Advertisement
E-Paper

রেফার-চক্রে পড়ে মৃত করোনায় আক্রান্ত তরুণ

সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে হাসপাতালেই আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বাবা-মা। শেষমেশ ভর্তি নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি ১৮ বছরের ছেলেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:৩২
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে হাসপাতালেই আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বাবা-মা। শেষমেশ ভর্তি নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি ১৮ বছরের ছেলেকে। চিকিৎসকেরাও বলছেন, চিকিৎসা শুরু করতে বেশ খানিকটা দেরিই হয়েছিল।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটার পরে ওই তরুণের বাবা-মায়ের অভিযোগ, শুক্রবার সকালে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আরও তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। শনিবার ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘শুধু ঘোরাঘুরিই হল। ছেলেটা বাঁচল না।’’ বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল থেকেও যাতে কোনও ভাবে কোভিড রোগীদের ফেরানো না হয়, সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই নির্দেশিকায় রোগী ফেরানোর ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের কোনও আধিকারিকের ভূমিকা থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মেডিক্যাল কলেজগুলির উপাধ্যক্ষ তথা সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। কিন্তু এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠল স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল নিয়ে।

ইছাপুরের বাসিন্দা ওই তরুণের নাম শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁর বাবা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শুভ্রজিৎ জানিয়েছিলেন, তাঁর খুব দুর্বল লাগছে। শরীরে একটা অস্থিরতাও রয়েছে। তাই শুক্রবার সকালে ছেলেকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে আসেন বাবা-মা। সেখানে জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রেখে ওই তরুণের সুগার পরীক্ষা করে দেখা যায়, রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রায় ৮০০। তখন তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অভিযোগ, ওই বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখার পরে ওই তরুণ এক বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বার বার অনুরোধ করার পরে রক্ত পরীক্ষা করা হয় শুভ্রজিতের। তাঁর মা বলেন, ‘‘পরীক্ষার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বলা হল, ছেলে কোভিড পজ়িটিভ। সেটা কাগজে লিখে দিয়ে এক জন জানালেন, চিকিৎসার জন্য অন্য কোনও বড় হাসপাতালে বা সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে।’’

এর পরে শুভ্রজিৎকে ফের কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে শয্যা নেই জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাবার আক্ষেপ, ‘‘ছেলেটা একেবারে নেতিয়ে পড়েছিল। একটু অক্সিজেনও কেউ দিলেন না!’’ ফের শুভ্রজিৎকে ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষে দুপুর ২টো নাগাদ ছেলেকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন ওই তরুণ। তখনই ছেলের চিকিৎসা না হলে হাসপাতাল চত্বরেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন মা-বাবা। তাঁরা জানান, এর পরেই শুভ্রজিৎকে ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া হয়। বাবা বলেন, ‘‘ভর্তির পরে চিকিৎসকেরা বললেন আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু শনিবার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হল, শুক্রবার রাতে ছেলে মারা গিয়েছে। ওর নাকি করোনা হয়েছিল।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় আনা হয়েছিল ওই রোগীকে। সেই মুহূর্তে শয্যা খালি না থাকায় জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে যা করণীয়, সবই করা হয়। এর পরে সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে স্থানান্তরিত করার পরে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি যে অবস্থায় এসেছিলেন, তাতে বাঁচানোর মতো সময় পাওয়া যায়নি।’’

কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের সুপার সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘এখানে যে সব রোগের চিকিৎসা হয় না, বাইরের নার্সিংহোমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে পাঠানো হলে রোগীর করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। বিষয়টি জানা মাত্র সাগর দত্ত হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সাগর দত্ত হাসপাতালে শয্যা না-পেয়ে ওঁরা ফিরে আসেন। এর পরে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। ভর্তি নেওয়া কতখানি জরুরি, রেফারের কাগজে তা সব রকম ভাবে লিখেও দেওয়া হয়েছিল। চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি।’’

অন্য দিকে, সাগর দত্তের সুপার পলাশ দাসের দাবি, ‘‘ওই দিন এমন কোনও রোগীর হাসপাতালে আসার কোনও নথি নেই! বিষয়টি আমার নজরেও আসেনি। জানতে পারলে নিশ্চয়ই শয্যার ব্যবস্থা করা হত।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলিতে প্রচুর শয্যা আছে বলে রাজ্য সরকার দাবি করলেও সেই হিসেব সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখন হাসপাতালের এত শয্যা গেল কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রোগী ফেরালেই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হবে, তা-ই বা কোথায় হচ্ছে?’’

Death Covid 19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy