Advertisement
E-Paper

ফেসবুকে মন্তব্য করে গ্রেফতার হাবড়ার কিশোর

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় অশান্তি বাধানোর চেষ্টার অভিযোগে ৬৭ ইনফর্মেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ও ৫০৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ওই নাবালকের বিরুদ্ধে। সোমবার বিধাননগরের জুভেনাইল আদালতে পাঠানো হয় ছেলেটিকে। 

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩০
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

কাশ্মীরে সেনা জওয়ানদের মৃত্যুতে নিজের কিছু মতামত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল হাবড়ার বাসিন্দা বছর আঠারো ছুঁই ছুঁই এক কিশোর। ভাবেনি, রাতারাতি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে বাড়ি থেকে।

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় অশান্তি বাধানোর চেষ্টার অভিযোগে ৬৭ ইনফর্মেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ও ৫০৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ওই নাবালকের বিরুদ্ধে। সোমবার বিধাননগরের জুভেনাইল আদালতে পাঠানো হয় ছেলেটিকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটি হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্টের পাশাপাশি আরও কয়েক জনের সঙ্গে প্রকাশ্যে ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিল সে। বাপ্পা রায় নামে এক যুবক রবিবার ওই নাবালক ও তার এক বন্ধুর বিরুদ্ধে এই মর্মে থানায় অভিযোগ করেন।

ওই কিশোর-সহ স্থানীয় কিছু তরুণ-তরুণী কাশ্মীর-কাণ্ডের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করেন। শনিবার পোস্টার নিয়ে পথেও নামেন। রবিবার রাতে হাবরা থানায় জড়ো হয়ে কিছু লোক এরই প্রতিবাদে সরব হয়। ছেলেটির বাড়িতে চড়াও হয়ে ভয় দেখানো হয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সে কথা অবশ্য মানছেন না ছেলেটির বাবা। তিনি বলেন, ‘‘কেউ হামলা করেনি। ফেসবুকের পোস্টটি তুলে নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু ব্যাপারটা থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াবে ভাবিনি।’’ তাঁর দাবি, ছেলে নিজের বুদ্ধিতে এ সব করেনি। ওকে দিয়ে করানো হয়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাবড়ায় মোমবাতি মিছিলে হেঁটেছেন ছেলেটির কাকা। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইপো নাবালক। বয়সে বড় কিছু ছেলেমেয়ে ওকে দিয়ে ফেসবুকে এ সব পোস্ট করিয়েছিল। সে কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’

সোমবার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘হাবরার ওই ঘটনায় পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে দেয়নি।’’

জওয়ানদের মৃত্যুতে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বনগাঁর শিক্ষক চিত্রদীপ সোম। তিনি জানান, রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিন দফায় আলাদা আলাদা দল তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছে। হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েও নিস্তার মেলেনি। বাড়িতে ভাঙচুর চলে। মোবাইল ক্যামেরা চালু রেখে হামলাকারীরা চিত্রদীপকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। মাটি ছুঁয়ে বলতে হয়, ‘ভারত মাতা কি জয়।’ সেই ভিডিয়ো ফেসবুকে আপলোডও করেছে কয়েকটি গ্রুপ। ফেসবুকে গালিগালাজ চলছে তাঁর নামে। রবিবার রাতে বনগাঁ থানায় চিত্রদীপের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছেন কয়েক জন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা, হুমকির কথা চিত্রদীপ মৌখিক ভাবে বনগাঁ থানাকে জানিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, পুলিশের কাছ থেকে ভরসা না পেয়ে রবিবার রাতেই বাড়ি ছেড়ে কার্যত পালিয়ে আসতে হয় তাঁদের। পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, রবিবার বনগাঁ থানা থেকে তিনবার ওই শিক্ষকের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গিয়েই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল।

সোমবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সিঁড়ির রেলিং, বিদ্যুতের মিটার বক্স, ঘরের জানলার কাচ, গেটের বাতিস্তম্ভ ভাঙা। বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারাও দেখা গেল না।

স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘কোনও বিষয় নিয়ে মত একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ আপত্তিকর মন্তব্য করলে আইনি পদক্ষেপ করা যেতে পারে। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়।’’

Youth Arrest Police Pulwama Attack Facebook
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy