Advertisement
E-Paper

এডস-কর্মী নিয়োগ নিয়ে শাসককেই রাশ দিল সরকার

পোশাকি নামে বিকেন্দ্রীকরণ। আদতে শাসক দলের নিয়ন্ত্রণ আরও জাঁকিয়ে বসল স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কর্মী নিয়োগে! রাজ্য সরকারের এডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শাখায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করার জন্য জেলাওয়াড়ি আলাদা আলাদা কমিটি তৈরি করা হয়েছে।

রোশনী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৯

পোশাকি নামে বিকেন্দ্রীকরণ। আদতে শাসক দলের নিয়ন্ত্রণ আরও জাঁকিয়ে বসল স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কর্মী নিয়োগে!

রাজ্য সরকারের এডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শাখায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করার জন্য জেলাওয়াড়ি আলাদা আলাদা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেগুলির মাথায় বসানো হয়েছে শাসক দলের বিধায়কদের! তাঁদের মধ্যে দু’জন মন্ত্রী এবং কয়েক জন পরিষদীয় সচিবও বটে। এমন ব্যবস্থায় দলতন্ত্রের হাত ধরে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির রাস্তা পরিষ্কার হল বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তা-ও আবার এমন দফতরে, যা রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই!

দক্ষিণ দিনাজপুরের নিয়োগ কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্রকে। উত্তর দিনাজপুরের নিয়োগ কমিটির চেয়ারপার্সন হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য। দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির নিয়োগ কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে মন্ত্রী গৌতম দেবকে। কোচবিহার, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে ওই দায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, মণিরুল ইসলাম, জ্যোতির্ময় কর এবং নির্মল মাজি। এঁদের মধ্যে মণিরুল সিপিএমের তিন জন কর্মীকে নিজের ‘পায়ের তল দিয়ে পিষে মেরে দেওয়া’র কথা নিজের মুখেই প্রচার করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন! পরিষদীয় সচিব নির্মলবাবু আবার বিরোধী সংগঠনের চিকিৎসকদের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর হুমকি দিয়ে সংবাদে উঠে এসেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এঁদের হাতে স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় কর্মী নিয়োগ কতটা যথাযথ হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও স্বাস্থ্য দফতর এমন আশঙ্কা নাকচ করে দিচ্ছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শাখার তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, লোকবলের অভাবে যাতে জনপরিষেবা ব্যাহত না হয়, তার জন্য জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন পদে চুক্তিতে কর্মী নিয়োগের পদ্ধতির বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে। জেলা স্তরে নিয়োগ কমিটি গড়ে ওই পদগুলিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে। নিয়োগের বিকেন্দ্রীকরণের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন

করা হয়েছিল। তাদের অনুমতি মিলেছে। এর পরেই ১৮টি জেলার নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান পদের জন্য শাসক দলের ১৮ জন বিধায়কের নাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ওই সরকারি নির্দেশিকায়।

এডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শাখায় যত শূন্য পদ রয়েছে বা ভবিষ্যতে তৈরি হবে, সবগুলিতেই নিয়োগের রাশ থাকবে তৃণমূলের ওই জনপ্রতিনিধিদের হাতে। বিজ্ঞপ্তিতে আপাতত ব্লাড ব্যাঙ্ক কাউন্সেলর, ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রভৃতি পদে কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে চর্চা হচ্ছে, নিয়োগে স্বজনপোষণ, দলতন্ত্র, দুর্নীতি সব জমানাতেই অল্পবিস্তর চলে। কিন্তু এ ভাবে খোলাখুলি সরকারি সিলমোহর দিয়ে দলতন্ত্র পাকা করার নজির এর আগে বিশেষ নেই! এডস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকা এই পদ্ধতিতে নয়ছয় হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে যাবতীয় আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “ওই প্রকল্পে নিয়োগের নিয়মাবলি সরকারি ভাবে বেঁধে দেওয়া আছে। ফলে, বিধায়কেরা নিয়োগ কমিটির চেয়ারপার্সন হলেও কোনও সমস্যা নেই। সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়োগের উপায় নেই।”

বিরোধী শিবিরের কর্মচারী সংগঠন অবশ্য এমন সিদ্ধান্তে বিপর্যয়ের আশঙ্কাই করছে। বিজেপি-র সরকারি কর্মচারী পরিষদের নেতা দেবাশিস শীলের কথায়, “স্বাস্থ্য দফতরের কোনও শীর্ষ আমলাকে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান করা উচিত ছিল। তা না করে কেবল শাসক দলের বিধায়কদের ওই পদে রাখা হয়েছে। এতে বিকেন্দ্রীকরণের নামে দলতন্ত্রের মুঠি আরও শক্ত হল! অযোগ্য লোক নিয়োগ এবং দুর্নীতির সুযোগও থাকল।”

worker recruitment roshni mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy