Advertisement
০৮ মে ২০২৪

পড়তে পারব তো, সংশয়ে লোকনাথরা

কারও বাবা দিনমজুর, কারও বাবার রয়েছে এক চিলতে ছোট্ট দোকান। মাস গেলে নিশ্চিত কোনও আয় নেই। যাতে একটু সুরাহা হয়, সে জন্য মাঝেসাঝেই কাজে হাত লাগাতে হয়েছে ছেলেদেরও। কিন্তু তার মধ্যেই ওদের পড়াশোনার জেদটা নজর কেড়েছিল শিক্ষকদের। শিক্ষকদের নিরাশ করেনি কসবা রাধারানি বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন পড়ুয়া। সব বাধা পেরিয়ে এ বারের মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে তারা।

বাঁ দিক থেকে, লোকনাথ বাগদি, প্রণব মল্লিক, মহম্মদ আলি খান।— নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিক থেকে, লোকনাথ বাগদি, প্রণব মল্লিক, মহম্মদ আলি খান।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বুদবুদ: শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

কারও বাবা দিনমজুর, কারও বাবার রয়েছে এক চিলতে ছোট্ট দোকান। মাস গেলে নিশ্চিত কোনও আয় নেই। যাতে একটু সুরাহা হয়, সে জন্য মাঝেসাঝেই কাজে হাত লাগাতে হয়েছে ছেলেদেরও। কিন্তু তার মধ্যেই ওদের পড়াশোনার জেদটা নজর কেড়েছিল শিক্ষকদের। শিক্ষকদের নিরাশ করেনি কসবা রাধারানি বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন পড়ুয়া। সব বাধা পেরিয়ে এ বারের মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে তারা।

পরেশ বাগদি পেশায় দিনমজুর। বাড়িতে ছেলে লোকনাথ-সহ পাঁচ জন সদস্য। পরেশবাবু জানান, উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও প্রতিদিনের ভাত জুটবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা থাকে। প্রতিদিন কাজও জোটে না। কিন্তু বাড়ির এই পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েনি লোকনাথ। এ বারের মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে সে। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার। তবে ছেলেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য নেই বলে জানিয়েছেন পরেশবাবু। বাবার অবস্থা দেখে লোকনাথও পরিকল্পনা বদলে ফেলেছে। তার কথায়, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হলে বাইরের স্কুলে যেতে হবে। কিন্তু অত টাকা নেই। তাই ঠিক করেছি পুরনো স্কুলেই পড়ব।’’ তবে স্কুলের শিক্ষকেরা বই, খাতা থেকে শুরু করে পোশাক, সবই জুগিয়েছেন বলে জানায় লোকনাথ।

লোকানাথের বন্ধু প্রণব মল্লিকের বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। প্রণবেব বাবা দীপকবাবুর কাঁকসার রাজবাঁধে একটি ছোট স্টেশনারি দোকান রয়েছে। মাস গেলে যা আয় হয়, তাতে ছেলের পড়াশোনা তো দূরঅস্ত, কী ভাবে ভাত জুটবে তা নিয়েই চিন্তা করতে হয় বলে জানান দীপকবাবু। ছেলে অবশ্য বাড়ির হাল দেখে দমে যায়নি। মাধ্যমিকে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। ভবিষ্যতে ছেলের পড়াশোনা কী ভাবে চলবে তা নিয়ে মহা চিন্তায় দীপকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন তো স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যে চলল। এ বার কী হবে!’’ প্রণবের গলাতেও সংশয়, ‘‘পড়তে পারব তো।’’

স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যেই ভাল ফল করেছে মহম্মদ আলি খানও। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৫ শতাংশ। ছেলেটির বাবা নাসের আলির খানের একটি পুরনো বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম সারানোর দোকান রয়েছে। নাসের জানান, ‘‘নামেই দোকান। যা আয় হয়, তা সংসার-খরচ সামলাতেই শেষ হয়ে যায়।’’ ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তিনি।

তবে স্কুলের শিক্ষকেরা এই তিন ছাত্রকে প্রায়শই বই, খাতার মতো শিক্ষা সরঞ্জাম জুগিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক কাকলি সাঁতরা, অনুপ ঘোষদের বক্তব্য, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি ওদের পাশে থাকতে।’’ স্কুলের শিক্ষক বিন্দুকুমার ঘোষের আবেদন, ‘‘কোনও ভাবেই যাতে অর্থের অভাবে ওদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’’ নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loknath madhyamik students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE