নানা স্কুলে ভিড় স্কুল উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র জোগাড় করার জন্য। লম্বা লাইন ডোমিসাইল (আবাসিক) শংসাপত্র বার করতেও। পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার আগে থেকে যে ভাবে শংসাপত্র বার করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে, তা দেখে আজ রাজ্যের ২০০২-এর তালিকায় নাম না থাকা ভোটারদের নথি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানালেন বিজেপি নেতারা। পাশাপাশি তৃণমূল যে ভাবে এসআইআর প্রক্রিয়ায় ‘বাধা দেওয়ার চেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে, ‘বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)-দের ভয়’ দেখাচ্ছে, তাতে বিএলও-দের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সওয়াল করেন বিজেপি নেতৃত্ব।
চলতি সপ্তাহ থেকেই বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ফর্ম দেওয়ার কাজ শুরু করবেন বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)-রা। তার আগে আজ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও বাংলার দায়িত্বে থাকা দুই কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব দেব ও অমিত মালবীয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে অমিত বলেন, ‘‘বিএলও-রা যাতে নথি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পড়শি দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কাছে অনেক নথি রয়েছে। কিন্তু কমিশনের তালিকা করে দেওয়া বারোটি নথি ছাড়া অন্য কোনও নথি যেন গ্রাহ্য করা না হয়, সে দিকটিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে কমিশনকে।’’
এসআইআর শুরু হতেই আন্দোলনে নেমেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আগামিকাল পথে নামার কথা রয়েছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আজ এ প্রসঙ্গে অমিত বলেন, ‘‘সেটাই স্বাভাবিক। কারণ পড়শি দেশের ভোটারদের নাম যদি বাদ যায়, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভোটব্যাঙ্ক হারাবেন। তাই ওই সব অবৈধ ভোটারদের আশ্বস্ত করতেই পথে নামছেন মমতা।’’ পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধ নথি বানানোর কেন্দ্র গড়ে উঠেছে বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের শিলিগুড়ি, সোনারপুর, বারাসত ও মধ্যমগ্রামে জাল নথি বানানোর কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখানকার জাল নথি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, অবৈধ নথির পাশাপাশি অনেক আধিকারিকের নথি বানানোর অধিকার না থাকলেও তাঁরা সেই শংসাপত্র জারি করছেন। যা তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। ওই বিষয়টিও কমিশনকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজ্যে বিএলও-দের কোথাও সরাসরি আবার কোথাও প্রচ্ছন্ন ভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দলের দিকে। তাই বিএলও-রা যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বা দরকারে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি তুলেছেন শমীকেরা। শমীক বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতা থেকে পঞ্চায়েতের সদস্যেরা যে ভয় দেখাচ্ছেন, তা কমিশনের গোচরে আনা হয়েছে।’’
শমীকের কথায়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বারোটি রাজ্যে এসআইআর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কিন্তু বাকি একটি রাজ্যেও এ নিয়ে কোনও প্রতিবাদ মিছিল বা রাজনৈতিক উত্তাপ দেখা যাচ্ছে না। ওই বিজেপি নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘কারণ, তৃণমূল জানে ওই ভুয়ো তালিকার উপর নির্ভর করছে তাদের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি। ২০০৫ সালে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিলেন। আমরা সেই বিষয়টি নিয়ে মমতার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, সে সময়ে তিনি কী বক্তব্য রেখেছিলেন আর এখন কাদের সমর্থনে কথা বলছেন!’’ শমীকের দাবি, ‘‘যত বিরোধিতাই হোক, রাজ্যে এসআইআর হবেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ভাবেই তা আটকাতে পারবেন না।’’ কমিশনের কাছে এসআইআর করার জন্য ভয়হীন পরিবেশ তৈরির করার দাবিও জানানো হয়েছে। কমিশনও প্রয়োজনীয় আশ্বাস দিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)