Advertisement
E-Paper

আটশো কোটির মজুরিই বাকি, দিল্লি-রাজ্য তরজা

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কয়েক মাস ধরে মাটি কেটেও প্রাপ্য মজুরি পাননি গ্রামবাংলার কয়েক লক্ষ মানুষ। বকেয়ার অঙ্ক জমতে জমতে প্রায় আটশো কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ওঁদের পাওনা কে মেটাবে, তাই নিয়ে চলছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দড়ি টানাটানি। দিশা না-পেয়ে শেষমেশ টাকার জন্য ফের দিল্লির দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৪:৪০

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কয়েক মাস ধরে মাটি কেটেও প্রাপ্য মজুরি পাননি গ্রামবাংলার কয়েক লক্ষ মানুষ। বকেয়ার অঙ্ক জমতে জমতে প্রায় আটশো কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ওঁদের পাওনা কে মেটাবে, তাই নিয়ে চলছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দড়ি টানাটানি। দিশা না-পেয়ে শেষমেশ টাকার জন্য ফের দিল্লির দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য।

দিল্লির দিকে আঙুল তুলে রাজ্যের দাবি: একশো দিনের কাজ প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের। টাকা তাদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন কাজ হয়ে গেলেও কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ। অন্য দিকে পুরো ঘটনার দায়ভার রাজ্যের উপরে চাপিয়ে দিল্লি বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এ বছর প্রকল্পটিতে যা কাজ হয়েছে, তার পাই-পয়সা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গকে বাড়তি সুবিধাও দেওয়া হয়েছে বলে দিল্লির দাবি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মতে, আগের বছরের বকেয়া মেটাতে গিয়ে এ বছরের টাকা খরচ করে পশ্চিমবঙ্গ সমস্যায় পড়েছে। তারই দায় দিল্লির ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে।

আর এই টানাপড়েনের মাঝে বকেয়া মজুরি মেটানোর দাবিতে বিভিন্ন গ্রামে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে পঞ্চায়েত দফতর-সূত্রের খবর। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মুখে এ হেন অসন্তোষের আঁচ পেয়ে নবান্নও বিব্রত। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ এর মধ্যে সিঁদুরে মেঘও দেখছেন। “বকেয়া এখনই ৮০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। মার্চের শেষে হাজার কোটিতে পৌঁছবে। জানি না, কী ভাবে সামলাব!” বলছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর আশঙ্কা, “যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা কোদাল-বেলচা নিয়ে পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে না-বসেন।” এখন উপায়?

বস্তুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আবার দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশের কাছে টাকার জন্য দরবার করা ছাড়া অন্য পথ সুব্রতবাবু দেখছেন না। “কী আর করা যাবে! দিল্লি গিয়ে ফের টাকা চাওয়া ছাড়া উপায় নেই।” মন্তব্য তাঁর। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর বক্তব্য, “প্রকল্পের শর্তে বলা আছে, কেউ কাজ চাইলে পনেরো দিনের মধ্যে তাঁকে কাজ দিতে সরকার বাধ্য। অন্যথায় বেকার ভাতা দিতে হবে। ফলে আবেদন করলেই কাজ দেওয়া হয়েছে। এখন দিল্লি মজুরির টাকা মেটাতে চাইছে না।”

চলতি অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ কোটি ৬১ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরির। কিন্তু প্রথমে পঞ্চায়েত ভোট, পরে বর্ষা এসে যাওয়ায় ছ’মাস কার্যত কাজ হয়নি। এক পঞ্চায়েত-কর্তা জানাচ্ছেন, পুরোদমে মাটি কাটা শুরু হয় পুজো নাগাদ। প্রতিটি পরিবারকে গড়ে তিরিশ দিনের কাজ দেওয়া যাবে। সরকারের আশা, মার্চের শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-হলেও শ্রমদিবস কুড়ি কোটিতে পৌঁছবে।

কাজ হচ্ছে। কিন্তু কাজের দাম কেন মিলছে না? নবান্ন-সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রকল্পটিতে চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত ৩৬০০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। অথচ দিল্লি পাঠিয়েছে ২৮০০ কোটি। আটশো কোটির এই ফারাকটাই রাজ্যকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে বলে সূত্রটির দাবি। পঞ্চায়েত-কর্তাদের অভিযোগ: রাস্তা নির্মাণের সরঞ্জাম কিনতে যে কয়েকশো কোটি খরচ হয়েছে, দিল্লি থেকে টাকা না-আসায় সে পাওনাও মেটানো যাচ্ছে না। দিল্লির পাল্টা দাবি: চলতি অর্থবর্ষে এ যাবৎ হওয়া সব কাজের টাকা পশ্চিমবঙ্গ পেয়ে গিয়েছে। “সঙ্কটের কারণ, এ বছরের বরাদ্দের তহবিল থেকে গত বছরের বকেয়া ৭৮০ কোটি টাকা মেটানো হয়েছে। ফলে এ বছরের টাকায় টান পড়েছে,” বলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা।

কেন্দ্রের এই যুক্তি রাজ্য পুরোপুরি অস্বীকার করছে না। যদিও পঞ্চায়েত-কর্তাদের বক্তব্য: গত অর্থবর্ষের শেষ দু’-তিন মাসে যা কাজ হয়েছিল, দিল্লি তার টাকা দেয়নি। আর সেই বকেয়া মেটাতে গিয়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

দফতরের এক অফিসারের প্রতিক্রিয়া, “আশা ছিল, কেন্দ্র বাড়তি দিয়ে পুষিয়ে দেবে। দেয়নি।” নবান্নের দাবি: এ বছর যা কাজ হয়েছে, তাতে রাজ্যের ২৮০ কোটি টাকা ম্যাচিং গ্রান্ট দেওয়ার কথা ছিল। অর্থ দফতর অতিরিক্ত আড়াইশো কোটি খরচ করেছে। এর বাইরেও বিভিন্ন জেলা পরিষদ ও অন্যান্য তহবিল থেকে একশো দিনের কাজের কিছু পাওনা মেটানো হয়েছে। “এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের আর খরচ করার সাধ্য নেই।”— সাফ জানান রাজ্য সরকারের এক কর্তা।

jagannath chattopadhyay 100 day's job
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy