Advertisement
E-Paper

এমন ‘দাগি’ই নেতা, বিড়ম্বনা শাসক দলের

তাঁর কথায় অস্বস্তিতে পড়ছিল শাসক দল। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁকে। এ বার সেই পুলিশেরই তথ্যে অস্বস্তি বেড়ে গেল শাসকের! পুলিশের খাতায় তৃণমূলের বিদ্রোহী নেতা আসিফ খান রীতিমতো ‘দাগি’ অপরাধী। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে অভিযোগের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। পুলিশেরই তথ্য, ১৯৯৮ থেকে ২০১২-র মধ্যে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, অস্ত্র আইনে অভিযোগ, ডাকাতি এবং এমনকী, এক জন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগও রয়েছে তাঁর নামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮

তাঁর কথায় অস্বস্তিতে পড়ছিল শাসক দল। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁকে। এ বার সেই পুলিশেরই তথ্যে অস্বস্তি বেড়ে গেল শাসকের!

পুলিশের খাতায় তৃণমূলের বিদ্রোহী নেতা আসিফ খান রীতিমতো ‘দাগি’ অপরাধী। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে অভিযোগের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। পুলিশেরই তথ্য, ১৯৯৮ থেকে ২০১২-র মধ্যে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, অস্ত্র আইনে অভিযোগ, ডাকাতি এবং এমনকী, এক জন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগও রয়েছে তাঁর নামে।

কিন্তু পুলিশের এমন বক্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শাসক দলকেই! কারণ সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, এমন দীর্ঘ অপরাধের রেকর্ড যাঁর, তাঁকে কেন সাদরে স্বাগত জানিয়েছিল তৃণমূল? কেনই বা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব? সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছিলেন আসিফ। তখন থেকেই তাঁর অভিযোগ ছিল, পুলিশ দিয়ে তাঁকে হয়রান করার চেষ্টা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘হয়রান’ করার জন্যই গ্রেফতার করা হল কি না, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে। তার সঙ্গেই আসিফের ইতিহাস নিয়ে পুলিশি বক্তব্য বাড়তি অস্বস্তি বয়ে এনেছে তৃণমূলের জন্য।

সারদা-কাণ্ডে প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা এবং তৃণমূল নেতা রজত মজুমদার গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁকে চিনতেই পারছিলেন না শাসক দলের নেতারা! আর আসিফের বেলায় তাঁদের দাবি, পুরনো রেকর্ড তাঁদের আগে জানা ছিল না! তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল নেতারা কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি। অস্বস্তি এড়াতেই সম্ভবত!

যাঁর হাত ধরে তৃণমূলে আসিফের অন্তর্ভুক্তি, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় আসিফ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কেন এমন ব্যক্তিকে দলে নেওয়া হল, তা নিয়ে শুক্রবার প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি মুকুলবাবু। অথচ এই আসিফকে উত্তরপ্রদেশে দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার সময় সক্রিয় ছিলেন মুকুলবাবুরাই।

আসিফের গ্রেফতারির ২৪ ঘণ্টা পরেও তৃণমূলের অন্য নেতারাও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তবে মুকুলবাবুর ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, “এটা হতেই পারে। যখন বোঝা যায় লোকটি খারাপ, তখন তার পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।” কিন্তু দল তো আসিফের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়নি! বরং অসিফই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে দলের সংস্রব ত্যাগ করেছিলেন। এই নিয়েও তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কোনও মন্তব্য নেই। ঘরোয়া ভাবে দলের এক প্রথম সারির নেতা বলেছেন, “যিনি দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে কেন আর মন্তব্য করব?”

শাসক দলকে অবশ্য ছাড় দিতে রাজি নয় বিরোধীরা। শিলিগুড়িতে এ দিন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক এবং এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেছেন, “আসিফ সিবিআইকে কিছু সত্যি কথা বলেছিলেন। তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী জানেন, সত্যি বের হতে শুরু করলে শুধু মুকুল রায়ই নন, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ঘরের দরজাতেও টোকা পড়বে!” সিদ্ধার্থনাথের হুঁশিয়ারি, “রাজ্যের ১৭ লক্ষ মানুষের টাকা নিয়ে তৃণমূল নেতারা আমোদপ্রমোদ করেছেন, টাকা বিলিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি এবং কেন্দ্রের সরকার এক একটি পয়সার হিসাব নেবে। যাদের জেলে পাঠানোর দরকার, তাদের জেলে পাঠানো হবে।” দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও অভিযোগ করেছেন, আসিফ দলের বিরুদ্ধে সারদা নিয়ে মুখ খুলেছেন বলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যেমন করা হয়েছিল কুণাল ঘোষকেও।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও একই সন্দেহ। অধীরের কথায়, “আসিফ খান যে দিন তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, সে দিন থেকেই সকলের জানা ছিল, তাঁকে গ্রেফতার হতে হবে! আসিফকে আগামী দিনে সিবিআই ডাকলে তিনি আরও মুখ খুলতে পারেন। তাতে তৃণমূলের বিপদ আরও বাড়বে। সে জন্যই মুখ বন্ধ করতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তৃণমূলের ওই সর্বভারতীয় নেতার নির্দেশেই আসিফ জমি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও তদন্ত দাবি করেছেন অধীর। কুণাল-অধীরের গ্রেফতারির সাদৃশ্য উল্লেখ করে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও মন্তব্য করেছেন, “তৃণমূল এখন নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে! যদি কেউ কিছু বলে দেয়!” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের টুইট, ‘সিবিআইয়ের কাছে মুখ খুললে দাম দিতে হবে! তৃণমূলের উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন পর্যবেক্ষকের ঘটনায় ফের তা প্রমাণিত হল’!

asif khan bidhannagar police commissionerate tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy