Advertisement
E-Paper

উপাচার্য কি ঐতিহ্যের যোগ্য, প্রশ্ন যাদবপুরেই

সরকার তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছে আপ্রাণ। পুলিশকেও পেয়েছেন পাশে। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী উপাচার্য হওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা আদৌ অভিজিৎ চক্রবর্তীর রয়েছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্ন। আর তা উঠেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেরই প্রশ্ন, এই যোগ্যতা নিয়ে স্থায়ী উপাচার্য হওয়ার দৌড়েই বা তিনি সামিল হন কী ভাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৫২

সরকার তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছে আপ্রাণ। পুলিশকেও পেয়েছেন পাশে। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী উপাচার্য হওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা আদৌ অভিজিৎ চক্রবর্তীর রয়েছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্ন। আর তা উঠেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেরই প্রশ্ন, এই যোগ্যতা নিয়ে স্থায়ী উপাচার্য হওয়ার দৌড়েই বা তিনি সামিল হন কী ভাবে?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, স্থায়ী উপাচার্য পদে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার তাগিদ থেকেই পুলিশ ডেকেছিলেন অভিজিৎবাবু। তবে যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য তাঁর সমালোচকদের উদ্দেশে বলেছেন, “আমি কী চাইছি না চাইছি সেটা যাঁরা আগাম ধরে নিয়েছেন, তাঁরা মূর্খের দল।”

অভিজিৎবাবুর কয়েকটি সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ বা নাক-এর পরিদর্শক দলকে ট্যাবলেট উপহার দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অভিজিৎ। নাক পরিদর্শক দলের প্রধান সেই ট্যাব অভিজিৎবাবুর হাতেই ফেরত দিয়ে গিয়েছিলেন। আবার ভক্তবালা বিএড কলেজে ভর্তি কেলেঙ্কারির তদন্ত দলের প্রধান হয়ে নিরপেক্ষতা বজায় না-রাখার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সমালোচকেরা বলেন, শাসক দলের আনুগত্য প্রমাণ করতে নিজে নীল টাই-সাদা জামা পরা যেমন পছন্দ করেন, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি ভবনকেও নেত্রীর পছন্দের নীল-সাদা রঙে সাজিয়েছেন অভিজিৎবাবু। আবার পশ্চিবমঙ্গ উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকার সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চেও হাজির ছিলেন তিনি। এমন ‘ঘোষিত’ তৃণমূল সমর্থককে স্থায়ী উপাচার্য করা হবে কেন, সেই প্রশ্নই আবার উঠেছে। তবে তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য।

যাদবপুরে প্রথম দফায় অস্থায়ী উপাচার্য হয়ে আসার আগে শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-র শিক্ষক পদে ছিলেন অভিজিৎবাবু। ২০১১ সালে যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে রাজ্য সরকার তাঁকে যে নিয়োগপত্রে দেয়, তাতে রাজ্যপালের নয়, সই ছিল তৎকালীন উচ্চশিক্ষা সচিব সতীশ তিওয়ারির। গত বছর তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর সময়ে অভিজিৎবাবুকে নিয়োগ করতে রাজ্যপাল রাজি ছিলেন না এমনটাই খবর রাজভবনের অন্দরের। শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফে অনুরোধ করে রাজ্যপালকে নিয়োগপত্রে সই করানো হয়েছিল। এমন অভিযোগ অবশ্য অভিজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠরা উড়িয়ে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফায় অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার সময়ে অন্য একটি প্রশ্নও উঠেছিল সার্চ কমিটি যাঁকে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে সুপারিশই করেনি, তেমন এক জনকে সরকার কেন ওই পদে বসাতে উঠে পড়ে লেগেছে? রাজ্য ও অভিজিৎবাবু অবশ্য এই বিতর্ক গায়ে মাখেননি।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

যাঁরা উপাচার্য হিসেবে অভিজিতবাবুর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের যুক্তি, উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়া এবং সেই দায়িত্ব সামলানো দুই বিষয়েই পূর্বসুরিদের থেকে বহু পিছিয়ে রয়েছেন অভিজিৎবাবু। এমনকী তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাও অন্যদের তুলনায় কম বলে এই শিক্ষকদের যুক্তি। যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে অভিজিৎবাবুর ইস্তফা দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। আগেও বহু বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিজিৎবাবু। মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পরে তিনি এখন যোগ্যতার প্রশ্নে এই নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিজিৎবাবু নিজে অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, “এখন একটু ব্যস্ত আছি।”

অভিজিৎবাবুকে নিয়ে কী বলছেন প্রবীণ শিক্ষকেরা? তাঁদের বক্তব্য, অভিজিৎবাবু দুর্গাপুরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্নাতক। তাঁর সিভি বলছে, ১৯৭৮ সালে ওই কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন তিনি। সেই সময় জয়েন্ট এন্ট্রান্সে একেবারে সামনের সারিতে থাকা ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতেন যাদবপুর বা শিবপুরের বি ই কলেজে। এই দু’টিতে সুযোগ না পেলে তবেই তাঁরা দুর্গাপুরের আর ই কলেজে পড়তে যেতেন ।

যাদবপুরের এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, “উপাচার্য পদটি প্রশাসনিক ঠিকই। কিন্তু যাদবপুরের মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য যিনি হবেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাটাও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচিত হওয়া দরকার।” উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “উনি তো অত্যন্ত দক্ষ ভাবে যাদবপুরের কাজকর্ম সামলাচ্ছেন!” শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎবাবুর প্রশংসা করেছেন। মঙ্গলবারের ঘটনার পরেও উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। যদিও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিজিৎবাবুর অপসারণ চেয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসও।

পুলিশ ডেকে ঘেরাওমুক্ত হয়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই অভিজিৎবাবু এখন কোণঠাসা। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, প্রাক্তনী, অবসর নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যেও তাঁর পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। তাঁকে অপসারণের দাবিতে আচার্য রাজ্যপালের কাছে দরবার করার কথাও ভাবছেন অনেকে। তবে এ দিনও অভিজিৎবাবু জানিয়েছেন, তিনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। না হলে প্রাণে মারা পড়তেন।

abhijit chakrabarty jadavpur university student clash tmc police traditions Vice Chancellor state news online state new
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy