Advertisement
E-Paper

খসড়া বিধি রুখতে কাজ বন্ধ যাদবপুরে

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া স্ট্যাটিউট বা বিধির বিষয়টি আর নিছক বিতর্কের স্তরে আটকে থাকল না। তা নিয়ে শুরু হয়ে গেল আন্দোলনও। প্রস্তাবিত বিধির বিরোধিতা করে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করল শিক্ষক সংগঠন আবুটা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৫

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া স্ট্যাটিউট বা বিধির বিষয়টি আর নিছক বিতর্কের স্তরে আটকে থাকল না। তা নিয়ে শুরু হয়ে গেল আন্দোলনও। প্রস্তাবিত বিধির বিরোধিতা করে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করল শিক্ষক সংগঠন আবুটা। উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনের সূচনা করল শিক্ষকদের অন্য সংগঠন জুটা-ও। ওই বিধি রুখতে ৩১ অগস্ট ফের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নতুন বিধিতে বেশ কিছু সংযোজন নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষা শিবির। ২০১৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশোধিত বিধি পাঠান আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দফতরে। পদাধিকারবলে আচার্যের সচিবই উচ্চশিক্ষা দফতরেরও সচিব। তাই ওই বিধি তাঁর কাছেই পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে যে-বিধিটি শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত পাঠানো হয়, তাতে কিছু সংযোজন করা হয়েছে।

বিতর্ক-বিবাদ শুরু হয়েছে মূলত সেই সংযোজিত অংশ নিয়েই। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের কেউ সংবাদমাধ্যমে সরকারি নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত পর্যন্ত করার বিধানও দেওয়া হয়েছে খসড়া বিধিতে।

কে বা কারা খসড়া বিধিতে ওই অংশটি সংযোজন করলেন, তা নিয়ে রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য যে-দু’টি জায়গায় সংযোজনের কাজটি হয়ে থাকতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের ধারণা, সেগুলো হল রাজভবন ও নবান্ন। কিন্তু বিধি-বিতর্ক আরও উস্কে দিয়ে আচার্য ত্রিপাঠী বলে দিয়েছেন, ‘‘বিধিতে ওই অংশ সংযোজন সম্পর্কে রাজভবন আদৌ ওয়াকিবহাল নয়। রাজ্য সরকারই ওই অংশ সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে।’’ আচার্য শিক্ষা দফতরের কাঁধে এই সংযোজনের দায় চাপালেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সকলেই ভাবছে, আমরা (সংযোজন) করেছি। কিন্তু আমাদের করণীয় কিছুই নেই। আমি তো পুরোটা (বিধি) পড়েও দেখিনি। আমার পক্ষে সম্ভবও নয়।’’

যাদবপুর সূত্রের খবর, বিধি কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যে-বিধি পাঠিয়েছিল, তাতে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও শাস্তির প্রসঙ্গটি ছিল না। তা হলে কে বা কারা ওই অংশটি জুড়ে দিলেন, তা নিয়ে চাপান-উতোর চলছে।

যাদবপুরের শিক্ষকদের বক্তব্য, এই ধরনের বিধি সংযোজনের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে সুরাহার কোনও আশ্বাস পাননি তাঁরা। এমনকী বিধিতে এমন সংযোজনের প্রস্তাব কে বা কারা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আচার্য-রাজ্যপাল বা শিক্ষামন্ত্রী কোনও রকম আলোকপাত করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মী-আধিকারিকদের বক্তব্য, রাজভবন এবং উচ্চশিক্ষা দফতর ছাড়া আর কোথাও তো খসড়া বিধি যাওয়ারই কথা নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, আচার্য বা শিক্ষামন্ত্রী যদি সংযোজন সম্পর্কে অবহিত না-হন, তা হলে এই কাজ কার? বা কাদের? ধোঁয়াশা বেড়়েছে বই কমেনি। তাই কর্মবিরতির পথ নিয়েছেন তাঁরা।

জুটা-র সদস্যেরা এ দিন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি পেশ করেন। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে সেখানে বিধির বিষয়টি উত্থাপনের দাবিও জানান। সংগঠনের সভানেত্রী নীলাঞ্জনা গুপ্ত জানান, উপাচার্য যত দ্রুত সম্ভব কর্মসমিতির বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ‘‘বৈঠক চলাকালীন বাইরে অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছি আমরা,’’ বলেন নীলাঞ্জনাদেবী। কর্মসমিতির বৈঠক চলা পর্যন্ত তাঁদেরও বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে বলে জানান আবুটা-র আহ্বায়ক গৌতম মাইতি। ‘‘আমরা চাই, সব শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মী এই আন্দোলনে যুক্ত হোন,’’ বলেন গৌতমবাবু। অন্য এক শিক্ষক সংগঠন ‘ডেমোক্র্যাটিক টিচার্স ফর অটোনমি অ্যান্ড অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম’-ও ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।

বসে নেই ছাত্রছাত্রীরাও। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি ছাত্র সংগঠন র‌্যাডিক্যাল এবং ইউএসডিএফের সদস্য-সমর্থকেরা খসড়া বিধি পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদে সামিল হন।

Conflict Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy