Advertisement
E-Paper

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেই মারা গেলেন মাম্পি!

মাম্পির শ্বশুরমশাই স্বপন দাস বসিরহাটের বনাধিকারিক। তাঁর ছোট ছেলে রমেন্দুর স্ত্রী মাম্পি। তাঁদের একমাত্র মেয়ে আরিয়ার বয়স মাত্র চার। বাড়ির লোকজন কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। মাম্পির ভাসুর শিবেন্দুর আফসোস, ‘‘হয় তো হাসপাতাল থেকে না আনলেই ভাল ছিল।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৬
জ্বরে মৃত টুম্পা দাস।

জ্বরে মৃত টুম্পা দাস।

তরুণীর গায়ে জ্বর। বেসরকারি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। গিয়েছিলেন বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হতে। দেখেন, সেখানে গাদাগাদি ভিড়। একই বেডে শুয়ে তিন-চারজন। মেঝেতেও তিলধারণের জায়গা নেই। সেখানেই স্যালাইন দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল টুম্পা দাস ওরফে মাম্পিকে (২০)।

বাড়ি যাবেন বলে কান্নাকাটি জুড়ে দেন তিনি। বাড়ির লোকেরও মনে হয়েছিল, এই অবস্থায় ফেলে না রেখে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলুক। রবিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে বন্ড সই করে বড়জিরাকপুরের দাসপাড়ার বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় মাম্পিকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘন ঘন বমি-পায়খানা শুরু হয়। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। মাম্পিকে ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন আত্মীয়েরা। তার আগেই, রাত ১০টা নাগাদ মৃত্যু হয় মাম্পির।

মাম্পির শ্বশুরমশাই স্বপন দাস বসিরহাটের বনাধিকারিক। তাঁর ছোট ছেলে রমেন্দুর স্ত্রী মাম্পি। তাঁদের একমাত্র মেয়ে আরিয়ার বয়স মাত্র চার। বাড়ির লোকজন কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। মাম্পির ভাসুর শিবেন্দুর আফসোস, ‘‘হয় তো হাসপাতাল থেকে না আনলেই ভাল ছিল।’’

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ছাড়াও জ্বরের প্রকোপে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে নানা প্রান্তে। স্থানীয় মানুষজনের দাবি, গত দু’মাসে বসিরহাট মহকুমায় ৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন।

রবিবার দুপুরে বাদুড়িয়ার তারাগুনিয়ার বাসিন্দা রমা মণ্ডলেরও (৫৫) মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ ‘ডেঙ্গি’ বলে মানতে চায়নি হাসপাতাল।

রমাদেবীর ছেলে রাজু বলেন, ‘‘রুদ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মাকে। সেখানে অক্সিজেন নেই বলে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মা মারা গিয়েছেন। মাত্র চার দিনের জ্বরেই সব শেষ হয়ে গেল।’’

জ্বরে ভুগে মৃত্যুর ঘটনায় বিরাম নেই দেগঙ্গাতেও। রবিবার রাতে মারা গিয়েছে এক কিশোরী। জ্বর ধামাচাপা চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার, এই অভিযোগ তুলে সোমবার বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করে বিজেপি।

দেগঙ্গার চৌরাশি পঞ্চায়েতের কোটাপাড়া বাসিন্দা রুকসানা খাতুনের (১২) জ্বর আসায় বৃহস্পতিবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিশ্বনাথপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। ওষুধপত্র দেন চিকিৎসকেরা।

জ্বর না কমায় রবিবার সকালে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ভর্তি করা হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা চলছিল। শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, সে দিকে চিকিৎসকেরা নজর দেননি বলে অভিযোগ রুকসানার বাড়ির লোকজনের। রবিবার রাত ১টা নাগাদ তাকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। গাড়িতে তোলার পথেই মারা যায় মেয়েটি। গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য মানছেন না হাসপালাত কর্তৃপক্ষ। উপচে পড়া রোগীর চাপ সামলাতে সাধ্য মতো চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

Dengue Mosquitoes টুম্পা দাস ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy