চলে নজরদারি এবং নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়। সেই তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই বন দফতর এবং ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া-র সহায়তায় ‘ওয়াইল্ডলাইফ ইনফরমেশন অ্যান্ড নেচার গাইড সোসাইটি’ (উইংস) নামে একটি সংস্থা এই সমীক্ষায় নামে। যুক্ত হন বনকর্তা কল্যাণ দাসও। ক্যামেরা ফাঁদ এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ-সহ নানা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে সার্বিক সমীক্ষা করেছেন তাঁরা।

বন দফতরের খবর, ওই তল্লাটে নেকড়ের পাল ঘুরে বেড়ায়। এখনও পর্যন্ত যা হিসাব তাতে ২৪-২৮টি নেকড়ে আছে। তার মধ্যে পুরুষ, স্ত্রী এবং ছানা আছে। তবে এর বাইরেও কয়েকটি জায়গা আছে যেখানে নেকড়ের বসবাস থাকতে পারে। বনকর্তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে ওই এলাকায় অরণ্য বেড়েছে। জঙ্গলের মধ্যে একাধিক পুকুর কাটা হয়েছে। তার ফলে নেকড়েরা নিরাপদে বংশবিস্তারও করতে পারছে। ওই এলাকায় মেছো বেড়াল, শেয়াল, বুনো শুয়োর, ময়ূরও বসবাস করছে। বেড়েছে জনসচেতনতাও। তবে সর্বশেষ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এ-ও বলা হয়েছে, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় কৃষিকাজ এবং কয়লা খনির জন্য নেকড়ের আবাসস্থলের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়াও, চোরাশিকারের বিপদও রয়ে যাচ্ছে। নেকড়ে সংরক্ষণের কৌশল আরও দৃঢ় করতে কয়েকটি নেকড়ের গলায় রেডিয়ো কলার পরানো, ডিএনএ-র নিবিড় বিশ্লেষণ ইত্যাদি করা যেতে পারে। তাতে নেকড়ের দল কোন কোন এলাকায় ঘুরছে, তাদের সর্বাধিক সংখ্যা কত, তারা কী শিকার ধরে খাচ্ছে—সে সবই বোঝা সম্ভব।

অভয়ারণ্য তৈরি হলে নেকড়ে সংরক্ষণ যে জোরালো হবে, তা মেনে নিচ্ছেন বনকর্তাদের একাংশ। তবে তার জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং কর্মী নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে তাদের মনে। এক পদস্থ বনকর্তা বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতে অভয়ারণ্যের প্রস্তাব প্রশাসনের শীর্ষমহলে পাঠানো হতে পারে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Wolf Durgapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy