বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক। ছবি: দীপঙ্কর দে।
কলকাতা থেকে ডানকুনি হয়ে পালসিট যাওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। বেশি খরচ হলেও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে এই রাস্তাই পছন্দ মানুষজনের। কিন্তু দুর্ঘটনার নিরিখে সেই রাস্তাই এখন সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নানা সময়ে। বিশেষত রাতের বেলায়। চালক থেকে সওয়ারি কারও কাছে এক্সপ্রেসওয়ে যে বিশেষ নিরাপদ নয়, তা মানছেন ওই পথে কাজের সুবাদে নিত্য যাতায়াতকারীরাই।
কিন্তু কেন?
দুর্ঘটনার জন্য এক সময় মুম্বই রোডের অখ্যাতি ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। যদিও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ছবিটা আদপেই বদলানো যায়নি। বস্তুত, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকে ডানকুনি হচ্ছে কলকাতায় ঢোকার অন্যতম প্রধান মুখ। কিন্তু কলকাতায় ঢোকার জন্য মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রে সময়সীমার নানা বাধ্যবাধকতা আছে। কলকাতার দূরের জেলা বাঁকুড়া, বীরভূম বা বর্ধমানের গাড়িগুলো অনেক সময় ডানকুনিতে অনেক আগে চলে আসে। কিন্তু ডানকুনিতে পৌঁছনোর বেশ কয়েক ঘন্টা পরে হয়তো কলকাতা অভিমুখে যাওয়ার ছাড়পত্র পাবেন চালকেরা। আর তাই অগত্যা অপেক্ষা। আর এই অপেক্ষাই এখন ঘোরতর সমস্যা এই এক্সপ্রেসওয়ের। অপেক্ষার জন্য নিময়মাফিক লে-বাই রয়েছে রাস্তায়। তিরিশ কিলোমিটার অন্তর চালকদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগার সমেত এক্সপ্রেয়ওয়েতে এই সমস্ত লে-বাই রয়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। অধিকাংশ মালবাহী গাড়ির চালকেরাই কলকাতার কাছাকাছি অপেক্ষা করতে চান। কারণ, তা হলে যানজট-সহ অন্যান্য ঝামেলা দ্রুত এড়িয়ে কলকাতায় ঢুকে পড়া যাবে।
আর এই তাগিদাটাই এক্সপ্রেসওয়ের বিপদ বাড়াচ্ছে বলে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির একটি সূত্রের খবর। যত্রতত্র মালবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ছে ডানকুনির আগে। দ্রুতগামী গাড়ির চালকেরা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেইসব দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারছে। প্রাণহানি ঘটছে মানুষের। আবার ব্যবসায়ীরাও সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে এই রাস্তার। কলকাতায় বড় বড় মালবাহী ট্রেলার ঢোকার বিধিনিষেধ রয়েছে। তার ফলে ডানকুনি পর্যন্ত এসে সেই সব মাল খালাস করে অপেক্ষাকৃত ছোট গাড়িতে কলকাতায় পাঠাতে হয়। বিপত্তি সেখানেও। ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই সেই কাজে ট্রাক টার্মিনাল ব্যবহার করেন না। রাস্তার উপর কুলি দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গাড়ি খালাস করানো হয়। তার জেরে রাস্তার উপর অনিবার্যভাবে চাপ বাড়ে। বহু বড় গাড়ির ডিলার স্রেফ রাস্তার উপর গাড়ি খালাস করেন নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে। এ সব কাজের নেপথ্যে বড় বড় ব্যবসায়ীর মাথা থাকায় পুলিশ-প্রশাসনও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সিঁটিয়ে থাকে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। তবে বেপরোয়া নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িচালনাও বহু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন ন্যশন্যাল হাইওয়ে অথরিটির এক শ্রেণির অফিসার।
ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটির দুর্গাপুর বিভাগের এক পদস্থ কর্তা জানান, ডানকুনি থেকে পালসিট যাওয়ার পথে অনেক ‘ডাইভারসান’ রয়েছে। যেখান দিয়ে লেন পরিবর্তন করা যায়। আর তাতে এই রাস্তায় পদে পদে বিপদ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে শীঘ্রই। তার উপর এই পথে বিশেষত গ্রাম লাগোয়া জায়গায় বেশ কিছু আন্ডারপাশের দাবি রয়েছে। সেইসব দাবির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশপাশি মানুষের সচেতনা বাড়াতে সেমিনারের আয়োজন করা হবে।
এখন দুর্ঘটনা এড়াতে এক্সপ্রেসওয়েতে কর্তৃপক্ষের দাওয়াই কতটা কার্যকর হয় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy