Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রের এই লুণ্ঠন মমতার জন্য আদৌ জরুরি নয়

রাজনীতির একেবারে গোড়ার কথা হল নীতি ও নৈতিকতা। রাজনৈতিক পরিসরে যে সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আমরা অভ্যস্ত, সেখানে মানুষের রায়ই শিরোধার্য। নীতি এবং নৈতিকতা বলে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের যে রায় প্রকাশ পায়, সেই রায়ই চূড়ান্ত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৮
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

রাজনীতির একেবারে গোড়ার কথা হল নীতি ও নৈতিকতা। রাজনৈতিক পরিসরে যে সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় আমরা অভ্যস্ত, সেখানে মানুষের রায়ই শিরোধার্য। নীতি এবং নৈতিকতা বলে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের যে রায় প্রকাশ পায়, সেই রায়ই চূড়ান্ত। এই রায়কে বলপূর্বক বদলানোর বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অনৈতিক। জনতার রায়কে খেয়ালখুশি মতো দুমড়ে-মুচড়ে নেওয়ার মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি একটা অশ্রদ্ধা রয়েছে। রয়েছে গণতন্ত্রের লুণ্ঠন। এ দেশে বা আমাদের রাজ্যে সেই লুণ্ঠন নিরন্তর চলছে। মালদহ এবং জলপাইগুড়িতে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে এনে জেলা পরিষদের দখল নেওয়া হল তার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত।

বাংলায় গণতন্ত্রের এই লুণ্ঠনের শিকড়টা কিন্তু আগের আমলেই নিহিত। একের পর এক নির্বাচনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না দেওয়া, ব্যালটে বা ভোটযন্ত্রে ছাপটা কোন প্রতীকে পড়বে, তা নিয়ন্ত্রণ করা, লক্ষ লক্ষ ভোট লুঠ করে জয়ের ব্যবধানে গোটা দেশে রেকর্ড গড়া— নির্বাচনে এমন নানা অনৈতিকতার অভ্যাস তখন থেকেই শুরু। ক্ষোভ জমছিল জনমনে। সেই সব নানা ক্ষোভই ঝড়ের আকার নিয়েছিল। আর সেই ঝড়ে সওয়ার হয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরও কি গণতন্ত্রের লুণ্ঠনটা জারি থাকা উচিত ছিল? সংসদীয় নীতি-নৈতিকতাগুলোকে আরও বেশি করে জলাঞ্জলি দেওয়া কি খুব জরুরি ছিল?

এক বার নয়, দু’বার ক্ষমতায় এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বার একলা লড়লেন। প্রথম বারের চেয়েও বেশি শক্তি নিয়ে বিধানসভায় পা রাখলেন। তার পরও কেন দিকে দিকে গণতন্ত্রের এই অপঘাত মৃত্যু? একের পর এক পঞ্চায়েতে বোর্ড উল্টে দেওয়া হচ্ছে, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ভাঙিয়ে আনা চলছে, জেলা পরিষদ দখলে আনা হচ্ছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলা পরিষদ ভোটের আগেই দখল করা হয়েছিল। ভোটের পর ঝালদা পুরসভার দখল নেওয়া হল, জঙ্গিপুর নেওয়া হল, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ নেওয়া হল, কালিয়াগঞ্জ নেওয়া হল, বেলডাঙাও নেওয়া হল। বিরোধী দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নেওয়া হল। মালদহ এবং জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ দখল করা হল। শেষ বিরোধী গড় মুর্শিদাবাদ দখলে নেওয়ার জন্য ধুন্ধুমার লড়াইও শুরু হয়ে গিয়েছে।

মুকুল রায়রা বলছেন, এর মধ্যে অনৈতিকতা নেই। সংবিধান সম্মত ভাবেই নাকি দলবদল হচ্ছে। তাঁদের দাবি, সংবিধানেই দলত্যাগের সংস্থান রয়েছে। মুকুল রায়রা যা-ই বলুন, প্রশ্ন উঠছেই। প্রশ্নটা হল, এই বিপুল জনমত যখন সঙ্গে, তখন বিরোধীকে দলত্যাগ করিয়ে পক্ষে থাকতে বাধ্য করার প্রয়োজনটা কোথায়? যেখানে যেখানে জনতার রায় বিপক্ষে গিয়েছে, সেখানেই ঘুর পথে ক্ষমতা কব্জা করার অপচেষ্টা কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে যে পর্যায়ে, তাতে বাঁকা আঙুলে ঘি তুলে আনার প্রয়োজনই হয় না। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসুরক্ষা এবং আরও নানা জনপ্রিয় সরকারি প্রকল্প কয়েক মাস আগের নির্বাচনে বিপুল সাফল্য এনে দিয়েছে। এ সবের সুফল আরও নিবিড় ভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া গেলেই মুশকিল আসান হয়। যে মানুষ আজ সঙ্গে নেই, সুশাসন সুনিশ্চিত হলে, তাঁকেও অচিরেই জয় করে নেওয়া যায়। তা না করে জনতার রায়কে যে ভাবে অস্বীকার করা চেষ্টা, তাতে ঈশান কোণে আবার মেঘ জমার আশঙ্কা তৈরি হয়।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy