Advertisement
E-Paper

২২ হাজার টাকায় সদ্যোজাতকে বিক্রি

এই পরিস্থিতিতে ‘সুযোগ’ এসে যাওয়ায় দু’মাসের ছেলেকে অন্য এক পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির ওই দম্পতি। মিলেছিল নগদ ২২ হাজার টাকা। সঙ্গে ছেলের নতুন বাবা-মায়ের বাড়িতে গরম গরম মাংস-ভাত। 

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দু’মাসের কোলের ছেলেকে খেতে-পরতে দেবেন কী, এই ভেবে রাতের ঘুম উড়েছিল বাবা-মায়ের। আরও দুই ছোট ছোট সন্তান আগেই পৃথিবীর আলো দেখেছে। এ দিকে সংসারে আয় বলতে প্রায় কিছুই নেই। চেয়েচিন্তে সংসার চলে। গৃহকর্তাটি কিডনির অসুখে ভুগে কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে ‘সুযোগ’ এসে যাওয়ায় দু’মাসের ছেলেকে অন্য এক পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির ওই দম্পতি। মিলেছিল নগদ ২২ হাজার টাকা। সঙ্গে ছেলের নতুন বাবা-মায়ের বাড়িতে গরম গরম মাংস-ভাত।

চোখের জল মুছে সোমবার দুপুরে ফেরেন ছেলেকে ওই বাড়িতে রেখে। বছর ছ’য়েকের বড় ছেলেকে আরও দিন দু’য়েকের জন্য রেখে আসেন। অন্তত দু’টো দিন ভাল খাওয়া-দাওয়া জুটুক, চেয়েছিলেন বাবা-মা।

কিন্তু বাড়ি ফেরার পর থেকে চোখের জল বাধ মানে না মায়ের। বাবারও মুখ চুন। ছেলের কথাই মনে পড়ছে থেকে থেকে। কিন্তু টাকা নিয়ে ফেলেছেন। ছেলেকে ফেরত চাইতে গেলে লাভ হবে না ধরে নিয়ে তাঁরা হাজির হন থানায়।

পুলিশ কর্তারা প্রথমটায় ধমক-ধামক দেন। জানান, এমন বেআইনি কাজ করার জন্য ফাটকেও ঢুকতে হতে পারে। কিন্তু ওই দম্পতির হাপুস নয়নে কান্না দেখে তাঁরাও দমে যান। শীর্ণকায় প্রৌঢ় বলেন, ‘‘নিজেদেরই ভাল করে খাবার জোটে না। আরও একটা ছেলেকে কী খাওয়াব, তা ভেবেই এমন করে ফেলেছি। ভেবেছিলাম, পরিবারের একজন অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচুক। কিন্তু এখন দেখছি, ওকে ছেড়ে থাকা মুশকিল।’’ মায়ের চোখের জল তো বাঁধ মানতেই চায় না। তাঁর একটাই কথা, ‘‘ভিক্ষে করে হলেও বাঁচিয়ে রাখব ওকে। শুধু ফিরিয়ে এনে দিন।’’

পুলিশ যোগাযোগ করে রায়দিঘির বিডিও স্বাতী চক্রবর্তীর সঙ্গে। শুক্রবার সকলে মিলে যান ওই দম্পতির বাড়িতে। তাঁদের ইতিমধ্যেই একাধিক কন্যাসন্তান। পুত্রসন্তানের আশাতেই এমনটা ঘটিয়ে ফেলেছেন, দম্পতি জানান আধিকারিকদের।

কী ভাবে ঘটল দুই পরিবারের যোগাযোগ?

পুলিশ জানতে পেরেছে, চায়ের দোকানে বসে হা-হুতাশ করছিলেন ওই যুবক। বলছিলেন, উপরওয়ালার কৃপায় এতগুলো মেয়ে। কিন্তু কোলে ছেলে এল না। পাশে বসে সে কথা কানে আসে সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের বাবার। তিনি আড়ালে ডেকে নিজের পরিবারের কথা বলেন। বলেন, কিছু টাকা পেলে ছোট ছেলেকে নতুন বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে আপত্তি নেই।

কথাটা বাড়িতে এসে বুঝিয়ে বলেন স্ত্রীকে। বলেন, বাকি দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হলে টাকার দরকার। রাতারাতি রোজগার তো বাড়বে না। এটাই একমাত্র পথ।

পুলিশ-প্রশাসন শেষমেশ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে জন্মদাতা বাবা-মায়ের কাছে। সাড়ে ১৭ হাজার টাকাও ফেরত দিয়েছেন ওই দম্পতি। বিডিও কিনে দিয়েছেন খাবার-দাবার, পোশাক। জানিয়েছেন, যাতে সরকারি সমস্ত সাহায্য পায় গরিব পরিবারটি, তা দেখবেন।

এ দিকে, ‘ছেলে’ কোলে পেয়ে গত কয়েকটা দিন বড় আনন্দে কেটেছে ‘নতুন মায়ের’। এখন তাঁর মন যে হু হু করছে। বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম আইনি কাগজপত্র তৈরি করে ওকে দত্তক নেব। নতুন নাম দেব। এমন মায়া পড়ে গিয়েছে। ভাবিনি ওকে ছেড়ে থাকতে হবে।’’

এ ভাবে কাউকে আইনসঙ্গত ভাবে দত্তক নেওয়া যায় না, পরিবারটিকে বুঝিয়ে এসেছেন সরকারি আধিকারিকেরা।

Newborn Baby সদ্যোজাত রায়দিঘি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy