Advertisement
E-Paper

আসল বীজআলু পেতে পঞ্জাবের দ্বারস্থ চাষিরা

আলুর জোগানে টান পড়ায় ওড়িশা ও অসমের প্রশাসনিক কর্তারা এ রাজ্যের মুখ্যসচিবের দরজায় কড়া নাড়ছেন। আর ঠিক তখনই পরিস্থিতির চাপে আসল বীজ আলু পাওয়ার জন্য পঞ্জাবের দ্বারস্থ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গত মরসুমে চাহিদার তুলনায় রাজ্যে বীজ আলুর জোগান খুব বেশি ছিল না। এ বার আলু চাষের ভরা মরসুম আসন্ন। ফলে, গত বারের মতোই জাল বীজের রমরমা আবার প্রায় অনিবার্য।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭

আলুর জোগানে টান পড়ায় ওড়িশা ও অসমের প্রশাসনিক কর্তারা এ রাজ্যের মুখ্যসচিবের দরজায় কড়া নাড়ছেন। আর ঠিক তখনই পরিস্থিতির চাপে আসল বীজ আলু পাওয়ার জন্য পঞ্জাবের দ্বারস্থ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা।

প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গত মরসুমে চাহিদার তুলনায় রাজ্যে বীজ আলুর জোগান খুব বেশি ছিল না।

এ বার আলু চাষের ভরা মরসুম আসন্ন। ফলে, গত বারের মতোই জাল বীজের রমরমা আবার প্রায় অনিবার্য। তা ঠেকাতে পঞ্জাবের জালন্ধরে গিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কাছে আর্জি জানিয়েছেন এ রাজ্যের আলু বীজ ব্যবসায়ীরা।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই কৃষি দফতর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ভিন্ রাজ্যের উপরে নির্ভরতা ছেড়ে বীজ আলু উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ স্বনির্ভর হবে। তার পরে অনেকটা সময় পেরিয়েছে। কিন্তু স্বনির্ভরতা দূরে থাক, আলুবীজ ব্যবহারে অন্য রাজ্যের উপরে নির্ভরতা আরও বেড়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে রাজ্যে কিছু বীজ আলু উৎপাদন হলেও চাহিদার তুলনায় তা নগণ্য। রাজ্যের কৃষি দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য দাবি করেন, “এ বার ২০ হাজার টন বীজ আলু রাজ্যে চাষিদের জন্য পাওয়া যাবে। তার মান ভাল। গত মরসুম থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আগামী বার এক লক্ষ টন বীজ আলু উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।”

কিন্তু তাতে তো এ বারের সঙ্কট ঘুচছে না। উত্তরবঙ্গে আলুর উৎপাদন কম। দক্ষিণবঙ্গের ছ’টি জেলায় আলুর সিংহ ভাগ উৎপাদন হয়। হুগলি, বর্ধমান এবং দুই মেদিনীপুরে সবচেয়ে বেশি, তা বাদে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলাতেও কিছুটা চাষ হয়। কিন্তু রাজ্যের প্রয়োজনের মোট ৬০ লক্ষ প্যাকেট (৫০ কেজি প্রতি প্যাকেট) অর্থাৎ ৩ লক্ষ টন বীজ আলুর বেশির ভাগটাই ভিন্ রাজ্য থেকে আসে। রাজ্যে গত মরসুমে বীজ আলুর উৎপাদন হয়েছিল মেরে-কেটে পাঁচ হাজার টন। তা এ বার বেড়ে ২০ হাজার টন হওয়ার কথা। বাকিটা বাইরে থেকেই আনতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আলুবীজ ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আকাশদীপ সিংহের আক্ষেপ, “সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও রাজ্যে বীজআলু উৎপাদন নির্দিষ্ট মাত্রায় হয়নি। তার ফলে মূলত পঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের বীজের উপর এ রাজ্যের চাষিদের নির্ভর করতে হয়। কিন্তু

সেই বীজও জাল হচ্ছে। চাষিরা মার খাচ্ছেন।” গত বারই জাল বীজ কিনে ঠকেছেন বহু চাষি। সেই উপদ্রব এড়াতে এ বার মরসুমের শুরুতেই পঞ্জাবে জালন্ধরে গিয়ে আলু উৎপাদক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। সেখানকার বিভিন্ন আলুবীজ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আকাশদীপবাবু বলেন, “জালন্ধরের চারটি বীজআলু ব্যবসায়ী সংগঠনকে অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন মানের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন। জাল বীজ রুখতে দু’রাজ্যের সংগঠনের তরফেও নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

কী রকম ব্যবস্থা?

১) পঞ্জাব থেকে যে বীজ আলু রাজ্যে আসছে তা চিহ্নিত করতে প্রতিটি বস্তার গায়ে স্টিকার সাঁটা হবে। ২) স্টিকার যাতে নকল না হয় তার জন্য সেগুলিতে হলোগ্রামও করা হবে। ৩) যেখান থেকে বীজ আসছে, তারা প্রতিদিন ই-মেল মারফত বিশদ তথ্য এ রাজ্যের সংগঠনকে পাঠাবে। জালন্ধর থেকে সড়ক পথে এ রাজ্যে পৌঁছতে সাধারণত তিন-চার দিন সময় লাগে। তার মধ্যে সংগঠনের তরফে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে পুরো তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে। ৪) কোথাও বীজ নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে সংগঠনগত ভাবে প্রতিকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে দুই রাজ্যে বীজের দামেও নানা অসঙ্গতি থাকে। সেই সমস্যাটাও সংগঠনগত ভাবে দূর করতে দুই রাজ্যের তরফে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। আরও যত্নশীল হতে অনুরোধ করা হয়েছে আলুবীজ উৎপাদনকারীদের। জালন্ধরের একটি প্রতিষ্ঠিত আলুবীজ উৎপাদক সংস্থার কর্ণধার সুখজিৎ সিংহ ভাট্টি বলেন, “বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু সার্বিক ভাবে জালন্ধরে আলুবীজ উৎপাদনে যত্ন নেওয়া হয়। কেন না ভাল আলুবীজ পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর উপরে আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে।”

প্রশ্ন উঠেছে, পরের যত্নের মুখ চেয়ে ক’দিন চলবে রাজ্যের আলুচাষ?

goutam bandyopadhyay jalondhir potato panjab
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy