Advertisement
E-Paper

অভিষেকের ক্ষমা, দলের তির বিজেপির দিকে

যিনি আক্রান্ত, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে হলেও তিনি আক্রমণকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেফতারি থেকে রেহাই পেলেন না গণপ্রহারে আহত হামলাকারী। সেই সঙ্গেই ঘটনায় লেগে গেল রাজনীতির রং। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যেখানে শাসক দলের বলা কথারই কার্যত পুনরাবৃত্তি শোনা গেল পুলিশের তরফেও! মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এবং তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারায় অভিযুক্ত দেবাশিস আচার্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে সোমবার।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪

যিনি আক্রান্ত, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে হলেও তিনি আক্রমণকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেফতারি থেকে রেহাই পেলেন না গণপ্রহারে আহত হামলাকারী। সেই সঙ্গেই ঘটনায় লেগে গেল রাজনীতির রং। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যেখানে শাসক দলের বলা কথারই কার্যত পুনরাবৃত্তি শোনা গেল পুলিশের তরফেও!

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এবং তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারায় অভিযুক্ত দেবাশিস আচার্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে সোমবার। তার পরেই পুলিশ জানিয়েছে, দেবাশিস আরএসএস-প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সক্রিয় কর্মী। যে দাবি রবিবার রাতেই উঠে এসেছিল তৃণমূল সূত্রে!

দেবাশিসকে জেরা করতে রবিবার রাতেই তমলুক জেলা হাসপাতালে পৌঁছন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত এবং ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিশাল গর্গ। তখন সে ভাবে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না দেবাশিস। সোমবার ফের হাসপাতালে যান ওই দুই পুলিশ-কর্তা। দীর্ঘক্ষণ দেবাশিসের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

পরে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন এ দিন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের সঙ্গে এবিভিপি-র যোগাযোগ ছিল। জেরায় দেবাশিস জানিয়েছে, সে সংগঠনের জেলা প্রমুখ পদে কয়েক মাসের জন্য ছিল। দিন কয়েক আগে কাঁথিতে এবিভিপি-র জেলা নেতা অসীম মিশ্রের সঙ্গে বৈঠকেও ছিল দেবাশিস।” পুলিশ সুপার আরও জানান, দেবাশিসের কাছ থেকে এবিভিপি-র আরও কয়েক জনের নাম জানা গিয়েছে। কিছু দিন আগে জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে পড়তে দেবাশিস হরিদ্বারেও গিয়েছিলেন।

দেবাশিসের এই ‘পরিচয়’কে কাজে লাগিয়েই চড়-কাণ্ডের জন্য কৌশলে রাজনৈতিক আক্রমণের তির বিজেপি তথা আরএসএসের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। ঘটনার অভিঘাত নিয়ে বৈঠকের জন্য এ দিন তৃণমূল ভবনে আলোচনায় বসেছিলেন শাসক দলের পাঁচ শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। পরে সুব্রতবাবু চড় মারার ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, “অভিষেককে হেনস্থা করে যে ধর্মান্ধ এবং জেহাদি রাজনীতিবিদেরা ঘৃণ্য অপসংস্কৃতি আমদানির চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনার নজির এখানে ছিল না।” পাল্টা প্রত্যাঘাত না করে এর মোকাবিলা তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবেই করবে বলে সুব্রতবাবু জানান। তবে ইন্দিরা গাঁধীর হত্যার পরে যা ঘটেছিল, তার সঙ্গে তুলনা করে দেবাশিসকে গণপ্রহারের ঘটনাকে ন্যায্যতা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। সম্ভবত দলনেত্রীর কাছে নম্বর বাড়াতেই!

পুলিশ এবং শাসক দলের বক্তব্য শুনে আবার প্রবল প্রতিবাদ করেছেন বিজেপি, আরএসএস এবং এবিভিপি নেতারা। সকলেরই দাবি, অভিযুক্ত দেবাশিসের সঙ্গে তাঁদের সংগঠনের যোগ নেই। এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদারের দাবি, “ওই যুবক যে কাণ্ড করেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে তিনি কখনও আমাদের সংগঠন করেননি। আমরা ওই ধরনের আক্রমণের শিক্ষা দিইও না। আসলে কলেজে কলেজে এবিভিপি-র জয়ে ভয় পেয়ে আমাদের কালিমালিপ্ত করার চক্রান্ত হচ্ছে!” আরএসএসের রাজ্য মুখপাত্র জিষ্ণু বসুও বলেন, “ওই যুবকের সঙ্গে আমাদের যোগ নেই।” আর বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবুর বক্তব্য, “মানবিক দিক থেকে আমাদের দলের তরফে ছেলেটিকে দেখতে যাওয়া উচিত। কিন্তু ওই যুবকের সঙ্গে বিজেপি বা তার পরিবারের সংযোগ প্রমাণ করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে লাগানো হয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে কতটা এগনো উচিত, সেটা ভাবতে হবে!”

এর মধ্যেই সুস্থ হচ্ছেন দেবাশিস। তাঁর সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্যও সামনে এসেছে। তমলুক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বল্লুক গ্রামে দেবাশিসদের আদত বাড়ি। তাঁর বাবা দেশবন্ধু আচার্য বছর চারেক আগে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে তমলুক শহরের মালিজঙ্গলপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। দেবাশিস কাঁথির সরস্বতীতলায় ভাড়া নিয়ে আড়াই মাস থাকছিলেন। যা নাকি জানা ছিল না তাঁর পরিবারের! ওই বাড়ির মালিক তমালপল্লব বিশ্বাস আবার আরএসএস কর্মী। তিনি এলাকায় আরএসএস-এর একটি স্কুলও চালান। দিন ১৫ আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন দেবাশিস!

তমালবাবু এবং দেবাশিসের ভাড়া ঘরের আর এক সঙ্গী সুখেন দাসকে ডেকে জেরা করেছে পুলিশ। নানা সূত্রে খবর, ২০১২-তে উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় আচার্য জগদীশচন্দ্র পলিটেকনিক কলেজে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমায় দেবাশিস প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরহরি বিশ্বাস জানান, ভাল ছাত্র হলেও ২০১১-য় কলেজে টিএমসিপি-র সঙ্গে এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদের মারামারিতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। দেগঙ্গা থানা সেই সময় যে চার্জশিট দিয়েছিল, এক দিনের মধ্যেই তা পুলিশ ফের খুঁজে পেয়েছে বলে এ দিনই আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার কথায় ইঙ্গিত মিলেছে!

অভিষেক অবশ্য তাঁর ভাবমূর্তি ভাল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন ক্ষমা প্রদর্শন করে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেল। এই কাপুরুষোচিত কাজের পিছনে যারাই থাকুক, তারা জানে না আমরা কোন ধাতুতে তৈরি! ব্যক্তিগত স্তরে, ওই হামলাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়াই উচিত মনে করছি। তার দ্রুত আরোগ্যও কামনা করছি।”

manhandle row debasish acharyay abhisekh bandyopadhyay ananda mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy