Advertisement
E-Paper

তরুণীকে অ্যাসিড-হামলায় দোষী যুবক

সবার এখন একটাই চিন্তা, সাজা কত বছরের হয়! আইনজীবীদের মধ্যেও অঙ্কন বিশ্বাস নানা বাধা ঠেলে উঠে আসা প্রান্তিক শ্রেণির প্রতিনিধি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫১
লড়াকু: সঞ্চয়িতা যাদব

লড়াকু: সঞ্চয়িতা যাদব

অ্যাসিড হামলায় নষ্ট হওয়া ডান চোখে হাল্কা কাজল পরে এসেছিলেন ২৯ ছুঁই-ছুঁই তরুণী। চাপা উৎকণ্ঠা নিয়েই বসেছিলেন ব্যারাকপুর আদালতে এজলাসের কোণে।

শুক্রবার ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক মিন্টু মল্লিক এক বার খোঁজ করলেন, অ্যাসিড হামলার শিকার মেয়েটি কি এসেছেন? উঠে দাঁড়ালেন সঞ্চয়িতা যাদব। বিচারক এর পরেই কাঠগড়ায় ডাকেন অভিযুক্ত যুবক সৌমেন সাহাকে। জানতে চান, কে কে আছে তার বাড়িতে। সৌমেন মা, বাবা এবং ভাইয়ের কথা বলেছিল। বিচারক এর পরেই জানান, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

আগামী সোমবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৬এ ধারায় সাজা ঘোষণা হবে সৌমেনের। সঞ্চয়িতার দুই আইনজীবী, ইন্দ্রজিৎ দে এবং অঙ্কন বিশ্বাসের মতে, এর ফলে ন্যূনতম দশ বছর থেকে সর্বাধিক যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। গত সাত বছর ধরে অ্যাসিড হামলার আতঙ্ক বয়ে বেড়ানো সঞ্চয়িতা এর পরে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

২০১৪-র ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে দমদম শেঠবাগানের কথা। সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার বদলা নিতে সঞ্চয়িতাকে অ্যাসিড ছুড়েছিল সৌমেন। উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর জীবন শেষ করে দেওয়া। ঘটনার চার বছর পরে গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত। সোনারপুরের গোপন ডেরায় পুলিশ সৌমেনকে ঘিরে ফেলার পরে সে জলে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে যায়। তবে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। সৌমেনকে শনাক্ত করতে তাঁকে ডেকেছিল দমদম থানার পুলিশ। অপরাধীকে সামনে পেয়ে রাগ চেপে রাখতে পারেননি সঞ্চয়িতা। সপাটে সৌমেনকে পর পর চড় কষাতে থাকেন তিনি। পুলিশ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায়।

এর পরে বাঁচার নাছোড় জেদে সঞ্চয়িতার জীবন বয়েছে অন্য খাতে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজের সূত্রে তিনি নিজেই এখন তাঁরই মতো অনেক বিপন্ন মেয়ের সহায়। ডান চোখ অ্যাসিড হানায় নষ্ট হয়েছে। অন্তত সাতটি অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে তাঁকে। আদালতে লড়াই করে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও তিনি পেয়েছেন। আরও ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ সঞ্চয়িতা। ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেছেন। ঢাকুরিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন তাঁর স্বামী শুভ্র। দমদমে শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামীর সঙ্গে থাকেন সঞ্চয়িতা। এ বছরের শেষে তাঁর মা হওয়ার কথা।

এ দিন সঞ্চয়িতা বলছিলেন, “বুঝতে পারছিলাম, এজলাসে সৌমেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমার ভিতরেও চাপা টেনশন ছিল, রায়ে কী হবে! কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে না-দিতে কঠিন চোখে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলাম।’’ রায়ের সুখবরটা পেয়েই সঞ্চয়িতা ফোন করেন তাঁর সহকর্মী, আর এক লড়াকু নারী অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায় বসুকে। স্বামীকে খুনের মিথ্যা অপবাদে ১৩ বছর জেল খেটে যিনি এখন সুপ্রিম কোর্টে বেকসুর খালাস। ২০১৯-এ মাকে হারানোর পরে সক্রিয় সমাজকর্মী ‘অপরাজিতাদি’ই এখন সঞ্চয়িতার অভিভাবক। এর পরে বর শুভ্রকেও সব জানান সঞ্চয়িতা।

সবার এখন একটাই চিন্তা, সাজা কত বছরের হয়! আইনজীবীদের মধ্যেও অঙ্কন বিশ্বাস নানা বাধা ঠেলে উঠে আসা প্রান্তিক শ্রেণির প্রতিনিধি। তিনি এক জন রূপান্তরকামী পুরুষ। অঙ্কনের মতে, “এই ধরনের মামলায় অ্যাসিড হামলার শিকার মেয়েদের জন্য নিরাপত্তার একটা ভয় অনেক পরেও বয়ে বেড়াতে হয়। তাই সাজার মেয়াদ দীর্ঘ হওয়াই স্বস্তির।’’

তবে সঞ্চয়িতা সুবিচার পেলেও এ রাজ্যে অ্যাসিড-আক্রান্তদের বেশির ভাগই ততটা ভাগ্যবতী নন। মনীষা পৈলানের মতো অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই উল্টো অভিজ্ঞতাও ঘটেছে। সঞ্চয়িতা অবশ্য পিছনে ফিরতে চান না। ‘‘আজ তাড়াহুড়োয় ভাল করে সেজে আসতে পারিনি। আমি ভাল আছি— এই বার্তা আরও জোরালো ভাবে দিতেই রায় ঘোষণার দিনে খুব সেজে আসব,’’ দু’চোখে জ্বালা মেখে তাকিয়েই হেসে বলছেন তিনি।

Acid Attack Barrackpore Acid Attack Victim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy