Advertisement
E-Paper

আইএস মোকাবিলায় রাজ্যে এ বার সাইবার নজরদারি

তদন্ত করছিলেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণের, কিন্তু জঙ্গি-ডেরায় মেলা কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে লুকিয়ে রাখা চিরকুটে একটি ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়ে গেলেন এক গোয়েন্দা-অফিসার। সেই সাইটে ঢুকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসার দেখলেন, ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর বিষাক্ত উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বাংলা ভাষায়, বাংলা হরফে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯

তদন্ত করছিলেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণের, কিন্তু জঙ্গি-ডেরায় মেলা কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে লুকিয়ে রাখা চিরকুটে একটি ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়ে গেলেন এক গোয়েন্দা-অফিসার। সেই সাইটে ঢুকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসার দেখলেন, ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর বিষাক্ত উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বাংলা ভাষায়, বাংলা হরফে।

আবার কলকাতার উত্তরে, কৈখালির বাসিন্দা, মেহদি মসরুর বিশ্বাসকে ডিসেম্বরে বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার করে কর্নাটক পুলিশ। একটি বহুজাতিক সংস্থার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, বছর চব্বিশের মেহদির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনের সব চেয়ে প্রভাবশালী ট্যুইটার অ্যাকাউন্টটি তিনি বেঙ্গালুরুতে বসে তৈরি করেছিলেন ও সেটা চালাচ্ছিলেন।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, নতুন ধারার জঙ্গিদের হদিস পেতে পুরনো, প্রথাগত কায়দায় নজরদারি করে বিশেষ কাজ হবে না। তাদের শনাক্ত করার জন্য ভরসা করতে হবে বিশেষ সফ্টঅয়্যার-এর শ্যেনচক্ষুর উপরে!

আর সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (আইবি) এই বছরের মধ্যে খুলতে চলেছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব’, যার মাধ্যমে ফেসবুক, ট্যুইটার, বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে কী ঘটছে, সে সবের উপরে নজরদারি চালানো যাবে। কোথাও সন্ত্রাসবাদের প্রচার চলছে বলে টের পেলে সতর্ক হবেন গোয়েন্দারা। নেট দুনিয়ার ওই সব কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঠিকানা জেনে তার পর তাদের উপরে চলবে মানব-নজরদারি। আইবি-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এই বছরেই সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব চালু হবে। আইএস এখন যে ভাবে সাইবার জগৎকে ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।”

গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ, আল কায়দা, লস্কর-ই-তইবা কিংবা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন-এর চেয়ে আইএস একেবরেই আলাদা। তাঁদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ার মতো বাস্তব যুদ্ধের ময়দানে নয়, ভারতের ক্ষেত্রে আইএস সংক্রান্ত ভয়টা এখনও মূলত সাইবার জগতে। কিছু দিন আগে ব্রিটিশ পুলিশ কয়েক জন আইএস-সদস্যকে গ্রেফতার করে। নেট-নজরদারির মাধ্যমেই হদিস পাওয়া গিয়েছিল তাদের।

ভারতে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাব চালু করেছে মুম্বই পুলিশ, ২০১৩-র মার্চে। প্রশিক্ষিত ২০ জন অফিসার বিভিন্ন শিফ্টে কাজ করে দিবারাত্রি নজরদারি চালাচ্ছেন নেট দুনিয়ায়। প্রযুক্তির সহায়তা দিচ্ছে ন্যাসকম (ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সফ্টঅয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানিজ)। কিন্তু এই রাজ্য এত দিন বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি। তবে মেহদি মসরুর বিশ্বাসের ঘটনার পর আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না রাজ্যের গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অফিসারেরা মেহদিকে জেরা করতে বেঙ্গালুরুর জালাহাল্লিতে গিয়েছিলেন। এসটএফ সূত্রের খবর মেহদি সাফ বলে দেন, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। ইসলামিক স্টেট-এর প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। অন্যদের সমর্থন চেয়েছি। সবই করেছি ট্যুইটারের মাধ্যমে। এটা অপরাধ নাকি?”

কিন্তু যে আইএস একের পর এক শিরশ্ছেদের মতো ভয়ানক কাজ করছে, তাদের সমর্থন! বি টেক পাশ করা যুবকের ঝটিতি উত্তর, “খোঁজ নিয়ে দেখুন, যাঁদের শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে, তারা ঘোরতর অন্যায় করেছে।”

মেহদির তৈরি ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট ‘শমি উইটনেস’ প্রতি মাসে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ দেখতেন, ফলোয়ার-এর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজারেরও বেশি।

আমেরিকার কাউন্টার টেররিজম সেন্টার দু’সপ্তাহ আগে জানিয়েছে, আইএস ও তার সমর্থকেরা রোজ ৯০ হাজার ট্যুইট করছে এবং সাড়া পাচ্ছে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও।

আইবি-র এক শীর্ষকর্তা জানান, যে সব জায়গায় শিক্ষিত, প্রযুক্তিতে সড়গড় তরুণ-তরুণীরা বেশি সংখ্যায় রয়েছেন, সেই সব জায়গায় নেটে আইএস-এর প্রচারও বেশি। সে দিক দিয়ে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো কলকাতাও যথেষ্ট স্পর্শকাতর। তবে ওই অফিসার বলেন, “নেট দুনিয়ায় আইএস-এর দৌরাত্ম্যের উপরে নজর রাখতে প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত একঝাঁক অফিসারও প্রয়োজন।”

IS westbengal IB surbek biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy