Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গারদে বসে মন্ত্রিত্ব চালাচ্ছেন কী ভাবে, হলফনামা তলব

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় তিনি তো এখন লৌহকপাটের আড়ালে। জেলবন্দি অবস্থায় কী ভাবে রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মদন মিত্র? হলফনামা দাখিল করে এর জবাব দেওয়ার জন্য মদনবাবুকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ব্যাপারে হলফনামা দিতে হবে রাজ্য সরকারকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় তিনি তো এখন লৌহকপাটের আড়ালে। জেলবন্দি অবস্থায় কী ভাবে রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মদন মিত্র? হলফনামা দাখিল করে এর জবাব দেওয়ার জন্য মদনবাবুকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ব্যাপারে হলফনামা দিতে হবে রাজ্য সরকারকেও।

জেলে থেকে মদনবাবু কী ভাবে মন্ত্রিত্ব চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলে গত ১৬ জানুয়ারি জনস্বার্থে একটি মামলা করা হয় হাইকোর্টে। যৌথ ভাবে মামলাটি দায়ের করেছেন আইনজীবী শুভ্রজিৎ ভাদুড়ী এবং অনঙ্গজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে এক সমাজকর্মী।

দুই আবেদনকারীর আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন জানান, মদনবাবু এবং রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ, জোড়া হলফনামা পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দাখিল করতে হবে মামলার আবেদনকারীদের। এ দিন আদালতে মদনবাবুর পক্ষে দাঁড়ান আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। রাজ্য সরকারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ছ’সপ্তাহ পরে ফের এই মামলার শুনানি হবে।

সারদা রিয়েলটি মামলায় অভিযুক্ত মদনবাবু সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন গত ১২ ডিসেম্বর। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, সারদা গোষ্ঠী থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ এনেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক ইতিমধ্যেই একাধিক বার মদনবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

নবান্ন সূত্রের খবর, গ্রেফতার হতে পারেন আশঙ্কা করে মদনবাবু সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দেওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। গ্রেফতার হওয়ার পরে কিছু দিন সিবিআইয়ের হেফাজতে ছিলেন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী। পরে অসুস্থতার কারণে তিনি কিছু দিন ভর্তি ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে এ দিন পর্যন্ত তিনি জেলেই রয়েছেন। কিন্তু কাগজেকলমে মদনবাবু এখনও রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী।

প্রায় ১০ সপ্তাহের এই বন্দিদশায় মদনবাবু মন্ত্রিত্ব চালাচ্ছেন কী ভাবে, মামলার মূল প্রশ্ন সেটাই।

আবেদনকারীদের আইনজীবী নীলাঞ্জনবাবু জানান, সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভার কোনও সদস্য রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে রাজ্যপালের কাছে শপথ নেওয়ার সময় ঘোষণা করেন, তিনি বিধিবদ্ধ ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু মদনবাবু এখন অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে বন্দি। তিনি কী ভাবে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন, প্রশ্ন তোলা হয়েছে আবেদনে।

আবেদনকারীদের বক্তব্য, এই ব্যাপারে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও। সেটা হল, রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁকে তাঁর মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া।

মদনবাবুকে এখনও রাজ্যের দু’টি দফতরের মন্ত্রী করে রাখায় সংবিধানের মর্যাদা হানি হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া মামলাটিতে।

শুধু মন্ত্রী নয়, বিধানসভার সদস্য হিসেবেও রাজ্যপালের কাছে শপথ নিয়েছেন মদনবাবু। শপথবাক্য পাঠের সময় তাঁকে ঘোষণা করতে হয়েছে, তিনি এক জন বিধায়ক হিসেবে তাঁর নির্বাচনী এলাকার নাগরিকদের প্রতি তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। মামলায় প্রশ্ন উঠেছে, জেলে বন্দি মদনবাবু কী ভাবেই বা বিধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন?

হলফনামায় মন্ত্রীমশাই এর কী জবাব দেন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra affidavit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE