Advertisement
০৫ মে ২০২৪

চোর সন্দেহে মারে মৃত্যু যুবকের, ধৃত

জঙ্গলের গাছে বাঁধা ছিল চুরি হওয়া গরু। আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক যুবক। যা দেখে ওই যুবককেই চোর বলে সন্দেহ কয়েক জনের। অভিযোগ, তাঁরা ধাওয়া করে ওই যুবককে ধরে গ্রামের বাজারে নিয়ে যান। চলে বেধড়ক গণপিটুনি। মারের চোটে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।

ল্যাম্পপোস্টের নীচে পড়ে নিহতের জামা-জুতো।—বিকাশ মশান

ল্যাম্পপোস্টের নীচে পড়ে নিহতের জামা-জুতো।—বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

জঙ্গলের গাছে বাঁধা ছিল চুরি হওয়া গরু। আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক যুবক। যা দেখে ওই যুবককেই চোর বলে সন্দেহ কয়েক জনের। অভিযোগ, তাঁরা ধাওয়া করে ওই যুবককে ধরে গ্রামের বাজারে নিয়ে যান। চলে বেধড়ক গণপিটুনি। মারের চোটে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।

শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বড়জোড়ার মানাচর চকবাজার বড়মানা এলাকায়। পরে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক জন গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সাধন বিশ্বাস (২৬) ওই এলাকারই বাসিন্দা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিনি বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় গরু চুরি হচ্ছিল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোরে বড়মানার বাসিন্দা রামচন্দ্র রায় গোয়াল খুলে দেখেন তাঁর দুটি গরু উধাও। পরে গ্রামের কয়েক জন ধোবাঘাটের জঙ্গলে শৌচ করতে গিয়ে রামবাবুর দু’টি গরু গাছে বাঁধা দেখতে পান। দূরে সাধনকে দেখতে পেয়ে তাঁরা ফোনে গ্রামের কয়েক জনকে খবর দেন। সাধনকে ধরে মোটরসাইকেলে চাড়িয়ে চকবাজারে নিয়ে আসা হয়। বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে রড, লাঠি, ইঁট, পাথর ইত্যাদি দিয়ে মারধর চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাধা দেওয়ায় টানতে টানতে ওই যুবককে দূরের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ফের এক দফা মারধর করে আধরমরা অবস্থায় ফেলে চলে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

খবর পেয়ে পুলিশ সাধনকে উদ্ধার করে বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে রাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা রামা রায়কে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। শনিবার সাধনের স্ত্রী ঝুম্পা বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে রামচন্দ্রবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন তাঁকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তবে রামচন্দ্রবাবুর ছেলে রবীন্দ্র রায়ের দাবি, তাঁদের পরিবারের কেউই গণপিটুনির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এর আগেও কয়েকবার সাধনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন সাধনের শ্যালক সজল বাউরি জানান, সাধন ক্ষেতমজুরি করতেন। কাজে যাবেন বলে দিন পাঁচেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তারপর আর ফেরেননি। শুক্রবার রাতে তাঁরা পুলিশের থেকে ঘটনার খবর পান। তাঁর দাবি, সাধন চুরি করেননি।

পখন্না পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মমতা কবিরাজ বলেন, “ঘটনাটি সমর্থন করা যায় না। পুলিশ খতিয়ে দেখছে।” পুলিশ জানিয়েছে, গণপিটুনি ও খুনের মামলা রুজু হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, “কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lynched thief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE