Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অনুব্রতকে আগে জেলে ভরুন, তোপ বাবুলের

এত দিনের প্রচারে, নানা ঝড়ঝাপ্টাতেও সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও কটূ কথা বলেননি বাবুল সুপ্রিয়। বরং বহু তৃণমূল নেতা তাঁর ‘ব্যক্তিগত বন্ধু’ জানিয়ে সৌজন্যও দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর হুঙ্কার শুনে শেষমেশ বিজেপি-র তারকা প্রার্থীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

এত দিনের প্রচারে, নানা ঝড়ঝাপ্টাতেও সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও কটূ কথা বলেননি বাবুল সুপ্রিয়। বরং বহু তৃণমূল নেতা তাঁর ‘ব্যক্তিগত বন্ধু’ জানিয়ে সৌজন্যও দেখিয়ে এসেছেন।

কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর হুঙ্কার শুনে শেষমেশ বিজেপি-র তারকা প্রার্থীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।

রবিবার সকালেই আসানসোলে, বাবুলের কেন্দ্রে জনজোয়ারে ভেসে বাছা-বাছা শব্দে মমতা সরকারের সততা, দক্ষতা, ক্ষমতা নিয়ে কটাক্ষ করে যান মোদী। বাঁকুড়ায় গিয়ে ফের তিনি জানিয়ে দেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত যেতেই হবে। প্রতিক্রিয়ায় বিকেলে কৃষ্ণনগরের জনসভায় ফেটে পড়েন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, “কমিশনকে বলব তাঁকে গ্রেফতার করুক। যে এই ধরনের কথা বলে, তাকে ইমিডিয়েট কোমরে দড়ি দিয়ে জেলে পাঠানো উচিত।”

সোমবার বাবুল পাল্টা বলেন, “আসলে উনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের গরিমা নষ্ট করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই ভাষায় কথা বললে শিষ্টাচার ভূলুণ্ঠিত হয়।” বেশির ভাগ জনসভাতেই রবীন্দ্র-নজরুলের কথা বলেন, উদ্ধৃতি দেন মমতা। বাবুলের কটাক্ষ, “উনি রবীন্দ্রনাথের কথা বললেও শিষ্টাচারের ন্যূনতম পাঠ নিয়েছেন বলে মনে হয় না। উনি হয়তো জানেন না, সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে, কোনও অপরাধীকেও কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া যায় না।” তার পরেই বাবুলের পাল্টা আক্রমণ, “নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি বাঁধার আগে ওঁর ডান হাত অনুব্রত মণ্ডল, যাঁকে তিনি বিভিন্ন জেলায় রিগিং ও সন্ত্রাস করার জন্য পাঠাচ্ছেন, তাকে জেলে ভরার সৎ সাহস দেখান।”

পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডে গোটা রাজ্য তোলপাড় হয়ে গেলেও অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ধরা হয়নি। পুলিশকে বোমা মারতে বলা সত্ত্বেও সাজা হয়নি তাঁর। কোন জাদুমন্ত্রে তিনি গ্রেফতারি এড়িয়ে চলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ আদালত। তৃতীয় দফার ভোটে এক মাত্র হুগলির আরামবাগ ছাড়া মূলত অনুব্রত-প্রভাবিত এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি রিগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।

বীরভূমে ভোট মিটে যাওয়ায় অনুব্রতকে এ বার নেপথ্য থেকে আসানসোলে ‘ভোট করতে’ নামানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল-বিরোধী নেতাদের অনেকেই। রবিবার মোদী ফিরে যাওয়ার পরেই তিনি সন্তর্পণে পাণ্ডবেশ্বর-সহ কিছু এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন তাঁদের একাংশের দাবি। আবার আসানসোলের কান ঘেঁষে ঝাড়খণ্ডের মাইথনে বসে তিনি ভোট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারেন বলেও কিছু বিরোধী নেতার আশঙ্কা। ভোটের দিন বিশেষ করে খনি এলাকায় বড়সড় গণ্ডগোল হতে পারে বলেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

বিদায়ী সাংসদ তথা সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, “বামেদের হারাতে তৃণমূলের মেজো-সেজো সব নেতাই এখন আসানসোলে। নির্বাচন কমিশনের দৌড় ওরা বুঝে গিয়েছে। পুলিশকে বোমা মারতে উস্কানি দিয়ে পাশের জেলার যে নেতা খ্যাতিমান হয়েছেন, শুনছি তাঁকেও চোরাগোপ্তা খেলানো হতে পারে।” সন্ত্রাসের ভয় পাচ্ছে কংগ্রেসও। বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে সন্ত্রাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বাবুল বলেন, “প্রশাসক হিসেবে মমতা যা বলেন আর যা করেন তার মধ্যে এতই ফারাক যে অনুব্রতর মতো নেতাকে আসানসোলে গণ্ডগোল পাকাতে পাঠানো হয়ে থাকলে আমি অন্তত আশ্চর্য হব না।”

সোমবার রাতে মোবাইলে ফোন করা হলে অনুব্রত অবশ্য বলেন, “যত সব বাজে কথা! নিজের জেলায় ভোটের পরে আমি ক্লান্ত। কয়েক দিন তাই বাড়িতেই বিশ্রামে থাকছি।” আসানসোলের যুদ্ধে তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি, কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকও বিরোধীদের কথায় আমল দিতে নারাজ। তিনি শুধু মুচকি হাসেন “লোকে কত কী যে বলে যাহা তাহা...! জেনে রাখুন, আমাদের প্রার্থী দোলা সেনই জিতছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anubrata mondal babul supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE