Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কোরপান হত্যায় ইন্টার্নরাও জড়িত, সন্দেহ পুলিশের

আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহকে খুনের ঘটনায় ধৃত প্রথম বর্ষের ছাত্র জসিমুদ্দিন। শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে দ্বিতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই জবানবন্দি দেন তিনি। পুলিশের অনুমান, জসিমুদ্দিনের এই জবানবন্দি তদন্তের কাজে অনেক সাহায্য করবে।

কোরপান শাহ

কোরপান শাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহকে খুনের ঘটনায় ধৃত প্রথম বর্ষের ছাত্র জসিমুদ্দিন। শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে দ্বিতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই জবানবন্দি দেন তিনি। পুলিশের অনুমান, জসিমুদ্দিনের এই জবানবন্দি তদন্তের কাজে অনেক সাহায্য করবে।

গত ১৬ নভেম্বর ভোরে কোরপান শাহকে এনআরএসের ছাত্রাবাসে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই জসিমুদ্দিন-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন হস্টেলের ক্যান্টিন-কর্মী। পুলিশের সন্দেহ, সিনিয়র কিছু ছাত্রের সঙ্গে এনআরএসের কয়েক জন ইন্টার্ন-ও ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাঁদের ইন্ধনেই বাঁশ ও কাঠের টুকরো দিয়ে পেটানো হয় কোরপানকে। ছাত্রাবাসে মেরামতির কাজ চলায় বাঁশ ও কাঠ পেতে সমস্যা হয়নি আবাসিকদের। এ ছাড়াও আবাসিকদের চড়, কিল, ঘুষি, লাথি এলোপাথাড়ি ভাবে পড়ে কোরপানের উপরে। মারধরে কোরপান অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁকে সেখানে ফেলেই আবাসিকেরা নিজেদের ঘরে চলে যান বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। লালবাজার সূত্রের খবর, ইন্টার্ন এবং সিনিয়র যে ছাত্রেরা গোটা বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। তদন্তে তিন-চার জন ইন্টার্নের নামও জেনেছে পুলিশ। তাঁরা সকলেই ওই ছাত্রাবাসের আবাসিক।

ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, ১৬ নভেম্বর ভোরে হস্টেলের চারতলার ৯২ নম্বর ঘরের সামনে কোরপানকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন ওই তলের আবাসিকেরা। ওই সময়ে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে সেখানে দেখে তাঁরা চিৎকার জুড়ে দেন। এর পরেই হস্টেলের ১০-১২ জন আবাসিক এসে মোবাইল চোর সন্দেহে মারধর শুরু করেন কোরপানকে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মারধরের ঘটনায় ইন্টার্নদের পাশাপাশি তৃতীয় বর্ষের কয়েক জন আবাসিক-ছাত্রও যুক্ত ছিলেন। ধৃত জসিমুদ্দিন এবং তাঁর এক সহপাঠীও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

লালবাজারের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি ওই খুনের সঙ্গে ইন্টার্ন এবং সিনিয়র, জুনিয়র ছাত্র মিলিয়ে প্রায় ১০-১২ জন জড়িত। কিন্তু যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় তাঁদের এখনও ধরা হয়নি।” গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃত ছাত্র জসিমউদ্দিনের গোপন জবানবন্দি হাতে আসার পরেই বাকি অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে সক্রিয় হবেন তাঁরা।

লালবাজার সূত্রের খবর, তদন্তে যে সব ইন্টার্ন এবং সিনিয়র ছাত্রের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের একাংশ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে হাসপাতালে পরিচিত। ফলে তাঁদের গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের একাংশই। তাঁদের অভিযোগ, যে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এক ছাত্র-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণেই বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যেত। তাঁদের আরও অভিযোগ, লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা প্রশাসনের উচুঁতলার নির্দেশেই বাকিদের গ্রেফতার করছেন না।

এর আগে ঘটনার পরেই অভিযোগ উঠেছিল, এনআরএস-কাণ্ডে নির্দোষ ছাত্রদের হেনস্থা না করার আবেদন জানিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই সঙ্গে তদন্তকারীরা যাতে ওই ছাত্রাবাসের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেন, সে জন্য তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেল পুলিশকে চাপ দেয় বলেও অভিযোগ। তার পরে আবাসিকদের গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

korpan nrs junior doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE