Advertisement
E-Paper

ইচ্ছে হয় গাঁয়ে ফিরে ছেলেদের কবরের পাশে বসি

তিন ছেলের হত্যা নিয়ে সিবিআই তদন্ত ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে আজ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করবেন লাভপুরের জরিনা বিবি। লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর বাহিনী কী ভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে, তা-ও হাইকোর্টকে জানাতে চান তিন সন্তান খোয়ানো মা।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০৩:৪২

তিন ছেলের হত্যা নিয়ে সিবিআই তদন্ত ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে আজ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করবেন লাভপুরের জরিনা বিবি। লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর বাহিনী কী ভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে, তা-ও হাইকোর্টকে জানাতে চান তিন সন্তান খোয়ানো মা।

সোমবার সকালের ট্রেনে তিন ছেলে সানোয়ার, মজল ও আনারুল শেখকে নিয়ে কলকাতায় আসবেন লাভপুরে নিহত তিন সিপিএম সমর্থকের মা জরিনা বিবি। মা ও ছেলেরা যৌথ ভাবে আবেদন করবেন হাইকোর্টের কাছে। তিন ছেলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁর পরিবার যাতে মুখ না খোলে, সে জন্য নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জরিনা বিবির অভিযোগ। রবিবার লাভপুরে এক ছেলের বাড়িতে বসে বৃদ্ধা বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ, তারা সবাই ধরা পড়েনি। তারাই আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। কিছু দিন আগেই লাভপুরে সানোয়ারের বাড়ির কাছে ওরা বোমাবাজিও করেছে।”

এ সব অগ্রাহ্য করেই কলকাতা হাইকোর্টকে তিনি নিজের মুখে সব জানাতে চান। নিহত তিন ছেলের মায়ের স্পষ্ট কথা, “কোনও চাপের কাছে আমি নতি স্বীকার করব না। সুবিচারের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। সোমবারই হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবিও জানাব।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “হাইকোর্টে আবেদন করেও যদি কোনও কাজ না হয়, আল্লার শেষ বিচারের ভরসাতেই বেঁচে থাকব! না হলে মরেও যে আমার শান্তি হবে না। আমার ছেলেদের অতৃপ্ত আত্মারা বিচারের দাবি জানাবে। ওদের জন্য আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।”

জরিনার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বোলপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোটা পরিবার যে জবানবন্দি দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার ও নতুন করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজেদের বক্তব্য রাখতে দেওয়ার আর্জি জানাবেন ওই বৃদ্ধা। ওই জবানবন্দির জন্যই লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম খুনের মামলা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। চার্জশিটেও তাই নাম নেই ওই বিধায়কের। জরিনা ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে তাঁদের জবানবন্দি থেকে মনিরুলের নাম বাদ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

এ দিন জরিনা জানান, চার বছর ধরে তিন ছেলে হারানোর দুঃখটা তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন। এ বার সব ঘটনা সবাইকে জানানোর সময় এসেছে। ৮০ বছরের বৃদ্ধার কথায়, “আমার ৯ ছেলে, ১ মেয়ে। নাতি-নাতনি ৫২ জন। কিন্তু মাত্র ৯ জন নাতি-নাতনির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। বাকিরা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আমি ওদের কাছে যেতে পারি না। ওদের মুখগুলো সব সময় মনে পড়ে। আমিই তো ওদের সবাইকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি!”

নিহত তিন ছেলের কথা মনে হতেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছে বলেন, “তিন ছেলের মুখ মনে পড়ে। কিন্তু তার পরেই যে দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাতে সারা রাত আর চোখের পাতা এক করতে পারি না। বোলপুর হাসপাতালে প্রথমে দেখে চিনতেই পারিনি, কোনটা কে। দীর্ঘক্ষণ খুঁটিয়ে দেখার পরে বুঝতে পারি, বড় ছেলের (জাকের আলি) বুকের পাঁজর ভাঙা। ওইসুদ্দিনের কানের ভিতর দিয়ে খুলি ভেদ করে দীর্ঘ ফুটো। মাথাতে আরও অনেকগুলো ফুটো। কোটনেরও হাত-পা ভাঙা।”

তিন ছেলের খুনিদের চরম শাস্তির পাশাপাশি তাঁর আরও একটা ইচ্ছের কথা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে বিচারপতিদের জানাতে চান জরিনা। কী সেই ইচ্ছে? জরিনা বলেন, “আর কোনও দিন নিজের গাঁয়ে ফিরতে পারব কি না জানি না। কিন্তু, ফিরতে বড় ইচ্ছে করে। আমার স্বামী আর তিন ছেলের কবর পাশাপাশি রয়েছে ওই গাঁয়ে। ইচ্ছে হয়, ছেলেদের কবরের পাশে গিয়ে দু’দণ্ড বসি। ওদের সঙ্গে কথা বলি। আমাকেও যেন কবর দেওয়া হয় ওই তিন কবরের পাশেই।”

গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে বৃদ্ধার। পাশে ছোট্ট নাতি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ঠাকুরমার মুখের দিকে।

arghya ghosh monirul islam zarina bibi labhpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy