খাগড়াগড়ের সুতোয় ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে নিত্য-নতুন জায়গা। বর্ধমান থেকে মঙ্গলকোট, মুর্শিদাবাদের লালগোলা-বেলডাঙা, নদিয়ার থানারপাড়া--তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন নদিয়ার মির্জাপুরের।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জের ওই গ্রামে গিয়াসুদ্দিন মুন্সি নামে এক ব্যক্তির খোঁজে বুধবার রাতেই হানা দেয় এনআইএ। গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রী রাজিয়া এবং ইউসুফের যোগাযোগ ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। হানা দিয়েও অবশ্য অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি। জানা গিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যায় গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে সে। এনআইএ-র গোয়েন্দারা অবশ্য রাতেই বাড়ির তালা ভেঙে তল্লাশি চালান। বাড়িটি ‘সিল’ও করে দিয়েছেন তাঁরা। বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়াসুদ্দিনের একটি বই ও বোরখার দোকান রয়েছে। সেই দোকানেও তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় পুলিশকে নিয়ে ফের ওই বাড়ি ও দোকানে তল্লাশি চালায় এনআইএ। গিয়াসুদ্দিনের বাড়ি থেকে তিনটি সিম কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মিলেছে একটি জেরক্স মেশিনের যন্ত্রাংশও।
কে এই গিয়াসউদ্দিন? স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গিয়াসউদ্দিন স্থানীয় একটি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের অশিক্ষক কর্মী। পাশাপাশি তাঁর বই ও বোরখার ব্যবসাও রয়েছে। পড়শিরা জানান, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের নিয়ে এলাকাতেই থাকত সে। তার ভাই আবুল কালাম আজাদ মুন্সি ওই মাদ্রাসারই পিওন। তিনি বলেন, “দাদা মাদ্রাসার কাজকর্ম ও নিজের ব্যবসা নিয়েই থাকত। জঙ্গি যোগ ছিল বলে তো জানি না।” বুধবারও সে মাদ্রাসায় গিয়েছি বলে জানা গিয়েছে। রাতেই সে উধাও হয়ে গেল কেন, তাহলে কি গোয়েন্দাদের আসার খবর আগাম পেয়ে গিয়েছিল সে?
তবে গ্রামবাসীরা জানান, গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা দিন কয়েক আগেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। আর গিয়াসউদ্দিন গ্রাম ছাড়ে সন্ধ্যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, এলাকায় শিক্ষিত, সজ্জন বলেই পরিচিত ছিল সে। বেলডাঙা কলেজ থেকে বিকম পাশ করার পরে দেবগ্রামের একটি অননুমোদিত মাদ্রাসায় কাজ নিয়েছিল সে। সেখানে বাংলা ও ইংরেজি পড়াত সে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দাারা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত রাজিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই গিয়াসউদ্দিনের নাম জানা যায়। শাকিল, রাজিয়া ও ইউসুফের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত কথা বলত সে বলেও জানা গিয়েছে। কয়েক বার খাগড়াগড়েও সে গিয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে।
গোয়েন্দারা এ দিন, সিমুলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামের আবুল কালামের দাদা সালাম এবং ওই মাদ্রাসার পরিচালক ইউসুফের দুই ভাইকেও জেরা করেন। কী মিলল? সে ব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।