Advertisement
E-Paper

দরজা আটকে দিয়েছিল কন্ডাক্টর, কোচবিহারে বাস থেকে ঝাঁপ তরুণীর

নির্ভয়া বাঁচতে পারেননি। কন্ডাক্টর বাসের দরজা বন্ধ করে দিতেই সেই কথা মনে করে মুহূর্তে শিউরে উঠেছিলেন দিনহাটার তরুণী। আগুপিছু না ভেবে কোনও রকমে বাসের দরজা খুলে লাফ দিয়েছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নির্ভয়া বাঁচতে পারেননি। কন্ডাক্টর বাসের দরজা বন্ধ করে দিতেই সেই কথা মনে করে মুহূর্তে শিউরে উঠেছিলেন দিনহাটার তরুণী। আগুপিছু না ভেবে কোনও রকমে বাসের দরজা খুলে লাফ দিয়েছিলেন তিনি।

কোচবিহারের দেওয়ানহাটের বাসিন্দা ওই তরুণী ধূপগুড়িতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। শুক্রবার সন্ধে ৬টা নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহারগামী একটি বাসে তিনি কোচবিহার বাসস্ট্যান্ডে নামেন। বাসস্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে ছিল দিনহাটার বোর্ড লাগানো একটি বাস। একেবারে ফাঁকা বাস দেখে তাতে ওঠার ব্যাপারে দোনামনা করছিলেন তিনি। অভিযোগ, এই সময়ে এক বাসকর্মী রাস্তায় লোক তুলে নেওয়া হবে জানিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেন। তাতে বাসে উঠে পড়েন ওই তরুণী।

কিন্তু অভিযোগ, তরুণী বাসে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই আচমকা কন্ডাক্টর দরজা বন্ধ করে দেন। চালকও দিনহাটাগামী বোর্ড বদলে ‘রিজার্ভ’ বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। তাতে সন্দেহ হওয়ায় তরুণী বাস থেকে নামতে যান। কিন্তু ওই বাসকর্মী তাঁকে বাধা দেন। চালকও আচমকা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার শুরু করেন ওই তরুণী। কোচবিহার রাজবাড়ির কাছাকাছি এসে সম্ভ্রম বাঁচাতে কোনও রকমে দরজা খুলে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে রাস্তার ওপর মুখ থুবড়ে পড়েন। এলাকার লোকজনই ওই তরুণীকে উদ্ধার করে টোটো চাপিয়ে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ দিন বিকেলে কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় ওই তরুণীর দাদা লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে যে বাসে ওই ঘটনা ঘটেছে, এ দিন সন্ধে পর্যন্ত সেটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কিন্তু এমন মারাত্মক অভিযোগ পাওয়ার পরেও শনিবার সন্ধে পর্যন্ত পুলিশ হাসপাতালে যায়নি বলে অভিযোগ।

থানার এক আধিকারিক জানান, জেনারেল ডায়েরি হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্তকারী অফিসার সকলের সঙ্গেই কথা বলবেন।

মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় দু’পায়েই চোট লেগেছে ওই তরুণীর। ভেঙে গিয়েছে বাঁ পা। শনিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আতঙ্কের রেশ মুখে নিয়ে ওই তরুণী বলেন, “ফাঁকা বাস থেকে আমি নামতে চাইলেও বাধা দেওয়া হচ্ছিল। তাতে ওই বাসকর্মীদের উদ্দেশ্য নিয়ে আমার উদ্বেগ বেড়ে যায়। তাই প্রাণের মায়া ছেড়েই চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়েছিলাম। খাস কোচবিহার শহরে সন্ধেয় এমন ঘটনা হবে, ভাবতে পারছি না।” তরুণীর দাদা বলেন, “মারাত্মক ঘটনা। কুমতলব না থাকলে ওই বাস থেকে বোনকে নামতে ওরা বাধা দিল কেন? বিষয়টির যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।”

ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও কেন চিহ্নিত করা গেল না বাস বা অভিযুক্তদের? পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণী বাসের নম্বর, নাম কিছুই দেখতে পাননি। ফলে বাসটিকে চিহ্নিত করা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তরুণী অবশ্য বলেন, “বাসটা একটু পুরনো ছিল। রং ছিল সবুজ-সাদা মেশানো।” তাঁর পরিজনের প্রশ্ন, ‘‘ওই রুটে কতই বা বাস চলে যে, খুঁজতে এত সময় লাগবে?’’

পুলিশ জানিয়েছে, কোচবিহার-দিনহাটা রুটে দৈনিক গড়ে ৩৫টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। কোচবিহার ছাড়া দিনহাটা স্ট্যান্ড থেকেও কিছু বাস চলে। ওই সময়ে স্ট্যান্ডে কোন কোন বাস ছিল, তা দেখা হচ্ছে। অন্য কোনও রুটের বাসের নম্বর-প্লেট বদলে এমন কাণ্ড করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে। কোচবিহার জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক সঞ্জিত পণ্ডিত বলেন, “গুরুতর অভিযোগ। সাংগঠনিক ভাবে আমরাও ওই ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।”

Woman Bus Molestation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy