Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

একুশের পথে জন্ম নিল মমতা সরকার

২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে বাসের মধ্যেই এই ছোট্ট মমতার জন্ম দিয়েছেন বর্ধমানের রেখা সরকার।

মা রেখার কোলে সদ্যোজাত মমতা। ফাইল চিত্র

মা রেখার কোলে সদ্যোজাত মমতা। ফাইল চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আসার পথেই তার জন্ম। তাই বাবা-মা থেকে পরিজন, এমনকি প্রতিবেশীরা আদর করে তার নাম রাখলেন মমতা সরকার।

২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে বাসের মধ্যেই এই ছোট্ট মমতার জন্ম দিয়েছেন বর্ধমানের রেখা সরকার। বললেন, ‘‘দিদি-র জন্যই এই অবস্থাতেও চলে এসেছিলাম। কিন্তু বাসেই প্রসব হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি।’’ আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শুনেছি বাচ্চাটির ওজন খুবই কম। ডাক্তারেরা চেষ্টা করছেন। আমার এখন চিন্তা, কত তাড়াতাড়ি বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে ওঠে। ওরাই তো আমাদের সম্পদ।’’

বর্তমানে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-তে রয়েছে সদ্যোজাত মমতা। চিকিৎসকেরা জানান, সময়ের আগেই শিশুটির জন্ম হয়েছে। ওজন কিছুটা কম থাকায় তাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতালে ভর্তি রেখাও। মা ও সন্তান, দু’জনেই আপাতত সুস্থ।

বর্ধমানের ছোট নীলপুর আমবাগান এলাকার বাসিন্দা, দিনমজুর অধীর সরকারের স্ত্রী রেখা গত আট বছর ধরে ২১ জুলাই ধর্মতলা চত্বরে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ বারেও ছেদ ফেলতে চাননি এক ছেলের মা এবং সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূ। তাই রবিবার সকালে স্বামীর বারণ না শুনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে উঠে পড়েছিলেন দলের তরফে রাখা বাসে। শেষমেশ নাছোড়বান্দা স্ত্রীকে নিয়েই ধর্মতলা রওনা দেন অধীর। জানালেন, সকাল আটটায় বাস ছেড়েছিল বর্ধমান থেকে। পৌনে ১০টা নাগাদ বালি ব্রিজের কাছে পৌঁছতেই কোমরে যন্ত্রণা শুরু হয় রেখার। ক্রমে বাড়ে প্রসব যন্ত্রণা। ‘‘কোথায় হাসপাতাল, কোথায় স্ত্রীকে নিয়ে যাব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,’’— বলেন অধীর।

তিনি জানান, বাসে রেখা ছাড়া মাত্র দু’জন মহিলা আর বাকি সব পুরুষ যাত্রী ছিলেন। সকলের পরামর্শে বাসের পিছনের আসনে চাদর পেতে রেখাকে শোওয়ানো হয়। সকাল ১০টা নাগাদ টবিন রোডের কাছে বাস পৌঁছতেই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রেখা। অধীর বলেন, ‘‘দলের এক দাদা বরাহনগরের এক কাউন্সিলরকে ফোন করে সব জানান। তাঁর পরামর্শ মতো সকলের সহযোগিতায় স্ত্রী ও সন্তানকে কোনও মতে নামিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে হাসপাতালে যাই।’’

বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার জয়ব্রতী মুখোপাধ্যায় জানান, আগাম খবর পেয়ে তৈরি ছিলেন চিকিৎসকেরাও। সন্তানকে নিয়ে রেখা পৌঁছতেই তাদের ভর্তি করে নেওয়া হয়। নাড়ি কেটে, বাচ্চাটিকে পরিষ্কার করে প্রায় চার ঘণ্টা এসএনএসইউ-তে রেখে স্থিতিশীল করা হয়। মা ও সন্তানকে পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। রেখা সুস্থ থাকলেও ১ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের শিশুটির এসএনসিইউ-এর প্রয়োজন থাকায় তাকে পাঠানো হয় আর জি কর হাসপাতালে।

বিষয়টি জানতে পেরে সমাবেশ-স্থল থেকেই তড়িঘড়ি বরাহনগর হাসপাতালে পৌঁছে যান স্থানীয় চেয়ারম্যান পারিষদ দিলীপনারায়ণ বসু। পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে অধীর ও শিশুটিকে নিয়ে তিনি চলে আসেন আর জি করে। আর এক কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বরাহনগর হাসপাতালে পৌঁছে যান রেখার খোঁজখবর নিতে। অন্য দিকে শিশুটির এসএনসিইউ-এর প্রয়োজন রয়েছে জেনে, সমাবেশ শেষ হতেই সোজা আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে ডেপুটি সুপারের সঙ্গে কথা বলে তাকে ভর্তির বন্দোবস্ত করেন বরাহনগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাপস রায়। তিনি বলেন, ‘‘সকলের চেষ্টায় শিশুটির তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানে ওই মা যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে এসেছেন, তাঁকেও কুর্নিশ জানাই।’’

আর অধীর ও তাঁর প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘মমতা’ তাঁদের গর্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC Martyr's Day Woman Baby Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE