জয়ন্তীর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাংলোর কাছেই লোকালয়।
দেখেই ভুরু কুঁচকে গিয়েছিল তাঁর। বুক কেঁপেছিল প্রশাসনিক কর্তাদেরও। বুঝতে বিলম্ব হয়নি, বাংলো না-পসন্দ!
মিনিট কয়েকের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ছোটে রাজাভাতখাওয়ার দিকে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনাধিকারিকের পুরনো অফিসটা ভেঙেই সেখানে বাংলোর চেহারা দেওয়া হয়েছে বছর কয়েক আগে। চার পাশে গ্রিলের ঘেরাটোপ। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে নীল-সাদা কাপড়ের ঘন আড়াল।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে গাড়ি থেকে নেমেই কপালে ভাঁজ ফেলে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘এখানে জঙ্গলটা কোথায়! কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।”
শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রশাসন ও বন কর্তারা তড়িঘড়ি ছুটেছিলেন পাশের বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোটা ‘রেডি’ করতে।
সে বাংলোর সামনে ইট-বালির স্তূপ। লম্বা বারান্দা বরাবর ঘর। একে একে ঘর-বারান্দা ঘুরে, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারে শ্যাওলা ধরা মেঝে, আধ-ফাটা বালতি দেখে রীতিমতো ফেটে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গে তলব করা হল নিগমের চেয়ারম্যান তথা কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। বন দফতর সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথবাবুর কাছে মুখ্যমন্ত্রী রাগত স্বরে জানতে চাইলেন, “বাংলোর এই হাল কেন? এখানে কি ট্যুরিস্ট থাকতে পারে?”
বেরিয়ে আসার আগে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, “কলকাতা ফিরেই ওঁদের ডেকে পাঠাব। প্রয়োজনে নিগমের কমিটিই ভেঙে দেব।”
কেন এই অব্যবস্থা? রবীন্দ্রনাথবাবু দাবি করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী রাজাভাতখাওয়ায় নিগমের বাংলোয় থাকতে পারেন, এমন কোনও বার্তা প্রশাসনের তরফে আমরা পাইনি। আগাম জানলে বাংলোটা সাফ-সুতরো করে রাখা হত। সুযোগ পেলে আমরা সবই মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।”
এ দিন অবশ্য আর বলার সুযোগ পাননি তিনি। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। মমতার কনভয় অতঃপর ছোটে মাদারিহাট।
সেখানে ট্যুরিস্ট বোঝাই লজেই শেষ পর্যন্ত রাত কাটান মমতা।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন জেনেও জয়ন্তীর বাংলোটি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়নি কেন?
বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন কাঁচুমাচু মুখে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হলং বাংলোয় থাকার বিষয় আমি নিজে তদারকি করেছি। অন্যত্র থাকার বিষয়টি আমাকে জানানোই হয়নি।”
তা হলে কে জানতেন?
বন কর্তারা জানান, মাদারিহাটের অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জয়ন্তী-বাংলোয় ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও বন উন্নয়ন নিগমের কর্তারা। কিন্তু এ ব্যাপারে বন দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি বলে অভিযোগ। এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “জয়ন্তীর বন-বাংলো বছর আড়াই আগে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে পূর্ত দফতরের বাংলোটিও। কিন্তু তা বলে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ওই জীর্ণ বাংলোটা কেন বাছা হল, তা মাথাতেই আসছে না।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বাংলো পছন্দ হবে না অনুমান করে কাছাকাছি আরও দু’টি বাংলোয় ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন বনকর্তারা। এক বনকর্তার দাবি, “আমরা ওই বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলতে চেয়েছিলাম জেলা প্রশাসনকে। ওঁরা আমলই দেননি।”
তার ফলেই এ দিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে একের পর এক বন-বাংলো ঘুরে হয়রান হতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy