E-Paper

আন্দোলনে কি ছায়া ভোটেরও

প্রশ্নটা অমূলক নয় বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। কারণ, নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে আওয়াজ তোলার পাশাপাশি একই স্বরে নবান্নের দিকে তির ছুড়তে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র চিকিৎসক, অনশন মঞ্চের সামনে ভিড় জমানো জনতাকে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩০
ধর্মতলায় আন্দোলনকারীদের ভিড়।

ধর্মতলায় আন্দোলনকারীদের ভিড়। —ফাইল চিত্র।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে উষ্মা প্রকাশ করছেন সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে সিঁড়ি করে কেউ নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথ মসৃণ করছেন না তো?

প্রশ্নটা অমূলক নয় বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। কারণ, নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে আওয়াজ তোলার পাশাপাশি একই স্বরে নবান্নের দিকে তির ছুড়তে দেখা যাচ্ছে জুনিয়র চিকিৎসক, অনশন মঞ্চের সামনে ভিড় জমানো জনতাকে। অনেক সময়ে ন্যায়বিচারের তুলনায় রাজনৈতিক স্লোগান বেশি শোনা যাচ্ছে, যা সাধারণত রাজনৈতিক দলের সমাবেশে শোনা যায়।

অনেকের দাবি, আন্দোলনের স্রোত আগামী বছর পুরসভা নির্বাচন তো বটেই, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত জিইয়ে রাখতেই সচেষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীরা। যদিও জুনিয়র চিকিৎসকেরা বারবার দাবি করেছেন, তাঁদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করলে তাঁকে ধিক্কার। কিন্তু তাঁদের আন্দোলনে রাজনীতির অনুপ্রবেশের অভিযোগের পুরোটাই কি অপপ্রচার? জুনিয়র চিকিৎসকদের কথায়, “আন্দোলনকে ভাঙার প্রচেষ্টা হচ্ছে।” তবে ইতিহাস বলছে, এমন প্রতিবাদী আন্দোলনের মুখদেরই ভোটের সময়ে ব্যবহার করার প্রাণপণ চেষ্টা করে রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ, যে কোনও আন্দোলনেই সামনের সারিতে থাকা মানুষজনের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়।

২০০৭ সালে রিজওয়ানুর রহমানের অপমৃত্যুর সময়ে রাজ্যের বিরোধী আসনে ছিল তৃণমূল। তৎকালীন বাম-প্রশাসনের ভিত নাড়িয়ে দিতে সেই ঘটনাকে তারা হাতিয়ার করে। রিজওয়ানুরের দাদা রুকবানুরকে ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করে তৃণমূল। মেলে সাফল্যও। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আর জি করের ঘটনা তেমন কিছু মুখ তৈরি করে দিচ্ছে। যা তৈরির নেপথ্যে অবশ্যই রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। সেটা ব্যক্তিগত অথবা দলীয় স্তরে নির্ধারিত। সেই সূত্র ধরে চর্চাও তুঙ্গে। যেমন, অনেকেই কটাক্ষ করছেন আন্দোলনের সমর্থক, সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। তা না হওয়ায় আগামী দিনে ভোটের ময়দানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি এতটা সরব।

যদিও নারায়ণের দাবি, “ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ নিশ্চয় আছে। কিন্তু চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে নিজের পরিচয় ধরে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করি। মানসিক অস্থিরতা না থাকলে কেউ ভোটের রাজনীতিতে আসেন নাকি?”

আবার, রুকবানুরের পথ অনুসরণ করে নির্যাতিতার কোনও আত্মীয়ের আগামী দিনে বিরোধী দলের মুখ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও উস্কে দিচ্ছেন শাসক দলের অনেকে। তাঁদের দাবি, “কে কোথায় কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, অপ্রকাশিত হলেও, সেই সত্য অনেকেই জানেন।” রাজনীতির উত্তরসূরির তালিকায় আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের কেউ কেউ থাকতে পারেন বলেও চর্চা চলেছে। কারণ, তাঁদের সঙ্গে রাজনীতির রং মাখা সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের যোগাযোগও স্পষ্ট। তাই শহর লাগোয়া জেলা কিংবা শহরাঞ্চলে বিরোধী দলের হয়ে সেই জুনিয়রদের কাউকে দেখা যেতে পারে বলেও অনুমান অনেক সিনিয়র চিকিৎসকের। তাঁদের কথায়, “বহু সময়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার পাশাপাশি সমাজসংস্কারের আওয়াজ তুলছেন। তাতে সূক্ষ্ম ভাবে হলেও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হচ্ছে।”

শুধুই কি বিরোধী দল? ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কাউকে আবার শাসক দল তুলে নেবে কি না, সেটাও জল্পনা থেকে বাদ যাচ্ছে না। রাজনৈতিক মহলের এটাও পর্যবেক্ষণ, ভোটের ময়দানে সরাসরি না নামলেও, আন্দোলনকে জাগিয়ে রাখার কারিগর হিসেবে কেউ আবার রাজনীতির ‘কিং মেকার’ হওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছেন।

সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, “ন্যায্য দাবি ছিনিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের যে পন্থা স্থির করা হয়েছে, তা জুনিয়রদের একেবারেই নিজেদের সিদ্ধান্ত বলে মনে হয় না। পরোক্ষ ভাবে হলেও, একটি শ্রেণি ভবিষ্যতের রাজনীতির খেলায় ওঁদের বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করতে এই সিদ্ধান্তের বীজ বপন করেছেন।” প্রথম থেকে আন্দোলনের সমর্থক ওই চিকিৎসকেরা এ-ও বলছেন, “সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করতে সফল লোকজনকে রাজ্যের যে কোনও ভোটের ময়দানে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।” যদিও, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, “রাজনৈতিক অভিসন্ধি আমাদের নেই। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ঢুকেছে, তারই প্রতিফলন আর জি কর থেকে অন্যত্র। সেই সূত্রেই সমাজ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Protest West Bengal Politics Elections

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy