Advertisement
E-Paper

আগে কেন ঠেক ভাঙিনি আফসোস মহিলাদের

লাগোয়া দুই গ্রামের তিন পাড়ার মধ্যে দু’পাড়ার মহিলারা চোলাইয়ের ঠেক ভেঙেছেন বছর দু’য়েক আগে। প্রায় একই সময়ে একই চেষ্টা করেছিলেন রামগোপালপুর-করকনা বাউড়িপাড়ার মহিলারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০১
চোলাইয়ের ঠেকে ভাঙচুর মহিলাদের। মঙ্গলবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

চোলাইয়ের ঠেকে ভাঙচুর মহিলাদের। মঙ্গলবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

লাগোয়া দুই গ্রামের তিন পাড়ার মধ্যে দু’পাড়ার মহিলারা চোলাইয়ের ঠেক ভেঙেছেন বছর দু’য়েক আগে। প্রায় একই সময়ে একই চেষ্টা করেছিলেন রামগোপালপুর-করকনা বাউড়িপাড়ার মহিলারা। অভিযোগ, সে সময়ে চোলাই কারবারিদের সঙ্গে মিলে তাঁদের বাধা দেন পরিবারের পুরুষেরাই। চোলাই পান করে মঙ্গলবার এলাকার ছ’জনের মৃত্যুর পরে (হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩০) ফের সামনে আসছে সেই অভিযোগ। সঙ্গে আক্ষেপ, ‘‘বাধার মুখে পিছু না হটে ভাটিটা ভেঙে দিলে এ দিনটা দেখতে হতো না!’’

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পারাজ মোড় থেকে শিল্লাঘাট রোড ধরে আট কিলোমিটার গেলেই করকনা এবং রামগোপালপুর। এলাকার পুকুরের পাড় ধরে হাঁটলে নাকে আসে চোলাইয়ের ঝাঁঝালো গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেখানেই চলে চোলাই মজানো। নতুন বছরের প্রথম দিন (রবিবার) পিকনিকে যাওয়ার পথে করকনার বাউড়িপাড়ার ঠেক থেকে চোলাই খেয়েছিলেন এলাকার কিছু মানুষ। রবিবার রাত থেকে চোখে, বুকে জ্বালা, মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁদের অনেকের। সোমবার শুরু হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালে ছোটা।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যালে মারা যান বাউড়িপাড়ার মন্মথ বাউড়ি (২৮)। এ দিন সকালে রামগোপালপুরের সঞ্জয় রুইদাস (৩৫), সন্ন্যাসী রুইদাস (৪৪), রবীন্দ্রনাথ দাস বৈরাগ্য (৪৮) এবং করকনা গ্রামের সনাতন বাউড়ি (৪৬) ও কেষ্ট বাউড়ি (৪৭)। অসুস্থদের মধ্যে ছাব্বিশ জন গলসি ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, ৪ জন বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। ওই চোলাই-ভাটির মালিক আন্না বাউড়িকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়। গ্রামে যান বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ও জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। পুলিশ সুপার জানান, বেশ কয়েকটি ভাটি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চোলাই বিক্রির গুমটিগুলিও ‘সিল’ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে তাদের অনুমান, চোলাইয়ের বিষক্রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে ওই ছ’জনের। তবে জেলাশাসক বলেন, “ময়না-তদন্ত ও স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত ভাবে মৃত্যুর কারণ বলতে পারব।’’ এক কর্তা জানান, চোলাইয়ের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে ক্ষতিপূরণ বিবেচনায় আসবে।

২০১১ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে চোলাইয়ের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল একশো সত্তরেরও বেশি। তার পর থেকে চোলাই কারবারে রাশ টানতে নড়েচড়ে বসে বহু জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।

তবে এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, বছর দু’য়েক আগে তাঁদের এলাকায় সে দায়িত্ব নিয়েছিলেন রামগোপালপুর গ্রামের রুইদাসপাড়া আর বাগদিপাড়ার প্রমীলারা। নেশাগ্রস্ত পুরুষদের হাতে নিত্য মারধরে অতিষ্ঠ হয়ে আর চোলাইয়ের পিছনে সংসারের টাকা চলে যাওয়া ঠেকাতে তাঁরা ভেঙে দেন ওই দুই পাড়ার দু’টি ঠেক। সেগুলো বন্ধও হয়ে যায়। চালু ছিল শুধু বাউড়িপাড়ার ঠেকটি।

চেলাকাঠের বাড়ি মেরে এ দিন সেই ঠেকের চোলাই বানানোর পাত্র, জার ভাঙতে ভাঙতে বাউড়িপাড়ার মেনকা বাউড়ি, যমুনা বাউড়িরা বলে চলেন, ‘‘ঘরের লোকেরা অন্য পক্ষে ছিল। মেরেছিল আমাদের। ঠেক ভাঙা হয়নি। তাই এই সর্বনাশ!’’ চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন নন্দ মণ্ডল, মধু বাউড়িরা মানছেন সে কথা। বলছেন, ‘‘আর নয়। অনেক শিক্ষা হয়েছে।”

Hooch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy